–  নুরে আলম মুকতা

যাত্রা পালা মঞ্চ নাটক থিয়েটারের প্রতি দূর্বলতা আমার কখন থেকে হিসেব কষে বের করা কঠিন । তবে এটুকু মনে আছে আমার নিশ্চিত করে দাদা ভাই রোকনুজ্জামান খানের গাধার কান আবৃতি করেছিলাম প্রথম পাবলিক স্টেজে ১৯৭৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। বড় পাবলিক শো ছিল। দশগ্রামের সবাই প্রতি বছর আসত এ অনুষ্ঠান উপভোগ করতে। তার কয়েক বছর পর ক্ষুদে রাজকুমারের পোশাক চড়েছিল আমার গায়ে। আহা কী শিহরণ ! 

মানুষ জন্মগতভাবে স্বপ্নচারী । এজন্য সবাই রঙিন স্বপ্ন দেখে। মলিন ধূসর স্বপ্ন কেউ দেখে না। রাজ রাজড়ার স্বপ্ন ত সবাই দেখে । 

ক্ষুদে রাজ কুমারের যদি রাজ্যভিষেক হয় আর বেশ কিছু ললনা যদি পুষ্পাঞ্জলি করেন তাহলে ত জমে গেল। বিষয়টি ওরকম হয়ে শেষ হলে কথা আর বাড়াতাম না ।  কিন্তু ভাবনার  দার আরও একটু সামনে গিয়ে চকচক করে লম্বা গল্প। এফ ডিসির পেইন্টার প্রিয় দাদু মাষ্টার দুখুর মুখাবয়ব আমি ভুলতে পারি না । 

আমি তখন সদ্য মা হারান যুবক । পোশাকী চাকরির কর্মকর্তা বন্ধু  হঠাৎ  সন্ধ্যার পর বলল, আজ যাত্রা পালা দেখতে যাব। রেডি হয়ে থেক। গাড়ি এসে তোমাকে নিয়ে যাবে। 

এখনও কেউ কেউ বলে আমার নাকি  সন্ধ্যা হলে চোখ ফোটে  ! দ্রুত প্রস্তুতি নিলাম। দুরের পথ। গরম কাপড় যতটুকু পারলাম সাথে নিলাম। পথের মাঝে একটি বিশাল হাওর অতিক্রম করতে হবে। দুটো সেতুর দুধারে মাঘ মাসেও গভীর জল । হঠাৎ আমাদের গাড়ীর ওপর প্রচন্ড জোরে লোহার কি জানি আছড়ে পড়ল। ড্রাইভার একটু কেঁপে গেলেই স্টিয়ারিং একদম ঘুরে যাবে। ততক্ষণে আমাদের গাড়ি সেতুর একদম ওপরে। ভাগ্যিস আমি ড্রাইভারের পাশে ছিলাম। কি মনে করে আমি পেছনের সীটে সেদিন যাই নি জানি না। গাড়ি একটু স্লো হতেই সজোরে ব্রেক সুতে পা দিলাম। ড্রাইভার নিশ্চল হয়ে একদিক হেলে গেলেন। একসেলারেটর শুন্য করে গাড়ি বন্ধ করে দিলাম। চার জন যাত্রী একদম নিশ্চুপ। কেউ কথা বলছি না। কোন শব্দ নেই । ঘুটঘুটে অন্ধকার কোন আলো চোখে পড়ছে না । দূরে জোনাকীর আলো দেখা যাচ্ছে। 

নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে আমি বললাম, দোস্ত টর্চ বের করতে পারছি না। আমার পকেটে টর্চ আছে। একজন বন্ধু বলল, কেন ? 

আমি বললাম, সমস্যা আছে  । 

কিছু দেখতে পাচ্ছি না , 

চোখ বন্ধ কর, জবাবে বললাম ! 

আমি বললাম ,  দুজন হাত বাড়াও  —

দুজন কেন?  ওরা বলল , 

দুজন লাগবে, আমি বললাম । 

একজন রেগে গিয়ে বলল, ধুর শালা একজন হলেই ত তোমার হাত থেকে টর্চ নেয়া যাবে। 

আমি বললাম, যা বলি তাই কর , 

ওরা দুজনই হাত বাড়ালে ড্রাইভারকে সজোরে তুলে বগলের নীচে হাত দিয়ে  শরীরের  সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে কোলে নিলাম । 

ওরা আমার প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকাতে পারছে না । 

তোমাদের ফোন গুলো চাপ দাও, আমি রেগে বললাম। তখন সবে মাত্র নোকিয়ার ৩৩১০ ফিচার ফোন বাজারে এসেছিল। টর্চ ছিল না। বাটনের রেডিয়াম শক্তিশালি ছিল। ডিসপ্লেতে তেমন ব্রাইটনেস ছিল না। স্বল্প আলোতে  অবস্থা দেখে হতভম্ব ।  পকেট হাতড়ে টর্চ বের করতে গিয়ে ওরা সেদিন আমার টাকা ফেলে দিয়েছিল রাস্তায় । 

একটুও দেরি করা যাবে না। ঘটনার বিশ্লেষণ ও দরকার নেই , আমি বললাম

পাঁজাকোলা করে ড্রাইভারকে আমরা পেছন সীটে শুইয়ে দিয়ে মুখ দিয়ে যত জোরে পারলাম নিঃশ্বাস দিলাম। কিছুক্ষণ পর ড্রাইভার চোখ মেলে তাকালে  আমি একলাফে ড্রাইভিং সীটে বসলাম। অনভ্যস্ত চালনায় লোকালয়ে প্রবেশ করে দাঁড়ালাম , 

কিছুক্ষণ পর দেখলাম কয়েকজন মানুষ আমাদের লক্ষ্য করে হেঁটে আসছে । আমরা পানি চাইলে ওরা বাড়ি থেকে পানি নিয়ে এল। রাত এগারোটা , 

গ্রামের রাস্তা , ভাঙ্গাচোরা । আঁধার ঘুটঘুটে। মেলার কাছাকাছি পোঁছানোর আগে দেখি ড্রাইভার অচেতন । 

(চলমান) 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *