কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রাম জেলখানায় ভারতের ৭ নাগরিক বন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে ৬ জনের সাজার মেয়াদ শেষ হলেও দীর্ঘদিনেও মুক্তি মিলছে না জেলখানা থেকে। দুই দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ না থাকায় বিনাবিচারে টানতে হচ্ছে জেলের ঘানি।
কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এসব ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর বিচারের মুখোমুখি হয়। আদালতের বিচারক তাদের বিভিন্ন মেয়াদের সাজা প্রদান করেন। ইতোমধ্যে ৬ জনের সাজার মেয়াদ শেষ হলেও ভিন্ন দেশের নাগরিক হওয়ায় আসামি হস্তান্তরের জটিলতায় মুক্তি পায়নি।
তিনি বলেন, দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হতে পারে। তাদের মুক্তি পাওয়া একটি মানবিক অধিকার। এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কোনো রাষ্ট্রের নেই।
আদালত সূত্রে এবং অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের ধুবরী জেলার মাইনকারচর হাট সিংমারী এলাকার পুরান কানাই গ্রামের মৃত নুর ইসলাম শেখের পুত্র জলিল মিয়া ওরফে সমেজ করোনার সময় ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর রৌমারী সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করলে গ্রেফতার হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। কুড়িগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪র্থ আদালতের বিচারক ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের দণ্ড প্রদান করেন। গত বছর ৩ জানুয়ারি তার সে সাজার মেয়াদ শেষ হয়। সে হিসাবে সাজা খাটা শেষ হলেও এক বছর তিন মাসের বেশি সময় ধরে বিনাবিচারে জেলহাজতে বন্দি রয়েছেন। একই দিন একই অপরাধে গ্রেফতার হয়ে একই সাজা ভোগের পরেও নিজ দেশে ফিরতে পারেননি ভারতের ধুবরী জেলার কানাইমারা গ্রামের সানোয়ার হোসেনের পুত্র শাহআলম শেখ ওরফে শাহালম ও একই গ্রামের আখের জামানের পুত্র জাহাঙ্গীর আলম। তারা দুজনও বিনা বিচারে জেলহাজতে বন্দি আছেন ১৫ মাস।
একইভাবে রৌমারী সীমান্তে গত বছর ১৬ মার্চ গ্রেফতার হন ধুবরী জেলার কানাইমারা গ্রামের ছুরুদ আলীর পুত্র নুরুজ্জামান। বিচারক ২ মাস ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। অভিযুক্ত আসামি জরিমানার টাকা পরিশোধও করেন। সাজার মেয়াদ শেষ হয় গত বছর ৩০ মে। এরপরও তার মুক্তি মেলেনি গত ১০ মাসেও।
রৌমারী থানায় গত বছর ২ এপ্রিল গ্রেফতার দেখানো হয় গোলজার হোসেন ও তৈয়ব আলীকে। তাদের দুজনের বাড়ি ভারতের ধুবরী জেলার দক্ষিণ শালমারার দ্বীপচর গ্রামে। গোলজার হোসেনের পিতার নাম সমশের আলী আর তৈয়ব আলীর পিতার নাম আকবর আলী। আদালত দুজনকে ১০ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১০ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়। সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছর ৯ জানুয়ারি। প্রায় তিন মাস থেকে তারা বিনাবিচারে কারাভোগ করছেন।
কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হয়নি হারেছ আলী বাবুর। তার বাড়ি ভারতের ধুবরী জেলার সুখচর নিলক্ষীরা পাটুয়া গ্রামে। পিতা অলি জামাল শেখ। উলিপুর থানায় মাদক মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয় গত বছর ১৮ অক্টোবর। আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়ায় বিচারক এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। তার কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছর ১ নভেম্বর। তার ভাগ্যেও দণ্ড ভোগ শেষে বাড়ি ফেরা হবে কিনা- এ নিয়ে সংশয় রয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারের জেলার মো. ইসমাইল হোসেন জটিলতার কথা স্বীকার করে জানান, বিষয়গুলো সময় মতো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেছে। সে মোতাবেক বিজিবির রংপুর সেক্টর কমান্ডারকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো অনুমোদন মেলেনি ভারতীয় হাই কমিশনের। তারা তথ্য যাচাই বাছাই করছেন। কাজেই ভারতীয় পক্ষের ক্লিয়ারেন্স পেলে আমরা পুলিশ ও বিজিবির সহায়তায় লালমনিরহাট বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে হস্তান্তর করতে পারব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *