ফারহানা আক্তার, জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ

প্রায় ৯ বছর পর জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রী-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৩ শে মার্চ ক্ষেতলাল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে সাম্ভব্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর কেন্দ্রীয়, জেলা ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। দলের ত্যাগী, পরিক্ষিত ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চাচ্ছেন তৃণমূলের নেতাকমর্ীরা। স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাওয়া প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমেই যোগ্য ব্যক্তিরা নেতা নির্বাচিত হোক।
দলীয় সূত্র ও সরেজমিনে জানা গেছে, ২০১৩ সালে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রী-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে সভাপতি পদে দু’জন প্রাথর্ী ছিলেন। সমোঝতার ভিত্তিতে খলিলুর রহমানকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সিরাজুল ইসলাম সরদার নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠণ ও দলীও আভ্যন্তরিন কন্দোলকে কেন্দ্র করে পর্যায়ক্রমে তিনটি গ্রুপের তিনটি কমিটির তালিকা জেলা আওয়ামী লীগকে অনুমোদনের জন্য দিলে খলিলুর রহমানকে সভাপতি ও সিরাজুল ইসলাম সরদারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৭ সদস্যের ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি কমিটি ২০১৩ সালের ২৭ শে সেপ্টেম্বর তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক চুরান্ত অনুমোদন দেন। পরে ২০১৭ সালে খলিলুর রহমান মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে জেষ্ঠ্য ছিলেন উক্ত কমিটির সহ-সভাপতি তাইফুল ইসলাম তালুকদার ও নুরুল ইসলাম খান। এরপর ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর হিসেবে তাইফুল ইসলাম তালুকদার অংশগ্রহণ করলে তাকে দলীও শৃংঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করা হয় বলে জানা গেছে। পরবর্তিতে নুরুল ইসলাম খানকে ব্যতিরেখে সাংগঠনিক দক্ষতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন ৩নং সহ-সভাপতি আব্দুল মজিদ মোল্লা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষ্যে আগামী ১২ ই মার্চ বর্ধিতসভা অনুষ্ঠিত হবে।
২০২২ সালের ২৩ শে মার্চ এ সম্মেলনকে ঘিরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৮ জন সাম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। জানা যায়, সভাপতি প্রার্থীদের মধ্যে, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয় ও এগিয়ে আছেন দুঃসময়ের ত্যাগী, কমর্ী বান্ধব ও পরিক্ষিত নেতা বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল মজিদ মোল্লা। সভাপতি পদে বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেতা হিসেবে মোফাজ্জল হোসেনের নামও শোনা যাচ্ছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর হিসেবে নির্বার্চনে পরাজিত সহ-সভাপতি তাইফুল ইসলাম তালুকদার ও তার ভাতিজা আলমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার নাদিম তাদের পরিবারের দীর্ঘদিনের রাজনিতির জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সভাপতি পদপ্রার্থীর হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। সভাপতি পদে দুলাল মিয়া সরদারেরও জনশ্রুতি পাওয়া যায়। তিনি বলেন নেতাদের সিগনাল পেলে তবেই তিনি সভাপতি প্রার্থী হবেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে ক্লিন ইমেজের তরুণ নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ইতিমধ্যে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাকিম মন্ডল। এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সিরাজুল ইসলাম বুলু তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে দৌড়-ঝাঁপ করে বেড়ালেও তাকে নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে পূর্বের্ অন্য দলের রাজনিতি করা নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া শোনা গেছে। অন্য দলের রাজনীতি কোনো দিনই করেননি যারা বলছেন তারা মিথ্যা বলছেন, আমি ছাত্রলীগ যুবলীগ থেকেই আওয়ামীলীগের রাজনীতি করছি বলেন, মেয়র বুলু। অপরদিকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম মোস্তফা সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর হিসেবে নেতাকর্মী কাছে গণসংযোগ করছেন। জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল হান্নান মিঠু আওয়ামী লীগের রাজনিতিতে ২০০৮ সালের আগে সক্রিয় না থাকলেও তিনিও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সরদার সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক কোন পদে প্রার্থী হবেন তার সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য দেননি তিনি।
ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের এ সম্মেলনে ২৫৩ জন কাউন্সিলরের ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হোক বলে দাবী জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা চান সিলেকশনে নয়, কাউন্সিলরদের ভোটেই তাদের নেতা নির্বাচিত হোক।
ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সরদার বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর হওয়ায় তাইফুল ইসলাম তালুকদারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক কোন পদের প্রার্থী তা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে হাউজ থেকে নেতাকর্মীরা প্রস্তাব বা সমর্থন করলে তথন দেখা যাবে।
বহিষ্কারের বিষয়ে তাইফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, মুখের কথায় বহিষ্কার করলে তো হবেনা। আমাকে বহিষ্কারের ব্যাপারে কোন লিখিত নোটিশ বা বহিষ্কারাদেশ পাইনি। সুতরাং আমি এখন পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের ০১ নং সহ-সভাপতি ও সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী আমিই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি থাকার কথা।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডল বলেন, ২৩ ই মার্চ ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন উপলক্ষে বর্ধিত সভার মাধ্যমে ৩ টি কমিটির যাচাই বাচায় করে স্বচ্ছ ভাবে কাউন্সিলার তালিকা উন্মুক্ত করে দিয়ে আলোচনা মাধ্যমে অথবা কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিবার্চিত করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *