mail.google

আবুল আহসান রিমন বিয়ানীবাজারঃ
২০১০ সালে সারা দেশের ১০ টি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে সিলেট শির্ক্ষা বোর্ড। এরপর কয়েক বছর আর পিছনে তাকাতে হয়নি সিলেট শিক্ষা বোর্ডকে । কিন্তু এ বছর তার শিকল ভেঙ্গে সিলেট শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার চলে আসে সর্বনিম্নে ৬৮.৫৯ শতাংশে।

সিলেট শিক্ষা বোর্ডে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ফলাফল এটি। এবার সিলেটে পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যাও কমেছে। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ৫ বছরের প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষন করে এ সব তথ্য পাওয়া যায়।

সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ২০১২ সালে পাসের হার ছিল ৮৫.৩৭।\ ওই বছর ৩৭ হাজার ৩৭২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩১ হাজার ৯০৩ জন শিক্ষার্থী পাস করে। জিপিএ-৫ পায় ২ হাজার ৬৫ জন।

২০১৩ সালে সিলেট বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৯.১৩।
সে বছর ৪২ হাজার ৯৮০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করে ৩৪ হাজার ৯ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৫৩৫ জন। সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ২০১৪ সালে পাসের হার ছিল ৭৯.১৬। ওই বছর ৫৭ হাজার ৫৬১ জন পরীক্ষার্থী মধ্যে পাস করে ৪৫ হাজার ৫৬৮ জন। জিপিএ-৫ পায় ২ হাজার ৭০ জন শিক্ষার্থী।

গত বছর তথা ২০১৫ সালে সিলেট বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৪.৫৭।
সে বছর ৫৭ হাজার ৭০২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ৪৩ হাজার ২৮ জন। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৩৫৬ জন। কিন্তু এবার ৬৩ হাজার ৯৫৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৪৩ হাজার ৮৭০ জন। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩৩০ জন।

এই ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে সিলেট শিক্ষা বোর্ডে এবারই পাসের হার সর্বনিম্ন। এছাড়া জিপিএ-৫ এর সংখ্যাও গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন হয়েছে এবার।

পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে নতুন যুক্ত ৬টি সৃজনশীল বিষয় এবং ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যর্থতাকে দায়ী করছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। এ বছর এইচ এস সি পরিক্ষায় সর্বমোট ২০ হাজার ৬৭ জন অকৃতকার্য হয় তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি অকৃতকার্য হয় ইংরেজিতে ১২ হাজার ৮ শত ৪৬ জন, আইসিটিতে ৩ হাজার ৬ শত ৮৭ জন, বাংলায় ৩ হাজার ৩ শত ২৪ জন, যুক্তি বিদ্যায় ২ হাজার ৫ শত ৭৪ জন, এবং অর্থনীতিতে ১ হাজার ৪ শত ১১ জন শিক্ষার্থী ।

তা ছাড়া গত বছর সিলেটের ১৩টি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাস করলেও এবার তা অনেকটা কমেছে। এ বছর মাত্র ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের ফলাফলে শতভাগ ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- সিলেট ক্যাডেট কলেজ, জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইমেন্স মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভাতরাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও খাজাঞ্ছিবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

সিলেটের প্রবীণ ইংরেজি শিক্ষক এমসি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল হায়াতুল ইসলাম আকঞ্জি বলেন, ইংরেজিতে যারা অনার্স করে তারা আসলে শিক্ষকতা করতে আসে না এবং তাদের শিক্ষকতা করার মন মানুষিকতা নেই তা ছাড়া সিলেট মহানগর সহ সমগ্র সিলেট বিভাগের অনেক কলেজে ইংরেজির প্রভাষক নেই এবং যারা আছে তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষন নেই। তাছাড়া সিলেটের অনেক কলেজে ইংরেজি পড়ানো হচ্ছে অন্য প্রভাষকদের দিয়ে। এ সমস্যা যদি দ্রুত দূর করা না যায় তা হলে হুমকির মূখে পড়তে পারে সিলেটের শিক্ষা ব্যবস্থা বলে ব্যক্ত করেন প্রফেসর হায়াতুল ইসলাম আকঞ্জি।

সিলেট এম সি কলেজের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের মাষ্টার ট্রেইনার প্রফেসর শেখ মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, সিলেটে আইসিটি শিক্ষকদের খুব সংকট। ইন্টারমিডিয়েটে কম্পিউটার এর উপর যে বিষয় গুলি রয়েছে তা সৃজনশীল এবং খুব কঠিন, এবং আইসিটির এই সকল বিষয় পাঠদান দিতে দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন হয় কিন্তু আমাদের সিলেটে তা নেই আর এই সমস্যা দূর করতে গেলে শিক্ষক দের প্রশিক্ষন দিতে হবে।

এ বিষয়ে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম গোলাম কিবরিয়া চৌধুুুরী সাংবাদিকদেরকে বলেন, সৃজনশীল বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা ভালো করতে পারেনি। বিশেষ করে ইংরেজি বাংলা ও আইসিটি বিষয়ে ভালো করতে না পারায় উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পাশের হার কমেছে এবং তার সাথে কমেছে শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। এইচএসসি পরীক্ষায় ইংরেজি, আইসিটি এবং বাংলায় বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ার কারনে সব সূচকেই পিছিয়েছে সিলেট শিক্ষাবোর্ড কারন হিসেবে চেয়ারম্যান বলেন, সিলেট বোর্ডের অধীনস্থ ২৪৬ টি কলেজের অনেকটিতে ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের পর্যাপ্ত প্রভাষক নেই এবং সব ছেয়ে বেশি পরিক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে পল্লি এলাকার কলেজ গুলি প্রভাষক সংকট এবং অকৃতকার্য হওয়ার সমস্য দূর করতে অন্তত দুই বছর সময় লাগবে বলে জানান সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।

আবুল আহসান রিমন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *