নিজস্ব প্রতিবেদক, কুড়িগ্রাম:
স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটে মাটিতে মাথাগোঁজার ঠাঁই মিললেও ঘর উত্তোলনের সাধ্য নেই ৪৭ বছর বয়সী বিধবা তহমিনা বেগমের। স্বামীর রেখে যাওয়া ১৮/২০ বছর আগের একটি চৌচালা ঘরে থাকেন। সেটারও চালের টিন মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি ঢুকে বিছানাপত্র ভিজে যাবে। সামনে বৃষ্টির দিনগুলো কিভাবে কাটাবেন এ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই।
তহমিনা বেগমের বাড়ী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়লই সরদার পাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মরহুম সামিউল হকের স্ত্রী। সামিউল হক বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে আর ১০ বছর বয়সী ছেলেকে রেখে প্রায় দশ বছর আগে মারা গেছেন। সহায় সম্বল বলতে মাত্র ৫ শতক ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু না থাকায় জীবনের সংগ্রাম চলছে তহমিনা বেগমের।
তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি ভিটায় বাড়ী ভিটার চারদিকে একদম খোলা। শুধু মাঝখানে ভাঙ্গাচোরা ওই পুরনো চৌচালা ঘরটা ছাড়া আর কিছু নেই। ঘরের সামনে আঙ্গিনায় খোলা আকাশের নিচে তৈরি করেছেন চুলা। রান্নাবান্নার কাজ চলে সেখানেই। চুলায় বাতাস না লাগার জন্য শুকনো কলাপাতার বেড়া দেয়া আছে একটুখানি। তার বাড়িতে ঘুরে দেখা যায়, নাই স্যানিটেশন ব্যবস্থা, নাই কোনো নিরাপদ পানির ব্যবস্থা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অতি কষ্টে দিনযাপন করছেন তিনি।
তাহমিনা বেগম জানায়, স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। অতি কষ্টে ধারদেনা ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে পড়ালেখা করাতে পারেন নাই। ছেলেটা এখন ঢাকায় একটি সোয়েটার কোম্পানিতে কাজ করে কোনরকমে তার নিজের জীবন চালাচ্ছে। এদিকে বয়স বাড়ায় তহমিনা আর আগের মত কাজ কর্মও করতে পারেন না। সরকার ও দানশীল ব্যক্তিদের কাছে সহায়তা কামনা করে তিনি বলেন, যাদের জমি আছে ঘর নাই, সরকার তাদের ঘর দিচ্ছে। আমি একজন অসহায় মহিলা। টাকার অভাবে ঘর তুলতে পারি নাই। আমাকে কেউ একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিলে খুব উপকৃত হতাম। খাই আর না খাই, রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম।
প্রতিবেশী মমিনা বেগম বলেন, তহমিনা বেগম খুবই কষ্ট করে দিন যাপন করেন। আগে বিভিন্ন কাজকর্ম করতেন এখন সেটাও পারেন না। ঘরটা ভাঙাচোরা হওয়ায় বৃষ্টির দিনে খুব কষ্ট হয় তার। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে থাকা সব দিকেই তার সমস্যা। বৃষ্টি হলে তখন আশেপাশের বাড়ি থেকে রান্নাবান্না করে নিয়ে গান। তার জন্য একটা ঘরে ব্যবস্থা করা হলে খুব ভালো হবে।
নুর ইসলাম খন্দকার, জয়নাল আবেদীন ও হেলাল মিয়া সহ আরো অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাহমিনা অত্যন্ত গরীব। যাদের জমি আছে ঘর নাই সরকার তাদেরকে ঘর দিচ্ছে। তহমিনার চাইতে অনেক সচ্ছল মানুষ সরকারি ঘর পেলেও তহমিনার ভাগ্যে জোটে নাই। একটি সরকারি ঘর পেলে আর কিছু না হোক দিন শেষে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে।
এ ব্যাপারে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু বলেন, যাদের জমি আছে ঘর নাই সরকার তাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। যাদের জমিও নাই ঘর নাই সরকার তাদেরকে খাস জমিতে ঘর করে একদম দলিল করে দিচ্ছে। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর এরকম কোনো সুযোগ-সুবিধা আসে নাই। আমি তাহমিনা বেগম কে চিনি। তিনি একেবারেই অসহায় একজন মহিলা। সুযোগ-সুবিধা আসলে তাকে দেয়া হবে। আমার ইউনিয়নের গরীব অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি।