রাণীশংকৈল প্রতিনিধি
ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় কেউটান গ্রাম। রাণীশংকৈল-হরিপুর পাকা সড়কের পাশে একটি শিমুল গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কোল ঘেঁসে বয়ে গেছে কুলিক নদী। বর্ষা মৌশুমে ভরা যৌবন লাভ করে। শীতকালে প্রায় অর্ধ জীবিত দেখে মনে হয়। জনসমুদ্রে পরিণত থাকে সব সময়। সূর্য যখন পূর্ব আকাশে সোনালী আভা ছড়ায় তখনি দুই ডানা মেলে উড়তে থাকে পানকৌড়ির দল। যে যার মতো উড়ে যায় আহারের খোজে। দুপুর হলে আবার শুরু হয় এদের ফিরে আসার পালা। প্রতিদিনের মতো এরা এসে জমা হয় শিমুল গাছটিতে। মন ভরে যায় পথচারিদের। অবাক চিত্তে চেয়ে থাকে যারা প্রথম এ দৃশ্য দেখে। ভাবতে থাকে যেখানে এত মানুষের সমাগম সেখানে নির্ধিদ্বায় পাখিগুলো ঝাঁক বেধে গাছের ডাল ভরে বসে আছে। এরা কখনও সবুজ পাতার মাঝে আবার শীতকালে পাতা ঝরে গেলে পাতা বিহীন ডালের ডগায় অনায়াসে বসে আছে। সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলতে শুরু করে গাছের চেহারা আরো মনোরম হতে থাকে। সুর্যতাপ কমতে থাকা সোনালী আলোয় আরো মনোমুগ্ধকর করে তোলে। সারা বছর এদের এখানে দেখা যায় তবে শীতকালে বেশী পরিমানে থাকে এরা। প্রতিদিন কয়েক’শ পাখি দেখতে পাওয়া যায়।
শিমুল গাছের স্বত্তাধিকারী যাদব রায় জানান, প্রায় বছর আটেক আগে অগ্রহায়ণ মাসের বিকেলে চার-পাঁচটি পানকৌড়ি পাখি এসে বসে। পরের দিন আরো কয়েকটি পাখি আসতে দেখা যায়। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে গাছটি পাখিতে ভরে যায়। পাখির এমন ভালবাসা পেয়ে গ্রামের মানুষ এদের আগলে রাখতে শুরু করে। গাছটিতে রাতের আশ্রয় শেষে আবার সকাল হলেই পাখিগুলো খাদ্যের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। কেউটান গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মোঃ রইসউদ্দিন জানান, প্রতিদিন ২০০-৩০০ পানকৌড়ি পাখি এই শিমুল গাছে আসে। সে সময় তাদের কলকাকলিতে পুরো এলাকা মুখোরিত করে তোলে। দুর দুরান্ত থেকে অনেক মানুষ প্রতিনিয়তই আসে এদের দেখতে।
হোসেনগাও ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মাহবুব আলম জানান, গ্রামের প্রতিটি মানুষ পাখি বান্ধব হয়ে উঠেছে। এরা কয়েকবার কয়েকজন পাখি শিকারীকে মারধর করেছে। পাখিগুলো সংরক্ষণের জন্য সবার সহযোগিতা পাচ্ছেন।
পরিবেশবীদ অধ্যক্ষ মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, পাখিরা নিজেরাই তাদের নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে। এখন আমাদের সবার দায়িত্ব এদের রক্ষা করা। এদের রক্ষা করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। রাণীশংকৈল উপজেলা পাখি বান্ধব’র মাইল ফলক হয়ে উঠুক এ প্রত্যাশা রাখেন সবার কাছে।