কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর মাহাবুব আলমকে জঙ্গি সন্দেহে সিঙ্গাপুরে আটক করে বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে তার পরিবার ও এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। মাহবুবের মা ছালেহা বেগম শোকে মুহৃমান হয়ে বিছানা নিয়েছে।

মাহবুবের স্ত্রী জান্নাতুন বেগম স্বামীর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কথা কল্পনাও করতে পারছে না। তার দাবী মাহবুব কোন রাজনীতিই করে না। শুধুমাত্র সংসারের স্বচ্ছলতা আনতে ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে সিঙ্গাপুরে কাজ করতে যায়। ২০০৯ সালে সিঙ্গাপুরে দুরারোগ্য ব্যাধীতে আক্রান্ত হয়। তার আরোগ্য কামনায় সে সময় পারিবারিকভাবে এলাকার মসজিদে মিলাদ ও বাড়ীতে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এ খবর জেনে মাহবুব প্রতিজ্ঞা করে সুস্থ্য হলে নামাজ আদায় ও ধর্মের অনুশাসন মেনে চলবে। সুস্থ্য হয়ে ২০১০ সালের এপ্রিলে দেশে ফিরে দাঁড়ি রাখে এবং নামাজ পড়া শুরু করে। । স্ত্রীকেও পর্দাসীন করে। কিছুদিন বাড়ীতে ছুটি কেটে নভেম্বরে পুনরায় সিঙ্গাপুরে যায়। ২০১২ সালের নভেম্বরে ফিরে আসে এবং ২০১৩ সালের আগস্টে আবারও সিঙ্গাপুরে যায়। মাহবুবের স্ত্রী আরো জানায়, ২০১৫ সালের ১৭ নভেম্বর তার স্বামীর সাথে কথা হলে সে জানায় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে সে দেশে ফিরবে। ২১ ডিসেম্বর বিভিন্ন পত্রিকার প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে তার আটকের কথা জানতে পারে । গত ৫ জানুয়ারী কাশিমপুর কারাগারে তার দেখা করলে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। মাহবুব জানায় জিহাদী সম্পৃক্ততার সন্দেহে তাকে আটক করা হয়েছে। এ খবরে তার মা ছালেহা বেগম স্ট্রোকে পঙ্গুত্ব বরণ করে বিছানা নিয়েছে।

বাবা রুহুল আমিন দাফাদার জানায় মাহবুব বাড়ীতে থাকা অবস্থায় কোন খারাপ কাজের সাথে জড়িত ছিল না । মাহাবুবের শ্বশুর পৌরসভার বাগডাঙ্গা হাতীর ভিটা গ্রামের জোনাব আলী বলেন ২০০৬ সালের ১৮ আগষ্টে মেয়ের বিয়ে দেয়ার পর থেকে আমি জামাইয়ের মধ্যে এ ধরনের কোন কিছু দেখিনি। সে ভাল ছেলে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরে। বাড়ীতে আসলে আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করে। কোন বাজে আড্ডা দিত না। ঘটনা শোনার পর আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে।

পাশ্ববর্তী ইছাহাক আলী জানায় মাহাবুব এর পিতা রুহুল আমিন নেওয়াশী ইউনিয়ন পরিষদের দাফাদার। পরিবারে দুই ভাই তিন বোন। সবাই বিবাহিত। বড় ভাই আব্দুর সোবাহান কৃষক।

মাহাবুব আলমের প্রতিবেশী নাগেশ্বরী কলেজের পিয়ন আব্দুল কাইউম, সাইকেল মেকার তোজাম্মেল হোসেন ও মুরগীর ব্যবসায়ী হাসান জানায় মাহবুব ভাল ছেলে। মাহবুব জঙ্গি এটা আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়।

রুহুল আমিন ও ছালেহা বেগমের পুত্র মাহবুব আলম ২০০২ সালে নাগেশ্বরী ডিএম একাডেমি থেকে এসএসসি পাশ করে নাগেশ্বরী টেকনিক্যাল কলেজে কারিগরী শাখায় ভর্তি হলেও আর্থিক কারনে আর পড়ালেখা হয়নি। ২০০৬ এ বিয়ে করে ২০০৮ সালে প্রথমবারের মত সে সিঙ্গাপুরে যায়। রংপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে ৩ জুলাই ২০০৫ ইস্যুকৃত তার পাসপোর্ট নং ঢ ০৪১৭৩১৫। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর সরকার মাহবুব আলমসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ২২ জনকে জঙ্গী সম্পৃক্ততার সন্দেহে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ (দক্ষিণ) বিভাগ লালবাগ জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে জঙ্গি সদস্য ও অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সংগঠিত ও প্ররোচিত করার অপরাধে সে সহ ১৪ জনের নামে ঢাকা ডিএমপি উত্তর পুর্ব থানায় একটি মামলা করে। মামলা নং ১১।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *