mail.google

আব্দুল হাকিম রাজঃ\
বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে সিম ক্লোনিং এর নিউজ বিভিন্ন অনলাইন সংবাদপত্র ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশ হচ্ছে। র‍্যাবের বরাত দিয়ে এসব সংবাদ মাধ্যম গুলো এরকম ভিত্তিহীন খবর প্রকাশ করে রিতিমত জনমনে একটা সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। এসব সংবাদ যারা পড়েছে,আমার মনে হয়, তারা প্রবাসে থাকা নিজের আত্নীয়-স্বজনের ফোন কল রিসিভ করতে ও ভয় পাচ্ছেন। কারন প্রবাস থেকে যারা বাংলাদেশে স্বজনদের কাছে কল করে, তাদের বেশীর ভাগই বিভিন্ন ডায়ালার(সফটওয়্যার) দিয়ে ইন্ট্যারনেটের মাধ্যমে কল করে থাকেন।এর প্রধান কারন হল, ১ ইউরো ডলার দিয়ে ডায়ালারের মাধ্যমে ইন্ট্যারনেটে সংযুক্ত হয়ে একজন প্রবাসী বাংলাদেশের যেকোন মোবাইল অপারেটরে কমপক্ষে ৭০/৭৫ মিনিট কথা বলতে পারে গ্রে লাইন দিয়ে। গ্রে হল বাংলাদেশে মোবাইল কোম্পানি গুলোর থ্রিজি অথবা ক্যাবল ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে যেসব ভিওআইপি ব্যবসায়ীরা সরকারের ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে যেকোন স্থানে ভিওআইপি মেশিন বসিয়ে বাংলাদেশের মোবাইল কোম্পানি গুলোর সিমের মাধ্যমে কল ট্রান্সপার করে থাকে। আর সেসকল ইনকামিং কলে বাংলাদেশের সরকারী প্রতিষ্টান টেলিটক কোম্পানীর সিমই বেশী ব্যবহার হয়। আবার একই ডায়ালার ব্যবহার করে প্রবাসীরা সুধুমাত্র ডায়াল কোড সামান্য পরিবর্তন করে বাংলাদেশের বিটিআরসি্র সার্ভার হয়ে বৈধভাবে দেশের যেকোন মোবাইল অপারেটরে কথা বলতে পারে ৬০ থেকে ৬৫ মিনিট।তাতে যে ব্যক্তি ফোন করবে তার মোবাইলে ইন্ট্যারনেট সংযোগ থাকতে হবে। কিন্তু একজন প্রবাসী যখন নিজের মোবাইল থেকে সরাসরি বাংলাদেশে ফোন করবে,তখন কথা বলতে পারবে মাত্র ২০/২৫ মিনিট। অনলাইন সংবাদ পত্র সহ প্রিন্ট মিডিয়া গুলোতে র‍্যাবের বরাত দিয়ে যে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে তার সারমর্ম হল যে, কোন গ্রাহকের মোবাইলে জঙ্গীরা মিসকল দিলে গ্রাহক যদি কলব্যাক করেন তাহলে মাত্র ৩ সেকেন্ডের মধ্যে (যার মোবাইলে কল এসেছে) তার মোবাইলে থাকা সব নাম্বার কপি করে নেবে জঙ্গীরা। শুধু তাই নয়, গ্রাহকের মোবাইলের ডেবিট/ ক্রেডিট কার্ডের কোন তথ্য থাকলে তাও তিন সেকেন্ডে হাতিয়ে নেবে জঙ্গীরা!তাই +৩৭৫,+৩৮১,+৩৭০,+৫৬৩,+২৫৫ ডায়াল কোডের নাম্বারগুলো থেকে সাবধান!! এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চলছে তুমুল আতংক!সবাই আতংকিত হয়ে খবরগুলো শেয়ার করছেন। শুক্রবার আমার এক সহযোদ্ধা সাংবাদিক শ,ই,সরকার জবলু তার মোবাইলে আসা এরকম একটি কল নিয়ে আতংকিত হয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ চান। আর তার স্ট্যাটাস দেখে আমার আজকের এ লেখার মুল লক্ষ্য। কারন একজন প্রবীন সাংবাদিক যেখানে এরকম একটি কল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন,সেখানে সাধারন মানুস কতই না দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি অনলাইন পত্রিকায় একটি সংবাদ ও প্রকাশিত হয়েছে যে, আমাদের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক গত ৪ই জুলাই ২০১৬ বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২১ মিনিটে একটি নিউজ সাইটের এরকম একটি সংবাদের লিংক শেয়ার করেছেন। একজন আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর ফেসবুক ওয়ালে যখন দেশের সাধারন মানুস কিংবা শিক্ষিত মানুস এরকম সংবাদ দেখবে,তখন বিশ্বাস না করার কোন কারন থাকবেনা। বিদেশে অবস্থানকালে আমি একজন চায়না লোকের সংস্পর্শে ভিওআইপি ব্যবসার খুঁটিনাঠি শিখি।কারন বাহরাইনে ছিলাম আর সেদেশে ভিওআইপি ব্যবসা বৈধ ছিল বলে যা শিখেছি তা হাতে-কলমে শিখেছি।আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বাস্তবতা হচ্ছে,এরকম খবরের বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই।যে পদ্ধতিতে প্রবাস থেকে একজন গ্রাহকের কল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইনকামিং হয়, সে পদ্ধতিতে ডাটা ট্রান্সপার হবার কোন সুযোগ নেই। আর +৩৭৫,+৩৮১,+৩৭০,+৫৬৩,+২৫৫ কোডের ইনিকামিং কল গুলা মুলত বাংলাদেশ সরকারের বৈধ ভয়েপ প্রোবাইডারদের সার্ভার ঘুরে বিটিআরসি হয়ে প্রবেশ করে।ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের ভাষায় বৈধ ভাবে বিটিআরসির মাধ্যমে বাংলাদেশে যে কল গুলা ট্রান্সপার হয় তার নাম হল “হোয়াইট লাইন”। এই হোয়াইট লাইনের মাধ্যমে যখন একজন প্রবাসী তার মোবাইল থেকে ডায়ালারের মধ্যে কলার আইডির ঘরটিতে +৩৭৫,+৩৮১,+৩৭০,+৫৬৩,+২৫৫ কোড গুলার যেকোনটা বসিয়ে বাংলাদেশে ডায়াল করবে,তখন যার কাছে ফোন দেয়া হয়েছে তার মোবাইলে সেই কোডটি দেখাবে। আর একজন প্রবাসী যখন বাংলাদেশে তার কোন স্বজনের মোবাইলে ডায়ালারের মাধ্যমে ফোন দেবে তখন এ কলটি ১ সেকেন্ডের ১০০ ভাগের ১ ভাগের ও কম সময়ে ডায়ালারের মালিকের সার্ভারে হিট করবে।ঠিক এইভাবে কোয়ার্টার সেকেন্ডের কম সময়ে কলটি কয়েকটি সার্ভার ঘুরে বাংলাদেশের বিটিআরসির মাধ্যমে কাংখিত নাম্বারে ট্রান্সপার হয়। বিষয়টি আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর মত বিজ্ঞ মন্ত্রীর জানা না থাকার ব্যাপারটি আমাকে ভাবিয়ে তুলছে। এতে ৩ সেকেন্ড কেন, একজন গ্রাহক যদি টানা ৩ বছরও বাংলাদেশে কারো সাথে কথা বলেন, তবুও কারো সাধ্য নাই যে,সিম ক্লোন করে গ্রাহকের সব তথ্য হাতিয়ে নেবার। ইন্ট্যারনেট ঘাটাঘাটি করে সিম ক্লোনের ব্যাপারে যতটুকু জেনেছি, তা হল কয়েক বছর আগে সিম ক্লোনের মত কিছু ডিভাইস বাংলাদেশে ছিল। এবং সিম ক্লোন ও হয়েছে। কিন্তু সিম ক্লোন করে কারো ডাটা হাতিয়ে নেবার সুযোগ নেই। একটা সিম ক্লোন হলে ,যার সিম ক্লোন হয়েছে তার সিম ও সচল থাকে ক্লোন করা সিম থেকে কল আদান-প্রদান ও হয়ত হয়।কিন্তু ডাটা চুরি অসম্ভব। এখন আর সিম ক্লোন করা সম্ভব হয়না। কারন আজ থেকে কয়েক বছর আগে যে সিম গুলা মোবাইল কোম্পানি গুলো গ্রাহকদের কাছে পৌছে দিত,সে গুলা ছিল গোল্ড সিম নামে পরিচিত। আর সুধুমাত্র সেই সিম গুলাই ক্লোন করা যেত। কিন্তু তাতেও অনেক ঝামেলা আছে। দূরে বসে এসব সিম ও ক্লোন করা সম্ভব নয়। কারন একটা গোল্ড সিম যখন ক্লোন বা ডুপ্লিকেট করা হবে তখন আসল সিমটা অবশ্যই লাগবে। তার কারন আসল সিমের পিছনে যে নাম্বার গুলা থাকে, সেই নাম্বার গুলা ছাড়া গোল্ড সিম ও ক্লোন করা যাবেনা। আর ৩/৪ বছর ধরে বাংলাদেশের মোবাইল কোম্পানি গুলো যে সিম আমদানি করে গ্রাহকদের কাছে পৌছে দিচ্ছে তা ক্লোন করা মোটেই সম্বব না। সেটা সুধুমাত্র মোবাইল কোম্পানীর কাষ্টমার কেয়ার সেন্টার থেকে রিপ্লেশ করা সম্ভব। সিম রিপ্লেশ করলে আসল সিমের কল আদান-প্রদান সম্পুর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। আসল ঘটনা হচ্ছে, টাইমস অব ইন্ডিয়া ২০১২ সালে সিম ক্লোনিং নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপে যা টেলিকম বিশেষজ্ঞদের তীব্র আপত্তির মুখে পরে প্রত্যাহার করে নেয়। এমনকি টাইমস অব ইন্ডিয়া নিউজটি প্রত্যাহার করে নিয়ে একটি সংশোধনীও ছাপে। আর সেই সংবাদটি কিছুদিন পর পর নতুন রুপে নানা রঙে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করে বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো। যেমন রিজার্ভ চুরির পর যখন চারদিকে হ্যাকার আতংক তখন একশ্রেনীর মিডিয়া হ্যাকাররা মিসকল দিয়ে সিম ক্লোন করে ফেলছে- টাইপের নিউজ পাবলিশ করা শুরু করে। গুলশান আ্যটাকের পর জঙ্গী ইস্যু তাজা, তাই এখন হ্যাকারের জায়গায় জঙ্গী বসিয়ে দিয়েছে একশ্রেণীর মিডিয়া। আর এই ভুল কাজটি খ্যাত-অখ্যাত অনেক মিডিয়াই করেছে। সিম কপি করার জন্য দরকার IMSI এবং Authentication Key । ফোন কলের মধ্যে Authentication Key থাকেনা। Key can only be discovered electronically using a SIM duplicator অর্থ্যৎ কেউ যদি কারো সিমটি ডুপ্লিকেট করতে চায় SIM duplicator ডিভাইসের মধ্যে আসল সিমটি থাকতে হবে। ২০০৩ এর আগের সিমগুলো কপি করা যেত সিম ডুপ্লিকেটর এর ভেতর আসল সিমটি ঢুকিয়ে। কিন্তু ২০০৩ পরবর্তী সিমগুলো সিম ডুপ্লিকেটরের মাধ্যমে কপি করতে গেলে উলটো আসল সিমটিই নষ্ট হয়ে যাবে। আইন-শৃঙ্গলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তারা প্রায়ই সিম ক্লোনিং নিয়ে বক্তব্য দিয়ে থাকেন।ন্যূনতম আইসিটি জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও এ নিয়ে বক্তব্য দেয়াটা কি মানুসের আহার-নিদ্রা হারাম করার কৌশল নয় কি?

আব্দুল হাকিম রাজ(সাংবাদিক) hakimrajpress@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *