রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

রৌমারীতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের ২ কোটি ২ লাখ ৬২ হাজার ৯৬৮ টাকা ও ১৪৩৯ দশমিক ৫৫৫ মে.টন চাল সম্পূর্ণ ‘খাইদাই’ করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও প্রকল্পের সভাপতি সেক্রেটারীরা কাগুজে প্রকল্প দেখিয়ে সমস্ত টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে এমন অনেক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে অর্থবছর শেষ হওয়ার ২ মাস অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এখনও ‘সোলার দেবেন’ বলে সাধারণ মানুষের সাথে ‘মশকরা’ অব্যহত রেখেছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যলয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৮৩টি স্থানীয় সংসদ সদস্যের এবং অন্য ৮২টি সাধারণ। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাবিটার ১৬টি প্রকল্পের জন্য দেয়া হয় ৫৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৭ টাকা। এর মধ্যে সোলার প্যানেলের জন্য ২৫ লাখ ৮০ হাজার ৫৭৭ টাকা ও মাটির কাজের জন্য ২৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। এছাড়াও ২২ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৬ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় সোলার ও বায়োগ্যাস প্রকল্পের জন্যে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাবিটার ১৬টি প্রকল্পের মধ্যে চরবন্দবেড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উত্তরে পাকা রাস্তা পর্যন্ত রাস্তা পুননির্মাণে ২ লাখ টাকা, চুলিয়ার চর বাজার হতে পশ্চিমে আয়ুব আলীর বাড়ি হয়ে দক্ষিণে পাঠাধোয়া পাড়া খলিলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুননির্মাণে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, ছাটকড়াইবাড়ি ইউনুছের বাড়ি হতে খেতার চর গয়টাপাড়া হয়ে চরকাউনিয়ার চর আব্দুর রশিদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুননির্মাণে ৩ লাখ টাকা, যাদুরচর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ হতে পুর্বদিকে ডিসি রাস্তা পর্যন্ত পুননির্মাণে ৫ লাখ টাকা, বাওয়াইরগ্রাম মাজার হতে উত্তরে সামাদ দেওয়ানীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য ২ লাখ টাকার কাজও নেই টাকাও নেই।

অন্যদিকে টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ বিশেষ ও সাধারণ বরাদ্দের সকল প্রকল্প যার যার মতো মেরে দিয়েছেন। এরমধ্যে চরশৌলমারী হামিদের বাড়ি হতে উত্তর দিকে ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ৫০ হাজার, শান্তির চর খবিরের বাড়ি হতে উত্তর দিকে সাঈদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ৬০ হাজার, গোয়লাগ্রাম তফিজ ডাক্তারের বাড়ি হতে সুলতানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ৬২ হাজার, বংশিপাড়া হাসেন আলীর বাড়ি হতে দক্ষিণে কাশেম আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ৮০ হাজার, টালুয়ারচর আব্দুল রশিদের বাড়ি হতে দক্ষিণ দিকে জহুরুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ৬০ হাজার, ঝুনকির চর রুহুলের বাড়ি হতে উত্তর দিকে আনোয়ারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ৬০ হাজার, যাদুরচর হাইস্কুল থেকে যাদুরচর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য ২ লাখ, পর্বপাখিউড়া সাত্তার মাস্টারের বাড়ি হবে উত্তরে আবুল খায়েরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য দেড় লাখ, পুড়ারচর মজিবরের বাড়ি হতে দক্ষিণে হামিদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ১ লাখ, মির্জাপাড়া সালামের বাড়িতে সোলার প্যানেল স্থাপন ৬০ হাজার, গোয়ালগ্রাম কলিম চানের বাড়িতে সোলার প্যানেল ৬০ হাজার, বড়াইবাড়ি কাদের মেম্বারের বাড়ি হতে পুর্বদিকে খলিলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরাতের জন্য দেড় লাখ, দক্ষিণ নামাজেরচর আবুলের বাড়ি হতে পশ্চিমে সোনাপুর মোতালেবের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার কোন কাজই হয়নি।

অন্যদিকে সরকার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সৌর বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে গ্রামে গ্রামে সোলার প্যানেল স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়। টিআর ও কাবিখা থেকে এ সকল সোলার দেয়া ছাড়াও সোলার ও বায়োগ্যাস প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি গ্রামে এর সুবিধা দেয়া হচ্ছে। সে লক্ষ্যে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে সোলার ও বায়োগ্যাস প্রকল্পে ২২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিটি সোলারের বিপরীতে ১৮ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫৮ হাজার টাকা মূল্যের ২৮৭টি সোলার প্যানেল স্থাপন করার কথা। কিন্তু কোথায় টাকা কোথায় সোলার কিছুরই হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিকট থেকে সোলার দেয়ার কথা বলে যে পরিমাণ টাকা নেয়া হয়েছে সোলারের দাম এর থেকে অনেক কম। ফলে কোন চেয়ারাম্যান বা সদস্যই সোলার গ্রহন করতে চাইছেন না। রৌমারীর দাঁতভাঙ্গা ইউপি সদস্য নুর মোহাম্মদ ডন বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য রুহুল আমিন আমার নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন কিন্তু সোলার দিচ্ছেন ১৫ হাজার টাকা মূল্যের। আর যে সোলারগুলো দেয়া হচ্ছে সেগুলো সব ‘ইটকল’ কোম্পানীর। ৩৫ ওয়ার্টের একটি সোলারের বর্তমান বাজার মূল্য ১৫ হাজর টাকা। অথচ সরকারী কাগজে ওই সোলারের জন্য ধরা হয়েছে ১৮ হাজার টাকা।

দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের চর কাউনিয়ারচর গ্রামের আবু সাঈদ বলেন, ‘কোথায় মাটি ভরাট আর কোথায় রাস্তা সংস্কার কিছুই তো দেখি না। মাঝে মাঝে হলুদ শাড়ি পড়া কিছু মহিলা রাস্তায় রাস্তায় কিছু মাটি কাটার কাজ করে আমরা সেটাই জানি। আমরা এ ব্যাপারে অভিযোগও দিয়েছি কিন্তু সেটাতেও তো কাজ হয় না।’ একই রকম কথা বললেন চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারি গ্রামের ইউনুছ আলী, শৌলমারী ইউনিয়নের চেংটাপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, রৌমারী সদর ইউনিয়নের ইছাকুড়ি ইন্তাজ মেম্বার, বন্দবেড় ইউনিয়নর খঞ্জনমারা গ্রামের সাইফুল ইসলাম, যাদুরচর ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ি গ্রামের মোশাররফ হোসেনসহ অনেকে।

অপরদিকে প্রকল্প সভাপতি সেক্রেটারীরা বলছেন অন্যকথা। তারা বলছেন, প্রতিটি প্রকল্পের ইস্টিমিট করতে পিআইও নেন ৫ হাজার ও প্রতি মে.টনের জন্য ২ হাজার টাকা। এমপিকে দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। তাহলে আমাদের কি থাকে আর কি দিয়ে কাজ করবো?

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য রুহুল আমিনের সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফোনে এসব আলাপ হয় না। আমার সঙ্গে সাক্ষাত করলে এর উত্তর আমি দিতে পারবো।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সকল প্রকল্পের টাকা আগেই এমপি সাহেব নিয়ে নেন। আর যত চাপ যায় আমার উপর দিয়ে। কি করবো আমরা চাকরী করি। আর কিছু বলবো না। বুঝে নিয়েন। #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *