নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এক সময় ছিলো ছাত্র শিবিরের আস্থানা। ক্যাম্পাস এলাকা মতিহার থানাধীন প্রতিটি জায়গায় তাদের ছিলো ঘাটি। তবে দীর্ঘসময় সরকারি দলের চাপে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। পরে ছাত্র শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে প্রশাসনিক চাপে এলাকা ছাড়া হয় ছাত্র শিবিরের কর্মী সমর্থকরা। সম্প্রতি আবারও সংঘবদ্ধ হতে গোপনে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন তাঁরা। প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কাজ বন্ধ রাখলও গোপনে তাঁরা শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। মতিহার থানা এলাকায় তাদের সেই পূর্বের দূর্গ গড়তে মরিয়া হয়েছেন।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন গনমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে কয়েকজন দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডারের নাম। যার মধ্যে মতিহার এলাকার সাদ্দাম, সাব্বির ও আলম অন্যতম। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছদ্মবেশ ধারন করে এরা এখন রীতিমতো আওয়ামী লীগের হাইব্রিড কর্মী। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, তারা এখনোও ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন গোপনে। স্থানীয়দের নেতৃত্বে ও ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসের শিবির কর্মীরা এখনো সক্রিয়ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে সাদ্দাম স্থানীয়ভাবে তাদের সহায়তা প্রদান করছেন।
রাবি ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হত্যায় যেভাবে জড়িত ছিলো সাদ্দাম
২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ইমনের নেতৃত্বে রাবির ৪টি হলে নৃশংস হামলা চালায় শিবির ক্যাডাররা। ওই সময় নিহত ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার এজাহার ভুক্ত আসামী করা হয় ছাত্র শিবিরের শীর্ষ নেতা কর্মীদের, কিন্তু ওই হামলায় অংশ নেওয়া অনেক সক্রিয় নেতা কর্মীরা অজ্ঞাত থেকে যায়। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল মতিহার ডাঁসমারি এলাকার মৃত ওবাইদুর রহমানের ছেলে মনিরুল ইসলাম আলম ও শাহজাহান আলীর ছেলে সাদ্দাম আলী। এরা দুইজন সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই।
তবে বর্তমানে মনিরুল ইসলাম আলম এলাকা থেকে পলাতক থাকলেও চতুর সাদ্দাম ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়। এই সাদ্দামের আপন ছোট ভাই সাব্বির ছাত্র শিবিরের চিহ্নিত কর্মী ও ক্যাডার। অন্যদিকে এলাকা থেকে দীর্ঘদিন যাবত পলাতক রয়েছে সাব্বির।
ইসলামী ছাত্র শিবিরের কমিটিতে শিবির ক্যাডার সাদ্দাম
গত ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সাদ্দামের চাচাতো ভাই মনিরুল ইসলাম আলম ছাত্র শিবিরের রাজশাহী মহানগরীর ২৯ নং ওয়ার্ড সভাপতির দায়িত্ব পালন করে ২ বছর। এবং ওই একই কমিটির অন্যতম সদস্য ছিল সাদ্দাম ও তার ছোট ভাই সাব্বির। আর এই ২০১৩ সালের গোড়ার দিকে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ হওয়ার পর থেকেই সহিংস রূপ দেখাতে শুরু করে শিবিরের এই ক্যাডাররা।
গত ২০১৪ সালে জুন মাসে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার ডাসমারি এলাকায় ওয়ার্কার্স পার্টির মতিহার থানা শাখা ও রাজশাহী জেলা শাখা জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য মোহাম্মদ আলীকে হাত পায়ের রগ কেটে হত্যা করে ড্রেনে ফেলে যায় শিবির কর্মীরা। মোহাম্মদ আলী মার্ডারের এজাহার ভুক্ত আসামী সাদ্দামের চাচাতো ভাই আলম এবং এই মামলায় সাদ্দাম ও তার আপন ছোট ভাই সাব্বির সন্ধিগ্ধ আসামি থাকায় দীর্ঘদিন এলাকা থেকে পলাতক ছিল। তবে উক্ত ঘটনার মাস্টার মাইন্ড সাদ্দাম থাকলেও অন্যান্য আসামীরা সাদ্দামের নাম এড়িয়ে যায়। তবে পরবর্তীতে জেলখানার সিসি ফুটেজে দেখা যায় সাদ্দাম আসামিদের সাথে গোপনে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন জেলখানায় যা পরবর্তীতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন তৎকালীন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ইসমাইল হোসেন।২০২৩ সালে শিবির ক্যাডার সাদ্দামের বাসা থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার
সাদ্দামের বাড়ি থেকে গত ২৫/০১/২৩ ইং তারিখে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করে মতিহার থানা পুলিশ পরবর্তীতে টাকা পয়সা দিয়ে আসামি থেকে সাক্ষী হয় এই সাদ্দাম।
উল্লেখ্য যে, ২০১৪ সাল থেকে সাদ্দামের ভোটার আইডি কার্ড ধরমপুর এলাকা অর্থাৎ রাসিকের ২৮ নং ওয়ার্ডে বর্তমানে অবস্থান করছে ডাঁশমারি উত্তরপাড়া রাসিকের ২৯ নং ওয়ার্ডে। যা রীতিমতো বিতর্কিত ও সন্দেহজনক।
রাসিক নির্বাচনে জামাত শিবির প্রার্থীকে সরাসরি সমর্থন সাদ্দামের রাসিকের ২৯ নং ওয়ার্ডে জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন অধ্যাপক গিয়াস উদ্দীন। এই প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে ভোটের প্রচারনা করেছেন সাদ্দাম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন নাশকতার মামলা থেকে নিজেদের বাঁচাতে এ সরকারের ৩ মেয়াদে অন্তত রাজশাহীতে ২ হাজার নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। যারা হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নামে পরিচিত। বড় নেতা থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতাদের হাত ধরেই তারা আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আবার নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ হয় কারাগারে, না হয় পলাতক অবস্থায় রয়েছেন।
জঙ্গিবাদ বা উগ্রপন্থায় জড়াচ্ছে একটি অংশ। একইভাবে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনে বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতেও জায়গা করে নিয়েছে এদেরই ক্ষুদ্র একটি অংশ। ঝুঁকি এড়াতে একটি অংশ চলে গেছে দেশের বাইরে। আরেকটি অংশ আওয়ামী লীগ-বিএনপির সঙ্গে গোপনে আঁতাত করে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। আর রাজশাহী মতিহার এলাকায় তাই আতংকের অপর নাম ‘সাদ্দাম’।
রাজশাহী মহানগরীর প্রবীণ আওয়ামীলীগের নেতা আব্দুল মান্নান বলেন শিবির ক্যাডার সাদ্দাম এখন হাইব্রিড আওয়ামীলীগার। কিভাবে আওয়ামী লীগের লেবাস পড়ে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তা দেখে আমরা বিস্মিত।
তবে সুশীল সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর ব্যাক্তিরা বলছেন – ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবী লীগ, শ্রমিকলীগ ও যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে শুধুমাত্র অনুপ্রবেশকরী এবং সুবিধাবাদীদের দাপটে। বিধায় প্রকৃত ও ত্যাগী নেতা-কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী আওয়ামী লীগের জেলা, মহানগর ও উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটে প্রবেশ করেছে হাইব্রিডরা। মূলত ওইসব অনুপ্রবেশকারী নব্য আ.লীগারদের কারণে রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে দলের ভেতরে দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ, হামলা-মামলার ঘটনা ঘটে। যা সরকারের প্রায় এক দশকের অর্জন ম্লান করছে। তাই এখুনিই এসকল হাইব্রিড আওয়ামী লীগারদের প্রতিহত না করতে পারলে এক সাদ্দাম নয় বরং শত শত সাদ্দামের জন্ম হবে।
কথা বললে মতিহার থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, আমি এ থানায় যোগদানের পর থেকে এলাকায় প্রকাশ্যে ছাত্র শিবিরের কোনো প্রোগ্রাম হয়নি। গোপনে প্রোগ্রাম বা সুসংগঠিত হওয়ার সুযোগ নাই। থানা পুলিশ এ বিষয়ে তৎপর আছে। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পেলে আইনগন ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *