হারুন উর রশিদ সোহেল রংপুর ঃ
রংপুর মহানগরীর ধর্মদাস বার আউলিয়া গ্রামের মোস্তফা কামাল লিটন রংপুর কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহনই বদলে দিয়েছে তার ভাগ্য। নিজ চেষ্টায় কম্পিউটার কম্পোজ ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দুঃখ কে জয় করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বর্তমানে অভাব তার ধারের কাছে আসতে পারে না।
সরেজমিনে লিটনের সাথে কথা হরে তিনি জানান, রংপুর মহানগরীর মডার্ণ মোড় বিস্মিলাহ মাকের্টের তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রুপায়ন কম্পিউটার্স এ কথা হয় মোস্তাফা কামাল লিটনের সাথে। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় অভাব ছিল তার নিত্যসঙ্গী। বাবা রেজাউল করিম ও মাতা মোছাঃ মরিয়ম বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে লিটন সবার বড়। তার বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি হওয়ায় দৈনিক যে আয় করতেন তা দিয়ে সংসার চলাসহ সন্তানদের লেখা-পড়ার খরচ কষ্ট করে চালাতেন। এরই মধ্যে লিটন রংপুর মডেল কলেজ হতে এইচ.এস.সি পাশ করে। বাবার এত কষ্ট সহ্য করতে না পেরে এন,জিও এসোডে হাতীবান্ধা বড়খাতায় মঙ্গাপিড়িত এলাকায় ক্রেডিটে চাকুরী নেয়। প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে কর্মএলাকায় প্রত্তন্ত্য গ্রাম ঘুরে তাকে সাপ্তাহিক কিস্তি আদায় করতে হতো। কিস্তি বকেয়া থাকাসহ নানা সমস্যার কারণে একদিন চাকুরী ছেড়ে বাড়ী চলে আসে সে। বাড়ীতে এসে দেখে বাবার কাজ নেই, সংসার চালানো ও ভাই বোনের লেখা-পড়ার খরচ ইত্যাদি ঝামেলা লেগেই আছে। তাই বিভিন্ন জায়গায় চাকুরীর জন্য ঘুরে বেড়ায়। ফাঁকে ফাঁকে ছোট-ছোট বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়াতেন। এত অভাব অনটনের মাঝেও সংগ্রামী লিটন স্নাতক পর্যায়ের লেখা-পড়া রাত্রী কালীন চালিয়ে যেতেন। এ সময় লিটনের চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে। এক সময়ে সে তার শিক্ষাগুরু রানা আলম ও রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচানো শাহিন বেগের পরামর্শে তামপাটে অবস্থিত রংপুর কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে স্ব-নির্ভর টেড্রে ০৬ মাস মেয়াদী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হয়ে মানুষের সাইকেল দিয়ে যাতায়াত করে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে চূড়ান্ত পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে অ+ অর্জন করে। এতে অনেক পরিশ্রম করে সে। প্রশিক্ষণ শেষে সে নিজে কিছু করার চিন্তা করে। এক পর্যায়ে তার চিন্তা প্রকট আকার ধারণ করে। তাই সে সাহস করল যে কম্পিউটার সম্পৃক্ত কোন ব্যবসা করবে। কিন্তু এতে অনেক টাকার প্রয়োজন। কারণ একটি দোকান নিতে গেলে ( জামানত, দোকান সাজানো, কম্পিউটার, পিন্টার ) ইত্যাদির জন্য টাকা পাবে কোথায়। লিটনের সর্বশেষ পুঁজি ছিল তার শখের একটি গাভী। সে সিদ্ধান্ত নিল ভবিষ্যত গড়তে হলে তাকে গাভী বিক্রি ছাড়া তার কোন পথ নেই। অবশেষে সে গাভী বিক্রির ২০,০০০/= হাজার ও তার মায়ের দেওয়া ১০,০০০/= হাজার সহ মোট ৩০,০০০/= হাজার টাকা দিয়ে মডার্ণ বিস্মিলাহ মার্কেটে তার খালাতো ভাইকে নিয়ে যৌথভাবে একটি পেন্টিয়াম-৩ কম্পিউটার, একটি ক্যানন পুরাতন প্রিন্টার ও একটি স্ক্যানার দিয়ে বিগত ২০১০ সালের জানুয়ারী মাসে তার ব্যবসা শুরু হয়। এক বছর পর অর্থাৎ ২০১১ সালে ছোট ভাই শাহাদত হোসেন মমিনকে নিয়ে সর্ম্পূন আলাদা ভাবে শুরু করে কম্পিউটার কম্পোজের ব্যবসা। তার দোকানের নাম দেওয়া হয় রুপায়ন কম্পিউটার্স । সততা ও নিষ্ঠাকে লালন করে দিন-রাত পরিশ্রম চালিয়ে যায় লিটন। বর্তমানে শত ব্যস্তার মাঝেও লিটন এখন মাস্টার্স (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) শেষ পর্বের ছাত্র হিসেবে তার লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। তাকে কম্পিউটার কাজে যে কোন সমস্যায় সার্বিক সহযোগিতা করেন রংপুর কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক সোহেল রানা সহ অন্য প্রশিক্ষকবৃন্দ। বর্তমান প্রিন্সিপাল স্যার ও তার প্রতি আন্তরিক। তাদের অনুপ্রেরণায় লিটন পিছু টান না দিয়ে এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। কিন্তু লিটনকে আথির্কভাবে সহযোগিতা-করার কোন লোক না থাকায় বিভিন্ন এন.জি ও থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহন করে দোকানের একটির পর একটি জিনিস কিনে আজ লিটন একজন সফল ব্যবসায়ী। তার দোকানে ২টি ফটোকপি মেশিন, সাদাকালো লেজার পিন্টারসহ ডেক্সটপ কম্পিউটার ৫টি, ডিজিটাল ক্যামেরা ৩টি, স্টুডিও, ষ্টেশনারীসহ অন্যান্য জিনিসপত্র রয়েছে। বর্তমানে তার দোকানে ৪ জন কর্মচারী রয়েছে। তার এখানে কাজ শিখে অনেকে ভাল-ভাল পর্যায়ে চাকুরী করছে বলে জানা গেছে। লিটনের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি আবেগের সহিত বলেন-যে, “আমি যেমন কারিগরি প্রশিক্ষন গ্রহন করে দুঃখকে জয় করে নিজ চেষ্টায় ভাগ্য পরিবর্তন করেছি। তেমনি আমার মতো সকলেই যেন জেনারেল শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা গ্রহন করে। তাহলে শিক্ষা জীবন শেষ করে কেউই হতাশায় ভুগবে না।” সে আরও জানায়, সরকারী ও বেসরকারীভাবে সহযোগীতা পেলে তার কম্পিউটার ব্যবসা নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে।