mail.google

আব্দুল হাকিম রাজ,মৌলভীবাজারঃ
রাজনগরে গত মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিতে ৩’শ মিঃমি বৃষ্ঠিপাত হয়েছে। এ যাবত কালের রেকর্ড পরিমান বৃষ্ঠির কারণে কাউয়াদীঘি হাওর ও উজানের প্রায় কয়েকশ হেক্টর পাঁকা বুরো ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বহু কৃষকের কুলে এসে তরি ডুবে যাবার মত অবস্থা। অব্যাহত বৃষ্ঠি ও পাহাড়ি ঢলের নেমে আসা পানি বিভিন্ন খাল-বিল ও নদী পথ দিয়ে এসে কাউয়াদীঘি হাওর ও উজানের পাঁকা বুরো ফসলকে তলিয়ে দেয় বলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানান। এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের অব্যাহত লোডশেডিং এর কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড সময় মতো হাওরের অতিরিক্ত পানি পাম্পের মাধ্যমে নিস্কাশন করতে না’পারায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে ভূক্তভোগিরা মনে করছেন। কুশিয়ারা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্ঠি হয়েছে। রাজনগর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাযায়, চলতি বছরে উপজেলায় হাওর ও উজান মিলে ৯৭ভাগ কৃষক বুরো ধান বৃষ্ঠির পূর্বে ঘরে তুলতে পারলেও বাকীরা দেরীতে আবাদ করায় গত বুধবারের টানা বর্ষনে তা তলিয়ে যায়। এদিকে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, অব্যাহত বর্ষন ও মাঝারি আকারের টর্নেডোর কারণে বিদ্যুৎ বিভাগে বিদ্যৎ সংযোগ বন্ধ রাখায় কাশিমপুরে স্থাপিত পাম্পগুলো যথাসময়ে পানি নিস্কাসন কাজে চালু করা সম্ভব হয়নি। তাই কৃষকদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এদিকে অব্যাহত বর্ষণ,পাহাড়ি ঢল ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে রাজনগরের উত্তর দিকে বহমান কুশিয়ারা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কুশিয়ারার উভয় তীরের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার লোকজনের মধ্যে চরম আশঙ্কার সৃষ্ঠি হয়েছে। পাউবো সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে জেলার বৃহত্তম হাওর কাউয়াদীঘির বুরো ধান নিরাপদে উৎপাদনের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাউয়াদীঘি বুরো ক্যাচম্যান্ট এরিয়ার অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনের জন্য ১২শ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন ৮টি পাম্প বিশিষ্ঠ কাশিমপুর পাম্প হাউজ নির্মাণ করে। বর্ষা মৌসূমে অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে হাওরের পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাউবো’র নিয়ন্ত্রনাধীন পাম্প হাউজের ৮টি পাম্প বিদ্যুতের লো’ভোল্টেজ, লোডশেডিং ও পাম্প গুলোর নিস্কাশন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কারণে সময় মতো পানি নিষ্কাশন করতে না’পারায় প্রায় প্রতি বছরই এধরনের সমস্যার সৃষ্ঠি হয়। ৩২ বছর পূর্বে স্থাপিত এসব পাম্প দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩/৪’শ কিউসেক এর বেশি পানি নিস্কাশন করা যাচ্ছেনা। এর মধ্যে বিদ্যুতের লো’ভোল্টেজ সমস্যার কারণে সব পাম্প এক সাথে চালানো সম্ভব হচ্ছেনা। যতটা পানি নিস্কাশন করা হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশী পানি হাওরে পতিত হচ্ছে। বিগত ২০১৫সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার কর্তৃক নতুন ডিপিপি প্রস্তাব যথাযত মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। সরকার এ প্রস্তাব অনুযায়ী উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন পাম্প হাউজ বাস্থবায়ন করলে হাওর ক্যাচম্যান্ট এলাকার বাইরের পানিও নিস্কাশন করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্ঠ বিভাগ জানায়। এদিকে রাজনগরে হঠাৎ করে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সৃষ্ঠি হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় চরম ভূগান্তির মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে রাজনগর বাসীকে। তীব্র তাপদাহের মধ্যে অনাকাঙ্খিত এ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে রাজনগর ও মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ অফিস জানায়, অতিবৃষ্ঠি, ঘূর্নিঝড় কিংবা প্রাকৃতিক যেকোন দুর্যোগে জননিরাপত্তা বিবেচনায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখতে হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) জানান, ১৯৮৩ সালে ১২শ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন পুরনো এ পাম্প গুলো দিয়ে এখন ৩/৪’শ কিউসেক এর বেশি পানি নিস্কাশন করা যাচ্ছে না। তারপর বিদ্যুতের ভোল্টেজ সমস্যা তো রয়েছে। নতুন একটি পাম্প হাউজের জন্য ২০১৫ সালে সরকারের নিকট ডিপিপি প্রস্তাব পাঠালে গত জুলাই মাসের একনেক সভায় তা অনুমোদন পেয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে আগামীতে আর এ সমস্যা থাকবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *