mail.google

মোহাম্মাদ মানিক হোসেন, চিরিরবন্দর(দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

দিনাজপুর চিরিরবন্দরে আশংকাজনক হারে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েই চলছে। নির্যাতিত হয়েও চুপ থাকেন শিক্ষিত ও বিত্তবান শ্রেণির নারীরা । নিম্ন ও মধ্যবিত্ত নারী সেবাকেন্দ্রে আসলেও মামলায় যেতে চান না। চিরিরবন্দরে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে চরম হতাশা ও আতংক বিরাজ করছে।
দুইটি দ্বিতীয় শ্রেনী ও দুইটি প্রথম শ্রেণি নিয়ে মাষ্টার্স শেষ করেন জুই আক্তার (ছদ্মনাম)।
এরপর চিরিরবন্দরে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। বিয়ের পর স্বামী, সংসার আর নিজের চাকরি সফলতার সাথেই চালিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু কয়েক বছর না যেতেই পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চান। জুই এর প্রতিবাদ করায় নেমে আসে বিপত্তি। চলতি বছরের মাঝা মাঝি সময়ে স্বামীর হাতে গুরুতর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে জই ভর্তি হন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
শুধু জুই নয়, তার মতো চিরিরবন্দরের নারীরা শিক্ষিত কিংবা স্বাবলম্বী অনেকেই সমাজে নানাক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও নিজগৃহে সুখে নেই। যৌতুক, স্বামীর পরকীয়া, দ্বিতীয় বিয়েতে বাধা, মাদকাসক্তিসহ নানা কারণে তার মতো নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নিম্ন, মধ্য ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর অনেক নারীই নিজগৃহে নির্যাতিতা। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে সেবাকেন্দ্রে আসলেও মামলায় যেতে অনাগ্রহী। আবার উচ্চবিত্ত ও শিক্ষিত অনেক নারী নির্যাতনের শিকার হয়েও চুপ থাকছেন। সেইসাথে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনাও আশংকাজনক হারে বাড়ছে।

উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের ১৪১ টি গ্রাম ও ১৪টি গুচ্ছ গ্রাম রয়েছে। এতে প্রায় আনুমানিক ৪ শতাধিক দম্পতি গত ৩ বছরে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন। এগুলোর কারণ হিসেবে জানা যায় অল্প বয়সে বিবাহ হয়ে ঘনঘন অসুস্থ হয়ে , যৌতুকের দাবী মেটাতে না পারা, দাম্পত্য কলহ, অপ্রাপ্ত বয়সে সংসারের চাপ সামলাতে না পারা, স্বাস্থ্যহানি হওয়া, পারিবারিক সহিংসতা লেগেই থাকা, দীর্ঘদিন স্বামীর বিদেশে থাকা, স্বামী-স্ত্রীর পরকিয়া,স্বামী নেশাগ্রস্থ হওয়া, স্বামী- স্ত্রীর সন্দেহজনক চলাফেরা, স্বামীর গভীর রাতে বাড়ীতে আসা , পিতা-মাতার পছন্দে জোর করে বিয়ে সম্পুন্ন করা।
চিরিরবন্দর সামাজ উন্নয়ন প্রশিক্ষন কেন্দ্র (ঝটচক) লিগাল কাউন্সিলার – মোছা: দিলারা বেগম (রান)ু জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌতুকের জন্যই নারীরা নিজ গৃহে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদের হাতে নির্যাতিত হয়ে থাকেন। স্বামী বা তার পরিবারের সদস্যদের হাতে মারধরের শিকার হন। এছাড়া স্বামীর পরকীয়া, দ্বিতীয় বিয়েতে বাধা, স্বামীর মাদকাসক্তি, ভরণপোষণ ইত্যাদি কারণেও নারী তার নিজ গৃহে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তবে এদের মধ্যে কিছু কিছু নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী এবং প্রতিবেশীর হাতে নির্যাতিত হয়ে থাকেন বলে তিনি জানান ।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সোসাল ওয়াকার (ঝটচক) মোছা: আরজিনা খাতুন জানান, নির্যাতিত হয়েও চুপ থাকেন শিক্ষিত শ্রাণির নারীরাই। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত নারীরা সেবা দিতে চাইলে নিতে চান না। মামলায় যেতে চান না সংসার নষ্ট হবে , মানসম্মান হানি হবে বলে ঝামেলা মনে করেন ।
চিরিরবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনিছুর রহমান জানান, থানায় প্রায় প্রতিদিন দু-একটি পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় মামলা বা অভিযোগ করার জন্য আসে, সেগুলো ভালভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়।
সাতনালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান জানান, বিবাহ বিচ্ছেদ ঠেকানোর জন্য বেশ সময় নিয়ে সালিশের মাধ্যমে সবরকম চেষ্টা সত্ত্বেও অনেক সময় উভয়পক্ষকে মানানো সম্ভব হয় না । বিবাহ বিচ্ছেদ শিশু বিবাহ, যৌতুক ও পারিবারিক সহিংসতা কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যামেই তা টেকানো সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *