mail.google

ইশরাত জাহান চৌধুরী, মৌলভীবাজার ::
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলাধীন শরিফপুর ইউনিয়নের লালারচক ও বেরী সঞ্জরপুর গ্রামে ১টি গরু নিয়ে চলছে কুটিল গ্রাম্য রাজনীতি। লালারচক গ্রামের এর্শ্বাদ মিয়ার ১টি লাল রংয়ের গরু নিখোঁজ ও উদ্ধারকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী বেরী সঞ্জরপুর গ্রামের তৈমুছ আলী ও ইয়াছিন মিয়াকে উক্ত গরুচোর প্রমান করতেই শুরু হয়েছে এ কুটিল গ্রাম্য রাজনীতি। আর, এ কারণে ক্রমশ: উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে বিবদমান দু’টি পক্ষের মধ্যে। এতেকরে, যেকোন সময় ওই এলাকায় পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশংকা দেখা দিয়েছে।
তৈমুছ আলী ও ইয়াছিন মিয়ার অভিযোগ- সঞ্জরপুর গ্রামের মৃত: আমজাদির পুত্র ছাদু মিয়া ও নাতি মশিক মিয়া, বেরী সঞ্জরপুর গ্রামের মৃত: ধলা মিয়া ওরফে ধলাবাট্টি’র পুত্র মুমিন মিয়া ও তছলিম আলী, মৃত: ফরহাদ খাঁ’র পুত্র জুনাব খাঁ এবং মৃত: মহারাজ’র পুত্র মনসুর আহমদ গত ১২ আগষ্ট দুপুরে শরিফপুর ইউনিয়নের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ১টি গরু তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা পার্শ্ববর্তী বেরী সঞ্জরপুর গ্রামের তৈমুছ আলী ও একই গ্রামের মৃত: এনাম উল্লাহর পুত্র ইয়াছিন মিয়া উক্ত গরুটি চুরি করেছিল দাবী করে স্বশস্ত্র হামলা চালায়। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অবহিত আছেন উল্লেখ করে তৈমুছ আলী ও ইয়াছিন মিয়া আরও জানান- উপরোল্লিখিত মৃত: মহারাজ’র পুত্র আনছার মিয়া নারী পাচারসহ নানা অপরাধমুলক কর্মকান্ডে জড়িত। ইতিপূর্বে সে তৈমুছ আলীর ২য় স্ত্রীকে পাচারের জন্য ভারতের মুম্বাই শহরে নিয়ে যাবার সময় চাতলাপুর ক্যাম্পের বিডিআর কর্তৃক আটক হয়ে প্রায় বছরখানেক জেলহাজতে ছিল। সেই ঘটনার সময় থেকেই তাদের পরিবার ও তৈমুছ আলীর পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলমান। ওই বিরোধের জের হিসাবে মৃত: মহারাজ’র পরিবার অদ্যাবধি নানাভাবে তৈমুছ আলীর পরিবারকে হয়রানী করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি এর্শ্বাদ মিয়ার ১টি গরু নিখোঁজ ও উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিও তারাই সৃষ্টি করেছে।
গরুর মালিক এর্শ্বাদ মিয়া ও তার পক্ষীয় লোকজনের অভিযোগ- তৈমুছ আলী ও ইয়াছিন মিয়া গংরা এলাকার চিহ্নিত গরুচোর। এ পর্যন্ত একাধিকবার তারা হাতেনাতে ধরা পড়েছে। তৈমুছ আলীর বিরুদ্ধে গরুচুরির অনেক মামলা রয়েছে আদালতে। এর্শ্বাদ মিয়ার উক্ত লাল রংয়ের গরুটি নিখোঁজ হবার পর বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়- শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় চাতলাপুর চা বাগানের পাশে নিয়ে তৈমুছ ও ইয়াছিন ১টি গরুর রং পরিবর্তন করেছে। এ তথ্য জানার পর তৈমুছ ও ইয়াছিনের উপর নজরদারি শুরু করা হয়। একপর্যায়ে তারা (তৈমুছ ও ইয়াছিন) গরুটি নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সংলগ্ন পাহাড়ের দিকে রওয়ানা হলে, নজরদারিরত লোকজন কর্তৃক তাদেরকে আটক করার চেষ্টা চলানো হয়। এসময় তারা গরুটি ফেলে পালিয়ে পাহাড়ে আতœগোপন করলে গরুটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
তবে, এ প্রতিবেদকসহ ৩ জন সাংবাদিক সরেজমিন ঘটনাস্থলে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়েও গরুটি চুরি হবার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেননি। তাছাড়া, তৈমুছ ও ইয়াছিন গরুটি চুরি করেছিল বলে দাবী করা হলেও, তাদেরকে হাতেনাতে আটক কিংবা তাদের হেফাজত থেকে গরুটি উদ্ধার হয়নি বিধায় সে দাবীও গ্রহণযোগ্য নয়। অনুসন্ধানকালে বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন প্রকার মতামতও ছিল বিভ্রান্তিকর। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একটি অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে- সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে জয়-পরাজয়কে কেন্দ্র করে ইউনিয়নে দুটি ধারার উৎপত্তি হয়েছে। এ দুটি ধারার লোকজন বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এর্শ্বাদ মিয়ার গরুটিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট এ ঘটনাটি মূলত: ওই দুটি পক্ষের মধ্যকার নির্বাচনী বিভক্তিরই জের। অপরদিকে- মাঝখান থেকে সুবিধাবাদী একটি পক্ষ উক্ত ঘটনাটিকে নিয়ে মেতে উঠেছে কুটিল গ্রাম্য রাজনীতিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *