মনজুরুল ইসলাম এশিয়ান বাংলা নিউজ

১০ এপ্রিল মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি থানায় স্থাপিত নারী,শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক এবং গৃহহীন পরিবারের জন্য নির্মিত গৃহ হস্তান্তর এর শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে একথা বলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক
গৃহীত দুটি মানবিক ও সেবাধর্মী উদ্যোগ এর শুভ উদ্বোধন করে এসময় তিনি বলেন, গৃহহারা মানুষকে গৃহ দিয়ে তার ঠিকানা করে দেওয়া; এর চাইতে মহৎ কাজ আর কিছুই হতে পারে না।
বাংলাদেশ পুলিশের এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। এ
দেশের উন্নয়নে বাংলাদেশ পুলিশের অবদান ও ভূমিকা অনেক বেশি। অকুতােভয় পুলিশ বাহিনী ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানি হানাদারের বিরুদ্ধে প্রথম বুলেট ছুঁড়ে প্রতিরােধ গড়ে তুলেছিল। দেশের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নের  ন্যায় করােনা  মহামারীতেও পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। আমাদের পুলিশ বাহিনি মানবিক কাজগুলাে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে করে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা সব সময়ই বলতেন বাংলাদেশের পুলিশ হবে জনগণের পুলিশ। আর আজকের বাংলাদেশ পুলিশ জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে  জনগণের পুলিশ হিসেবেই মানুষের আস্থা ও ভালবাসা অর্জন
করেছে। এই ডেস্ক স্থাপনের মাধ্যমে তারা নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সুবিধাবঞ্চিত ভুক্তভোগীদের অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়ার সুযােগ তৈরি করে দিয়েছে এবং গৃহহীনদের ঠিকানা তৈরী করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানাের জন্য আমরা লিগ্যাল এইড স্থাপন করে দিয়েছি। সর্বস্তরের মানুষই যেন উন্নয়নের স্পর্শ পায় সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের একটি মানুষও ভূমিহীন, গৃহহীন, ঠিকানা বিহীন থাকবে না। এদেশের ভূমিহীন মানুষদের মাঝে ভূমি বন্টন এবং ঘর তৈরি করে দেওয়ার যে কাজটা জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, তা বাস্তবায়নের জন্য আমরা ক্ষমতায় এসে আশ্রয়ন প্রকল্প-১, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে আমরা জাতির পিতার সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছি। পুলিশকে দক্ষ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করতে ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। পুলিশের কাছে গেলে ন্যায্য বিচার পাওয়া যাবে এই আত্মবিশ্বাস যেন মানুষের মধ্যে তৈরি হয় সেভাবে পুলিশকে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে।

এসময় ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম-বার মহোদয় বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রখর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এক মহান রাষ্ট্রনায়ক। সাম্য, মুক্তি ও মানবতার এক প্রজ্বল বাতিঘর। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একান্তই জনগণ অন্তপ্রাণ। জনগণের ভালােবাসাই ছিল তার শক্তি।
বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের পুলিশে পরিণত হওয়ার জন্য অত্যন্ত আন্তরিক ভাবে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।  নিয়মিত পুলিশিং এর পাশাপাশি মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশ  দুটি মানবিক ও সেবাধর্মী উদ্যোগের অধীনে প্রথম পর্যায়ে ৪০০ জন গৃহহীন ও অসহায় নাগরিক কে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন পরিবেশ বান্ধব ও টেকসই বাড়ি করে দিচ্ছে। Institute of Appropriate Technology (IAT) BUET কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিটি বাড়ি নির্দিষ্ট মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীলতা এবং অগ্নি প্রতিরোধে সক্ষমতা রয়েছে।

নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী নাগরিকদের জন্য মানসম্মত ওয়ানস্টপ পুলিশি সেবা নিশ্চিত করতে দেশের প্রতিটি থানায় এই সার্ভিস ডেস্কটি স্থাপন করা হয়েছে। ২০২০ সালের শুরু থেকেই এই ডেস্কের কার্যক্রম পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু করা হয়। এই ডেস্কের আওতায় সারাদেশে এ পর্যন্ত ৩,৬৩,১৬৮ জন সেবা গ্রহীতাকে সেবা প্রদান করা হয়েছে এবং হচ্ছে। অর্থাৎ গড়ে প্রায় প্রতি মাসে ১৩,৯৬৮ জন সেবা গ্রহিতা, দৈনিক ৪৬৫ জন সেবা গ্রহিতাকে এই ডেস্ক থেকে সেবা গ্রহন করছে।

এই ডেস্ক সেবার পরিধিতে নতুন এক মাত্রা যােগ
করেছে। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত এই ডেস্কের
দায়িত্বপ্রাপ্ত নারি পুলিশ সদস্যগণ অত্যন্ত
সংবেদনশীলতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে
দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশ পুলিশ সরকার কর্তৃক গৃহীত উন্নয়নের মহা কর্মযজ্ঞের গৌরবময় অংশীদার হওয়ার লক্ষে নানা বিধ উদ্ভাবনী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনকল্যাণকর ও মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ তার প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে সক্ষম হবে।

উল্লেখ্য যে, ইতোমধ্যে যে ১১৪ জন গৃহহীন ব্যক্তি কে গৃহ হস্তান্তর করা হয়েছে তারা উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন,  স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আকতার হোসেন, সহ পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জ, মেট্রো ও অন্যান্য  ইউনিটের উর্ধতন কর্মকর্তা বৃন্দ।

এসময় কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ হতে জনাব সৈয়দা জান্নাত আরা, পুলিশ সুপার কুড়িগ্রাম এর   নেতৃত্বে জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা সহ সকল পুলিশ সদস্যগণ পুলিশ লাইন্স, কুড়িগ্রাম ড্রিল শেড থেকে উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের সকল ইউনিটের পাশাপাশি কুড়িগ্রাম জেলার সকল থানা একযোগে এই ভিডিও কনফারেন্সের সংযুক্ত হয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *