|| মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার ||
চলচ্চিত্র বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বরাবরই বিবেচিত হয়ে আসছে। আর শিল্পীরা সকল কিছু ঊর্ধ্বে। রাগ, জেদ, প্রতিহিংসা সব কিছুকে ছাপিয়ে তাঁরা মানুষের মনোরঞ্জন করে থাকেন। তবে বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে এক ভিন্ন চিত্র। সমাজের অন্যান্য স্তরের মতো আজ চলচ্চিত্রে ও চলচ্চিত্রের শিল্পীদের মাঝে দেখা যাচ্ছে প্রতিহিংসা। যা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া নির্বাচনে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে। আলোচনা-সমালোচনা, এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দোষারোপ থেমে থাকেনি কিছুই। অবশেষে তা গিয়ে পৌঁছলো আদালতে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন নায়ক জায়েদ খান। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী নায়িকা নিপুণ আক্তার নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে আপিল করেন নির্বাচন আপিল বিভাগের কাছে। পরবর্তীতে নতুন করে ভোট গণনা করে জায়েদ খানকেই জয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে সেই ফলাফলও মেনে নিতে নারাজ ছিলেন নিপুণ। যদিও সেদিন তিনি ফলাফল মেনে নিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজে সাক্ষর করে ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ফের তিনি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশন, এফডিসির এমডি ও জায়েদ খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করেন।

সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপে আপিল বিভাগ নিপুণের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করেন।

এদিকে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন জায়েদ খান। তখন চিত্রনায়ক জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আপিল বোর্ডের দেয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে এক সপ্তাহের রুল জারি করেছেন আদালত।

এরপরই নায়িকা নিপুণ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে জায়েদ খানের পক্ষে দেয়া হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছিলেন চেম্বার আদালত। এর ফলে নিপুণের সম্পাদক পদে থাকতে আর বাধা নেই। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি)। পাশাপাশি আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জায়েদ-নিপুণের কেউ পদে থাকতে পারবে না। ফলে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারটি শূন্যই থাকবে।

চলচ্চিত্রের এই নির্বাচনকে ঘিরে আদালত পাড়াও বেশ সরগরম। চলচ্চিত্রের সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন চলচ্চিত্রে নিজেদের বিষয়গুলো কেন আদালত পর্যন্ত যাবে? তাহলে শিল্প ও শিল্পীর মান কোথায় থাকলো? যাদেরকে মানুষ অনুকরণ-অনুসরণ করেন তাদের মধ্যকার এই কাঁদা ছোঁড়াছুড়ির কারণে সমগ্র দেশের কাছে আজ শিল্প ও শিল্পীর মান নিচু হলো।

অনেকই বলছেন চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা সমাধানের জন্য সিনিয়র শিল্পীদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু সেটি লক্ষ করা যাচ্ছে না। বরং তাঁরা নিজেরাই জড়িয়ে পড়েছেন এই রেষারেষিতে।

চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে চলচ্চিত্রের নানা বিষয়ই পৌঁছায় আদালত পর্যন্ত। আর এবারের নির্বাচনকে ঘিরে যে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে তার কারণে দেশ ও দেশের বাইরেও বাংলা চলচ্চিত্র ও শিল্পীদের সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে চলচ্চিত্র সবার কাছে একটি নোংরা জায়গা হিসেবেই পরিচিত হবে। আর এর দায় নিতে হবে সবাইকেই।

লেখকঃ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: বাংলা পোস্ট | ডিইউজে সদস্য | এবং __ বাংলাদেশ জ্ঞান সৃজনশীল প্রকাশনা প্রকাশক ||

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *