আনোয়ার হোসেন আরিফ, স্টাফ রিপোর্টার :
গাইবান্ধা-৪, গোবিন্দগঞ্জ আসনে ৩ টি হত্যা মামলার প্রধান আসামী আবুল কালাম আজাদ কে নৌকার মনোনয়ন দেওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
৩২,গাইবান্ধা-৪, গোবিন্দগঞ্জ আসনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তিন টি হত্যা মামলা ও দূর্নীতি মামলার প্রধান আসামী জ্বীনের বাদশার সরদার মোঃ আবুল কালাম আজাদ।
এ ঘটনা কে কেন্দ্র করে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। জনসাধারণের চাওয়া মনোনয়ন পাওয়া হত্যা মামলার আসামি আবুল কালাম আজাদ কে পরিবর্তন করে ভালো ব্যক্তি মনোনয়ন পাক।
মামলা সুত্রে ও সরেজমিনে জানাগেছে মোঃ আবুল কালাম আজাদ সাবেক জাসদ ও বাসদ ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু। ১৯৮৬ সালে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ময়নুল আক্তার রুবেল হত্যার মধ্য দিয়ে তার পরিচিতি ও সাজা হওয়ার পর মামলাটি হাইকোর্টে রয়েছে।
১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জাসদ মনোনীত এমপি প্রার্থী মশাল মার্কা নিয়ে ভোট করেন ও জামানত হারান।
তিনি চরম আওয়ামী লীগ বিরোধী ব্যক্তিদের অন্যতম। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর ১৯৯৭ ইং যোগদান করে নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে গ্রুপিং শুরু করেন ।
১৯৯৮ সালে সাবেক সভাপতি মরহুম জননেতা তোজাম্মেল হোসেন প্রধান এর সঙ্গে হাঙ্গামা সহ ভাড়া বাসায় তার নির্দেশে হামলা করে খুন,জখম করা হয়। এই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছিল।
জামায়াতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ২০০৪ সালে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হন।
পরবর্তীতে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালে উপনির্বাচনে বিএনপি’র বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র এমপি নির্বাচন করে ব্যাপক ভোটে হেরে যান।
২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের
মনোনয়নে নৌকা মার্কা নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী মোঃ মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বিএনপি -চার দলীয় জোটের প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণ এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীর চেয়ে তিনগুণ ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। ৩৫ বছর পর আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে আসে।
জনাব মোঃ মনোয়ার হোসেন চৌধুরী এমপি মহোদয়ের সমর্থনে ২০০৯ সালে আবুল কালাম আজাদ উপজেলা চেয়ারম্যান হন।
উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন নাকাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির সভাপতি মোঃ সাহারুল হুদাকে প্রকাশ্যে উপজেলা চত্বরে মারপিট করে আহত করেন
ও হরিরামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বিপ্লবকে উপজেলা চত্বরে তিনি ও তার ভাইয়ের ক্যাডাররাসহ মারপিট করে হাত ভেঙ্গে দেয় ।
আঃ কালাম আজাদ ২০১৪ ইং সালে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট মেরে নিয়ে স্বতন্ত্র এমপি হন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্বতন্ত্র এমপি হওয়ার পর থেকেই শুরু করেন এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব। সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীকে মিথ্যা মামলা-হয়রানি, হত্যার চেষ্টা সহ প্রশাসনকে জিম্মি করে লুটপাট, প্রকাশ্যে লগ্ননৃত্য, হাউজি, জুয়া, ক্যাসিনো এমনকি উপজেলা প্রশাসন ভবনের নিকট ৩ মাস যাবৎ পরিচালনা করেন হাউজি- জুয়া। তিনি ক্যাডার পোষেন। তার বিরুদ্ধে কথা বললে নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হতে হয়।
২০১৭ সালে ২২কোটি টাকার জি আর চাল আত্মসাধের জন্য দূর্নীতি দমন কমিশন রংপুর কর্তৃক দায়েরকৃত নং ০৯/২০২১ মামলার তদন্তে পাওয়া আসামী । ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে জুয়া, হাউজি চালিয়ে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ২২ডিসেম্বর /২০১৪ তারিখে গোবিন্দগঞ্জ শহীদ মিনার পাদদেশে গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহবানে হাউজি, জুয়া ও মাদকের বিরুদ্ধে অনশনরত অবস্থায় গোবিন্দগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও গোবিন্দগঞ্জ
নাগরিক কমিটির উপদেষ্টা সদস্য আ ফ ম মজিবর রহমান ফুল মিয়াকে তিনি ও তার ক্যাডার বাহিনী বেদম মারপিট করে আহত করেন ও ওয়ার্কার্স পার্টির গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শাখা দখল করে তার অনুসারীকে দিয়ে দেন।
সাবেক স্বতন্ত্র এমপি আবুল কালাম আজাদ এর সময়ে এলাকায় নারী শিশুসহ প্রায় ১০০ ব্যক্তি নিহত হয়। উল্লেখ্য-উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মোঃ আতাউর রহমান সরকারের একমাত্র শিশু পুত্র আশিকুর রহমান সাম্য খুন হন তার ক্যাডার বাহিনী কর্তৃক ।
অপরদিকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নৃত্যরঞ্জন সরদার এর স্ত্রী খুন হয় তার ক্যাডার লুৎফর বাহিনী কর্তৃক ।
২০১৪ নৌকার পক্ষে ভোট করায় ও হাউজি জুয়ার বিরুদ্ধে সংবাদ করায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সাপ্তাহিক কাটাখালী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও সাংবাদিক মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন আকন্দ-কে ৫ই আগষ্ট ২০১৫ ইং উপজেলা প্রশাসন চত্বরে তার আস্তানায় তুলে নিয়ে তার ক্যাডার গণ মারপিট করে হত্যার চেষ্টা করে এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন।
দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি শাহ আলম সরকার সাজু সাংবাদিক ও গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল মতিন মোল্লা কে পুলিশি নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। তিনি দৈনিক সমকালের সাংবাদিক এনামূল হককে মারপিট করে আহত করেন।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি হওয়ার সুবাদে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ২৫০ জন প্রার্থীর দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী নিয়োগে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জে নিয়োগ-বাণিজ্য,ডিও লেটার বাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচন বাণিজ্য।
তার প্রধান শক্তি ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যের প্রভাব ।
তিনি এলাকার অবৈধ বালু দস্যুদের অন্যতম প্রশ্রয়দাতা।
জিনের বাদশার (প্রতারক চক্র)
আশ্রয়- প্রশ্রয় দানকারী গড ফাদার। তিনি ২০২১ সালে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চতুর্থ ধাপে গোবিন্দগঞ্জের ১৪টি ইউনিয়নে নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষ নেন।
স্থানীয় ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরাবরই তিনি নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান করে থাকেন সকলের অভিযোগ। এমপি ও আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় থানায় গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতার পক্ষ নেন । মুখে ও লোক দেখানো দলীয় কর্মকাণ্ড করলেও ব্যক্তি গ্রুপ রাজনীতি চর্চা করেন। তিনি আওয়ামী লীগ রাজনীতির অন্তরালে মাদক এর গডফাদার, চোরাচালান বানিজ্য, জুয়া সহ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। যাহা গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে ২০১৭ সালে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিআরডিবি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র এমপি থাকাকালীন সময়ে ব্যাপক অর্থ-সম্পদ এর মালিক হয়েছেন। এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি তার প্রধান লক্ষ্য।
তিনি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ড অবিদীয় মার্ডি হত্যা মামলার প্রধান আসামী, যাহা গোবিন্দগঞ্জ চৌকি আদালতে সি আর মামলা নং ১১৬/২০১৯ চলমান রয়েছে।
আদিবাসীদের উসকে দিয়ে রংপুর চিনিকল লিমিটেড ইক্ষু ফার্ম বাগদা এর ১,৮৪৩ একর জমি বেদখলের চেষ্টার মুল হোতা ।
২০১৬ সালে তিনি সাঁওতাল হত্যা মামলার এজাহার নামীয় ১নং আসামী। যার জি আর মামলা নং ৫৬০/২০১৬ চলমান রয়েছে ।
তিনি হাইকোর্টে বাদী গৌতম কুমার কর্তৃক দায়েরকৃত রীট নং ১০৯৪৮/২০১৮ দুর্নীতি তদন্ত মামলার বিবাদী।
২০১৬ সালে কাউন্সিল সম্পন্ন না করে হঠাৎ আওয়ামী লীগের সভাপতি ঘোষণা হওয়ার পর তিনি মানুষকে মানুষ মনে করেননি ।
তার আস্তানায় তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করতো। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩ টি আসনের মধ্য আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী মোঃ মনোয়ার হোসেন চৌধুরী সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
২০২১ সালে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাংচুর ও ক্ষতি সাধনের মামলা হয়। যার নং জি আর- ৯১/২০২১ইং।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ বিগত নির্বাচনে
বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান এর নৌকার বিরুদ্ধে ও সর্বশেষ গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় নেতা কে এম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশনেন বলে প্রার্থীদের অভিযোগ রয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে
আবুল কালাম আজাদ ও বিএনপি জামায়াতের সহযোগিতায় তার শ্যালক স্বতন্ত্র মেয়র নির্বাচিত হন। ৩২,গাইবান্ধা-৪, আসনে চলতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাওয়ায় সমগ্র নির্বাচনী এলাকায় আবারও সমালোচনা সহ শান্তি প্রিয় মানুষের মধ্যে দুঃখ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এবিষয়ে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্ৰাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, আবুল কালাম আজাদ গত সময়ে এমপি থাকা কালীন এসিল্যান্ড অবিদীয় মার্ডিকে হত্যা ও ৩ (তিন) সাঁওতাল হত্যাসহ বেশকিছু মামলার আসামী, যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। তাকে কি ভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
তিনি এমপি নির্বাচিত হলে আবারও অস্থিরতা খুন-ছিনতাইসহ বেড়ে যাবে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড।
অবিলম্বে তার মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান তিনি। অন্যথায় রাজপথ অবরোধ সহ নানা কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানায়।
হতাশা গ্রস্ত হাজার হাজার বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকগণ তার মনোনয়ন বাতিলের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার মুখের দিকে চেয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন ও জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে
সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত শান্তির গোবিন্দগঞ্জ বজায় রাখতে ভালমানুষ কে অওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দানের জন্য দাবী জানিয়েছেন সর্বস্তরের জনগণ।
এবিষয়ে আবুল কালাম আজাদ এর বক্তব্য নিতে তার মোবাইলে একাধিক বার কল দিলেও ফোন রিসিভ করেন নি।