ফারহানা আক্তার, জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল পৌর এলাকার তিলাবদুল সাখিদারপাড়া মহল্লার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান মিঠুর একমাত্র ছেলে, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র মাহবুব হোসেন আদর (২২) নামের এক যুবকের লাশ গত বৃহস্পতিবার সকালে কুষ্টিয়ার ঈশ্বরদী পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হতে উদ্ধার করে পোড়াদহ রেলওয়ে পুলিশ। প্রাথমিক ধারনা ছিলো হার্ডিঞ্জ ব্রিজের রেলিং এর সাথে ধাক্কা লেগে ছিকটে পরে এই মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ১১ টার সময় ক্ষেতলাল পৌর এলাকার তিলাবদুল সাখিদার পাড়া মহল্লায় নিহত মাহবুবের নিজ বাড়িতে জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তুু নিহত মাহবুব এর পরিবার ও স্বজনদের দাবি এটি দুর্ঘটনাজনিত কোন মৃত্যু নয় বরং একটি পরিকল্পিত হত্যা কান্ড।
জানা গেছে, নিহত মাহবুব হোসেন আদর (২২) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলো। সে ওই বিশ্ব বিদ্যালয়ের হাজী মহাম্মদ মুহসীন হলে থেকে পড়াশোনা করতো। রাতে ট্রেনের ছাদে ঢাকা হতে কুষ্টিয়া লালন শাহ’র মেলায় যাবার পথে ১৭ই মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে ঈশ্বরদীর পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হতে তার লাশ উদ্ধার করেছে পোড়াদহ রেলওয়ে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হয়েছিলো, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের রেলিং এর সাথে ধাক্কা লেগে ছিকটে পরে এই মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর তথ্যটি নিশ্চিত করে পোড়াদহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্চেরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টার দিকে খবর পেয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করি। লাশের মাথার পিছনে গভীর আঘাতের চিহ্ন আছে। ময়না তদন্তের পর মৃত্যু কারন জানা যাবে। এমন ঘটনা তুলে ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক প্রিন্ট, ইলেকট্রিক মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।
১৮ই (মার্চ) শুক্রবার সরোজমিনে পরিবার ও স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, নিহত ওই ঢাবি ছাত্র গত ১৬ই মার্চ বুধবার রাত আনুমানিক ৯ ঘটিকার সময় পরিবারে তার মাকে ফোন করে বলে আমি ট্রেন যোগে কুষ্টিয়ার লালন শাহ’র মেলায় ঘুরতে যাচ্ছি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপরে আছি। কিন্তুু কার সঙ্গে ঘুরতে যাচ্ছে সেখানে সেই বিষয়ে কিছু বলেনি, এ বিষয়ে মা তার কাছে জানতে চাইলে উত্তরে সে বলে অপরিচিত একজনের সাথে যাচ্ছি কয়েক দিনের পরিচিত আপনি চিনবেন না। মা ওই ব্যক্তির নাম জানতে চাইলে সে বলে নাম বললেও আপনি চিনবেন না অপরিচিত। তখন মা আর প্রশ্ন না করে বলে তাহলে সাবধানে যাও। পরে রাত ১২ ঘটিকার সময় ছেলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পায় তার মা। তারপর থেকেই ছেলের সাথে আর কোন যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি।
পরদিন ১৭ই মার্চ বুধবার সকাল আনুমানিক ১০.৩০ এর সময় ছেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারে পরিবার। খবর পেয়ে তারা কুষ্টিয়ায় গিয়ে নিহত সন্তানের লাশ নিয়ে বাসায় আসে। ছেলের এই অকাল মৃত্যুতে পরিবার, আত্নীয়স্বজন সহ এলাকায় যেন শোকের ছায়া বিরাজ করছিলো। শুক্রবার বেলা ১১ টার সময় ক্ষেতলাল পৌর এলাকার তিলাবদুল সাখিদার পাড়া মহল্লায় নিহত মাহবুবের নিজ বাড়িতে জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত জানাযায় জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান রকেট ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন উপস্থিত বক্তব্য রাখেন এবং নিহতের এই অকাল মৃত্যুতে গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেন। এছাড়াও জেলা, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ আশপাশের গ্রাম, পাড়া, মহল্লা হতে ছুটে আসা হাজারো জনতার ঢল লক্ষ্য করা গেছে নিহতের জানাযায়। আরো লক্ষ্য করা যায় নিহত মাহবুবের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ওই বিশ্ব বিদ্যালয়ের হাজী মহাম্মদ মুহসীন হলে থেকে ২০ সদস্যের একটি টিম ও উপস্থিত ছিলো ওই জানাযায়।
জানাযা নামার শেষে, পৌর এলাকার কামারগাড়ী সাখিদার পাড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।
অপরদিকে মৃত্যুই ওই রাতেই আনুমানিক রাত ৩ ঘটিকার সময়, মাহবুব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ফেইসবুক পেইজে একটা পোস্ট করে যেখানে ইংরেজিতে লেখা ছিলো ( OFF TO KUSTA) এবং বাংলায় লেখা ছিলো (কঠিন তবুও আনন্দঘন, মাঝপথে জুটেছিলো অপরিচিত সঙ্গি) মৃত্যুর পূর্বে কেন সে এমন পোস্ট করেছিলো, কি বুঝাইতে চেয়েছিলো, না কি সে কোন কঠিন চাপের মুখে পড়েছিলো। এই কয়েকটি ছোট ওয়ার্ডের এমন ফেসবুক পোস্টটির যেন বিশাল ব্যক্ষা,
মৃত্যু পূর্বে নিহত মাহবুবের ওই ফেসবুক পোস্ট পরিবার, আত্নীয় স্বজন সহ এলাকার জনমনে যেন বিভিন্ন প্রশ্নের সৃষ্টি করছে, কে ছিলো ওই অপরিচিত ব্যক্তি, কি তার পরিচয়, যদি হার্ডিঞ্জ ব্রিজের রেলিং এর সাথে ধাক্কা লেগে ছিকটে পরে এই মৃত্যু হয় তাহলে তো দুজনাই হবার কথা কিন্তু পুলিশ একজনের লাশ উদ্ধার করেছে তাহলে অপরজনের বর্তমান অবস্থান কোথায়? ওই ফেসবুক পোস্ট এবং নিহতের মাথার পিছনে বড় ধরনের ক্ষত দেখেই জনমনে এমন হাজারো প্রশ্ন উঠে এসেছে। তাই নিহতের পরিবার, আত্নীয় স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি এটি দূর্ঘটনা জনিত মৃত্যু নয় বরং পরিকল্পিত হত্যা কান্ড। তারা ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচার দাবি করেন।

এ বিষয়ে নিহতের বাবা আব্দুল হান্না মিঠু সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমার ছেলের এই মৃত্যু দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু নয়, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারন আমার ছেলের মাথার পিছনে আমি যে কাটা দাগ দেখেছি তা নিশ্চিত কোন ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করা। তাছাড়া আমার ছেলে যদি ট্রেন থেকে পড়ে যেতো তাহলে তার শরিরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত থাকতো। কিন্তু শরিরের কোথাও কোন ক্ষত ছিলো না। তাই আমার কাছে মনে হচ্ছে আমার ছেলে কে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমার ছেলেকে হত্যার পিছনে দুইটি কারন থাকতে পারে এক আমার রাজনৈতিক কারন অথবা কোন মেয়ে ঘটিত বিষয়। তাই আমি প্রশাসনের নিকট ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচার দাবি করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *