শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার বকশি আব্দুল হকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। টাকার বিনিময়ে থানার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস ও সকল মামলা রেকর্ডেই ঘুষ গ্রহণের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সে ওসির নাম ভাঙ্গিয়েও দীর্ঘদিন যাবৎ ঘুষ গ্রহণ করে আসছে। তাকে ঘুষ না দিলে নিজের শারিরিক অসুস্থ্যতা, ব্যস্ততা ও এজাহারের কপিতে ত্রুটিসহ নানা অযুহাত দেখিয়ে বাদি পক্ষকে হয়রানি করেন তিনি। বকশি আব্দুল হকের বিরুদ্ধে এসকল অভিযোগ উপজেলার বিভিন্ন সচেতন মহল ও ভুক্তভোগিদের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানার বাসিন্দা তিনি। তার কনস্টেবল নম্বর-৬১৪। গত ৩বছর পূর্বে সে শৈলকুপা থানায় যোগদান করেন। এরপর থেকেই তিনি বকশির দায়িত্ব গ্রহন করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বকশি হক প্রত্যেক মামলায় ১ হাজার ও ওসির নাম ভাঙ্গিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি ও গ্রহণ করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে নিরীহ ও পয়সাওয়ালাদের কাছ থেকে আরও বেশি ঘুষ গ্রহণ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এছাড়াও যে কোন ব্যক্তি মামলা দায়ের বা অভিযোগের কপি নিয়ে থানায় এলেই কপির নাম দেখে আসামি পক্ষের লোকজনের মোবাইল নাম্বার দালালদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে বিষয়টি তাদের জানিয়ে দেয়। এ বাবদ আসামী পক্ষের কাছ থেকে সে টাকা হাতিয়ে নেয়।
বিকাশে বা লোকমারফত ঘুষ গ্রহণ করে মামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য আসামী পক্ষকে জানিয়ে দেন তিনি। এছাড়াও পুলিশ আসামী ধরতে যাওয়ার আগ মুহুর্তে মোবাইলের মাধ্যমে তিনি আসামী পক্ষকে সতর্ক করে দেন। এতে করে পুলিশ অনেক দাগী আসামীকে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে।
যে কোন মামলার ফাইল মামলা রুজু হওয়ার আগে নিয়মানুযাই বকশি প্রস্তুত করে ওসির কাছে নিয়ে থাকে। কিন্তু এ সুযোগে বকশি হক নিজে ১ হাজার ও ওসির নাম ভাঙ্গিয়ে মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণ করে আসছে। বাদি পক্ষের সকল তথ্য আসামি পক্ষের কাছে বিক্রির জন্য এজাহারের একাধিক কপি করে রাখেন এবং সেই কপি ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় বিক্রি করে থাকেন।
এদিকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর জন্য ওসির নাম ভাঙ্গিয়ে ৫ হাজার টাকা দাবী করেন, সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকার কমে তিনি গ্রহণ করেন না।
অনেকের অভিযোগ বা জিডি থানায় লিপিবদ্ধ হওয়ার আগেই সেসব তথ্য প্রতিপক্ষের কাছে বকশি ফাঁস করে দেয়। যে কারনে আইনী সহায়তা নিতে আসা অনেক সাধারণ মানুষ বিভিন্ন হুমকি-ধামকি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এছাড়াও প্রতিনিয়তই থানায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের কোর্টে চালানের জন্য গাড়ী ভাড়া বাবদ আসামী প্রতি ১হাজার টাকা করে দাবী করেন তিনি। টাকা কম দিলে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে আসামীদেরকে কোর্টে পাঠান। এমন অভিযোগ আসামী পক্ষের স্বনজদের।
তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, থানায় জব্দকৃত বিভিন্ন প্রকার মাদক দ্রব্য ও ঢাল, ফালা, রামদা এবং দেশীয় তৈরী অস্ত্র-শস্ত্র তিনি গোপনে বিক্রয় করেন। অনেক মাদক ব্যবসায়ীর সাথে তার সখ্যতা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছুদিন আগে থানায় জব্দকৃত সরকারী গাছের গুড়িও তিনি রাতের আধারে বিক্রি করে দেন। এ নিয়ে থানা চত্বরে হই-হুল্লুড় শুরু হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ঈদ ও বিশেষ দিনকে সামনে রেখে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নাম ভাঙ্গিয়ে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করেন বকশি হক। এবারও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মোটা অংকের চাঁদাবাজীর মিশন হাতে নিয়েছেন তিনি।
সচেতন মহলের দাবী পুলিশ কনস্টেবল ১বছরের বেশি একটি থানায় থাকার নিয়ম না থাকলেও বকশি হক অত্যান্ত সু-কৌশলে ডিও বাড়িয়ে এই থানায় ৩ বছর রয়েছেন। তিনি কি মধু পেয়েছেন শৈলকুপা থানায়? এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে।
তার এসকল অপকর্ম ও লাগামহীন দূর্নীতির কারনে পুলিশ প্রশাসনের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।এদিকে অভিযুক্ত শৈলকুপা থানার বকশি আব্দুল হক সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।শৈলকুপা থানার বকশি দূর্নীতিবাজ আব্দুল হকের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগিরা।