এস, কে সাহেদ, লালমনিরহাট।

আশার বাণী লাল ফিতায় বন্ধি’র ৩৬ বছর পেরিয়ে ৩৭ বছর হলেও চালু হয়নি লালমনিরহাটের মোগলহাট স্থলবন্দর। স্থলবন্দরটি চালু হলে বদলে যাবে জেলার অর্থনীতি। কর্মসংস্থান হবে হাজার হাজার বেকার মানুষের।

জানা গেছে, লালমনিরহাট শহর থেকে ১০ কিঃমিঃ দূরে মোগলহাট। শহরের সঙ্গে মোগলহাটের সড়ক যোগাযোগ খুবই উন্নত। এক সময় ট্রেন যোগাযোগও ছিল, কিন্তু এখন তা বন্ধ। মোগলহাট থেকে ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার গিতালদহের দূরত্ব প্রায় ৩ কিঃমিঃ। মোগলহাট ও গিতালদহ রুটের মাঝখানে অবস্থিত ধরলা নদী। এক সময় মোগলহাটে ছিল স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেক পোস্ট। মোগলহাট গিতালদহ রুটে নিয়মিত পণ্য আমদানি রপ্তানি হতো এবং পাসপোর্টধারী যাত্রীরা চলাচল করতো। এখনও ১১৭ শতাংশ জমির ওপর স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্মিত স্থাপনা কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পূর্নরায় চালুর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন।

১৯৮৮ সালে’র ভয়াবহ বন্যার কারণে মোগলহাট গিতালদহ রুটে ধরলা নদীর ওপর সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে করে বন্ধ হয়ে যায় স্থলবন্দরের সকল কার্যক্রম। তবে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কার্যক্রম ২০০২ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। জেলায় বুড়িমারী স্থলবন্দর থাকলেও সেটি শহর থেকে ১০০ কিঃ মিঃ দূরে। দূরত্বের কারণে এখানকার ব্যবসায়ীরা বেশি সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভূটান চারদেশীয় ব্যবসায়ীদের সভা অনুষ্ঠিত হয় ভারতের কলকাতা ও শিলিগুড়িতে। এতে মোগলহাট গিতালদহ রুটে স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুর্নরায় চালুর বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এই স্থলবন্দর পুর্নরায় চালু হলে ভারতের সাতটি অঙ্গরাজ্য’র সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এতে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় লোকজনের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে।

১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলার নির্বাচনী জনসভায় বলেছিলেন, বন্ধ থাকা মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টটি পুর্নরায় চালু করা হবে। একই বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মোগলহাটকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে ভারত থেকে সব ধরনের মালামাল স্থলশুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে আনা নেওয়ার অনুমতিও দেয়। ২০১৭ সালের মে মাসে ঢাকা সোনারগাঁ হোটেলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিজনেজ ফোরামের সভায় মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুর্নরায় চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়। ব্যবসায়ীদের আলোচনা ও দাবির প্রেক্ষিতে মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালুর জন্য ২০১৭ সালের জুন মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে পত্র দেন লালমনিরহাট সদর-৩ আসনের এমপি জিএম কাদের।

লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মোরল হুমায়ুন কবির বলেন, মোগলহাট স্থলবন্দরটি চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে মাত্র। ব্রিটিশ আমল থেকেই মোগলহাট স্থলবন্দরটি চলমান থাকায় ভারতের কলকাতার সহজ যোগাযোগ মাধ্যম ছিল। এটি বন্ধ থাকায় এখানকার লোকজনকে প্রায় ৪ শত কিঃমিঃ ঘুরে কলকাতায় যেতে হচ্ছে। স্থলবন্দর চালু হলে এতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। ফলে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হবেন, ঠিক তেমনি সরকারও রাজস্ব পাবে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ সাংবাদিকের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় বলেন, মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুর্নরায় চালু করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ চলছে। এ স্থলবন্দরে অনেক অবকাঠামো রয়েছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, ধরলা নদীর ওপর ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি সংষ্কার অথবা নতুন করে ব্রিজ নির্মাণ করা হলে বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। বন্দরটি চালু করতে আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *