হীমেল মিত্র অপু স্টাফ রিপোর্টার

রংপুরের দেবী চৌধুরাণী ব্রিটিশ ভারতে ইতিহাসে যে কয়জন নারী ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।

দেবী চৌধুরাণীর বাবার নাম ছিলো ব্রজ কিশোর চৌধুরী এবং মাতার নাম কাশীশ্বরী দেবী।দেবী চৌধুরাণী দাম্পত্য সঙ্গী নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরী।

মন্থনার জমিদার নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরীর সাথে তার বিবাহ হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর জমিদারির দায়িত্ব তার উপর এসে পড়ে।তিনি প্রজাদের খুব
ভালোবাসতেন।

তার সময় রংপুর অঞ্চলের কালেক্টর হয়ে আসেন জনাথন গুডল্যাড এবং তার দেওয়ান নিযুক্ত হন দেবীসিংহ।দেওয়ান দেবীসিংহ ও তার কর্মচারী হয়ে রামের উপর রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব প্রদান করেন।

রাজস্ব আদায়ে সময় তাদের অত্যাচারে কৃষক এমনকি জমিদাররাও অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে।

এছাড়াও সেই সময় ইংরেজ নীলকরদের অত্যাচার বেড়ে যায়,তারা জোরপূর্বক উর্বর জমিতে কৃষকদের নীলচাষ করতে বাধ্য করা শুরু করে।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে দেবী চৌধুরাণী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

আর তার কারণে তিনি ব্রিটিশদের রোষানলে পড়ে।
তাকে দমন করার জন্য মীর কাশিমের নেতৃত্বে একদল ইংরেজ সৈন্যবাহিনী পাঠায়।এ যুদ্ধে দেবী চৌধুরানীর সাথে রংপুরের নূর উদ্দিন বাকের মুহাম্মদ জং,ভবানী পাঠক এবং দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়া অঞ্চের শত শত কৃষক অংশ নেয়।

১৭৬০ সালে ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে দেবী চৌধুরাণী জয়লাভ করে। যুদ্ধে ইংরেজ ক্যাপ্টেনসহ অনেকে নিহত হন এবং মীর কাশিম পিছু হটতে বাধ্য হন।
দেবী চৌধুরাণীর যুদ্ধে জয়লাভের স্থানটি এখনও মানুষের কাছে “জয়পুর” নামে পরিচিত।

তার নামে রংপুরে দেবী চৌধুরাণী ডিগ্রী কলেজ,চৌধুরাণী রেলস্টেশন,চৌধুরাণী উচ্চ বিদ্যালয়,চৌধুরাণী বাজার রয়েছে।তার খননকৃত বিশাল চৌধুরাণী দিঘি,চন্ডিপুর দিঘি এবং মন্থনার রাজবাড়ি আজো টিকে আছে কালের সাক্ষী বহন করে। দেবী চৌধুরানী ক্ষণজন্মা এক জনহিতৈষী নারী ও তেজস্বী বিপ্লবী। তিনি তার জীবনেও যেমন আলোচিত প্রথমে সংসারী ছিলেন পরে সন্নাসী হিসেবে। তাকে নিয়ে করা উপন্যাস, গল্প, সিরিযাল, নাটক ও সিনেমা তৈরি হয়।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়ন পার হলে চন্ডীপুর বাজারে নাপাই চন্ডীর বৈশাখি মেলা হয়। এই স্থানটিতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুদ্ধ করেন দেবী চৌধুরানী।
চৌধুরানী বাজারটিও এলাকায় বেশ বড় বাজার হিসেবে পরিচিত। সন্ন্যাসী বিদ্রোহের অন্যতম রূপকার ও খ্যাতিমান নেত্রী দেবী চৌধুরানীর অবাধ বিচরণস্থল ছিল পীরগাছা ।
নওয়ার দেবীগঞ্জও তার স্মৃতির এলাকা। করতোয়া, তিস্তা, আত্রাই ও কুড়ুম নদীতে ঘেরা এখানকার ঘন বনাঞ্চলে ব্রিটিশদের সাথে তিনি কয়েক দফা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে বিজয়ী হন। তার স্মৃতি থেকেই এর নামকরণ হয় দেবীগঞ্জ।

১৭৮৩ সালে এপ্রিল মাসে পহেলা বৃহস্পতিবার (বর্তমান পীরগাছা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রাম) লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস এর নেতৃত্বে একদল ইংরেজ বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত এবং নিহত হন। এই যুদ্ধে দেবী চৌধুরাণীর সাথে অন্নদানগরের জমিদারও নিহত হন।দেবী চৌধুরাণীর পরাজিত স্থানে বাংলা বৈশাখ মাসের প্রতি বৃহস্পতিবার মেলা বসে। যা “নাপাইচন্ডি” মেলা নামে পরিচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *