মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের রাজনগর থানা পুলিশ একটি পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা নিয়ে দফায় দফায় আটক বাণিজ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনায় জড়িতদের সাথে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রফাদফা করে পুলিশ একেরপর এক নিরিহ শান্তপ্রিয় মানুসদের আটক সহ টাকা না দিলে গ্রেপ্তারের হুমকি দিচ্ছেন বলে ভুক্তভোগিরা প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।মান-ইজ্জতের ভয়ে কেউ-কেউ পুলিশকে টাকা দেবার পরও পরিমাণ কম হওয়ায় কারো বাড়িতে ফের অভিযানে যাচ্ছে পুলিশ। আবার যারা পুলিশের দাবীমত টাকা দিতে পারে নাই তারা গ্রেপ্তার আতংকে রয়েছে গ্রামছাড়া। নিরিহ ২/১ জন গ্রামবাসী গ্রামে থাকলেও রাতের যে কোন সময় তাদেরকে আটক করে থানায় এনে দাবীকৃত টাকা আদায় করে সকালবেলা ছেড়ে দেবার ও অভিযোগ রয়েছে। এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২ জুন) পুলিশ এ্যাসল্ট মামলার আইও এস,আই আজিজ একদল পুলিশ নিয়ে ভোর সাড়ে তিনটায় উপজেলার মুনিয়ার পার গ্রামের প্রাক্তন মেম্বার আরব আলীর (বিজয়ী মেম্বার প্রার্থী আমিন চৌঃ সমর্থক) বাড়িতে হানা দিয়ে ওয়ারেন্ট থাকার কথা বলে তার ছেলে নুনু মিয়া (৪২) কে গ্রপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। অথচ তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নাই। থানায় নিয়ে তাকে পুলিশ এ্যাসল্ট মামলায় চালানের ভয় দেখানো হয়। পরে সকাল ১০ টায় ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলিগ সভাপতি আব্দুল কাহির চৌঃ(বাবু মেম্বার) থানায় গিয়ে দশ হাজার টাকা চুক্তি করে নগদ তিন হাজার ও বাকি সাত হাজার টাকা বিকালে দেওয়ার মুছলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনেন। একই রাত মুনিয়ার পার গ্রামের বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন, ফতেপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ব্যবসায়ী আব্দুর রকিব সুমনের বাড়িতে ও হানা দেয় পুলিশ। আলাপকালে তারা জানান, পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা ঘটনার সাথে তারা জড়িত ছিলেননা। তারপরও এস,আই আজিজ তাদেরকে ঘটনার ৩/৪ দিন পরে তাদের বাড়িতে গিয়ে তারা ও মামলার আসামী বলে তাদেরকে দ্রুত পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলে আসেন। মান-ইজ্জতের ভয়ে তারা উক্ত গ্রামের মেম্বার আমির আলীকে নিয়ে থানায় গিয়ে এস,আই আজিজকে দুইজনে দশ হাজার টাকা দিয়ে আসেন তাদেরকে হয়রানী না করতে। কিন্তু এস,আই আজিজ তাদেরকে আরো টাকা দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। কথামত না দেবার কারনে ঐদিন তাদের বাড়িতে ও পুলিশ হানা দেয়। পরাজিত মেম্বার পদপ্রার্থী মাছুম আহমদ জানান, তার সমর্থকদের হয়রানী না করতে তিনিও পুলিশকে মোঠা অংকের টাকা দিয়াছেন,কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ কয়েকটি বাড়িতে হানা দেবার কারনে তিনিও এখন গ্রেপ্তার আতংকে ভুগছেন। ঘটনার দিন আটক পরাজিত মেম্বার পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আলী জানান, তাদের তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে মামলা রেকর্ডের পর এস,আই আজিজ তাদেরকে রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে তার পিতার কাছ থেকে ৩৫ (পয়ত্রিশ) হাজার টাকা নেন। তানা হলে পুলিশ তাদেরকে রিমান্ডে এনে শারীরিক নির্যাতনের ভয় দেখান।এদিকে মামলার আইও এস,আই আজিজ এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন। উল্যেখ্য, ইউপি নির্বাচনে গত ৭ মে শনিবার উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মনিয়ারপার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনা শেষে প্রিজাইডং কর্মকর্তা বদরুল আমিন সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের ফলাফল ঘোষণা করেন। ফলাফল ঘোষণার পর পরাজিত মেম্বার প্রার্থী মোহাম্মদ আলীর এজেন্ট খুরশেদ আলম (২৫) বাহিরে গিয়ে তার প্রার্থীর পরাজিত হওয়ার খবর দিলে মোহাম্মদ আলীর সমর্থকরা আবারো ভোট গণনার জন্য প্রিজাইডিং অফিসারকে চাপ দেন। তিনি আবারো ভোট গণনায় রাজি না হলে মোহাম্মদ আলী ও তার লোকজন নির্বাচনী দায়িত্বশীলদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। প্রিজাইডিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে সদর সার্কেলের এএসপি রাশেদুল হক ঘটনাস্থলে যান। এসময় পরাজিত প্রার্থীর লোকজন পুলিশের গাড়িতে ঢিল ছুড়ে ভাংচুর করেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ পরাজিত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী (৪৫), মঞ্জুরুল আলম(২০) ও খুরশেদুল আলম (২৫) কে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *