রফিকুল হায়দার
আশরাফে মখলুকাত,
ধরার মাঝে সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ আদম-জাত।
নধর সুন্দর সুরত জামাল ধরার বক্ষে সেরা,
সাম্য, মৈত্রী, জ্ঞান গরিমা, মায়া, মমতায় ঘেরা;
মহাগুনাধার সৃষ্টিপতির বহু গুণাবলী তাঁর,
লভিতে মানব সক্ষম বটে উদ্যোম আছে যাঁর,
সৃষ্টির আগে শুধান স্রষ্টা স্বরগীয় দূতগণে,
মম প্রতিনিধি সৃজন করিব নানা দায়িত্ব দানে,
নানা যুক্তির জাল বিস্তারিয়া নিষেধিল দূতগণ,
রুষিয়া কহেন, “ইন্নি আলা মোমালা তায়ালামুন”;
তোমরা কখনো নাহি জানো যাহা আমি জানি তাহা ভালো,
কোন কথা নয়, কহিল স্রষ্টা; দয়াপরবশে, আদমে সকলি দিল;
কানাকানি করে নিম্ন বদনে দূতগণ সবে মিলে,
খোদার ডরেতে কহেনা কিছুই, ঈর্ষা-অনলে জ্বলে;
হুকুম হইলো হে ফেরেস্তাগণ আদমে সিজদা করো,
লঙ্ঘিবে যদি এ আদেশ মম, অভিশাপ হবে বড়;
শুনে এ কঠোর বাণী,
তুষিল খোদারে ফেরেস্তা সকল আদমে সিজদা দানি;
বুঝো হে মানব! আল্লার নীচে তোমার আসনখানি,
আপন খুদিরে বরবাদ করি টানিছে তেলের ঘানি;
উপরে যে তব মহা সম্রাট, তুমি তার প্রতিনিধি,
এতিন ভূবন শাসিত তোমার মর্ত পাতাল আদি;
স্বর্গ মরতে নিরুপণ কভু হবে কি তোমার দাম?
তুচ্ছ ধরণী, আকাশ, বাতাস বলো তুমি কিসে কম?
দোযখ তোমার ইচ্ছা অধীন বেহেস্ত হাতের মুঠে,
দিন রাত সদা উহাদের মুখে ইহারই খৈ ফোটে;
অলসের মুখে বেহেস্তের বুলি ভিক্ষাজীবির পুঞ্জি,
নিজেরে জিগাও হাতে কি তোমার স্বর্গ-মর্ত্র কুঞ্জি?
কোনো প্রতিনিধি করে যদি তাঁর ক্ষমতার অপচয়,
দয়ালু মালিক ক্ষমিতে পারেন; অন্য কেহই নয়;
আঠারো হাজার সৃষ্ট জীবেরে দিল তব অধিকার,
তোমাদের সুখে ভরে রাখা আছে স্থলচর-জলচর;
চন্দ্র-সূরুজ দানিছে আলোক জলদ জোগায় জল,
জীব জগতের দুগ্ধ মাংস উদ্ভিদ দানে ফল;
একই মাটির রস আহরিয়া জন্মে বিবিধ ফুল,
বিবিধ শোভায় হাজারো গন্ধে প্রাণ করে বেয়াকুল;
তোমারি ভোগের সম্ভার দিয়া জগত ভরিল বিভু,
কত আদরের খলিফা আদম ভাবিয়া দেখেছো কভু?
কহেন আল্লা প্রেরণা জোগাতে, ভাঙ্গাতে গাফিলী নিঁদ,
রে বান্দা, “নাহনো আকরাবো মেন হাবলেল ওয়ারিদ”
“মেরুদন্ডের শিরা হতে আমি নিকটেই বটি তব”,
তোমার মাঝেতে আমার প্রকাশ যাচিলে পিরিতি দেব।
আনুগত্যতা, প্রেম অনুরাগে আনাল হকের বানী,
বলে যদি কেহ সত্য বিচারে দোষী হইবেনা জানি;
বিদ্রোহী সূরে করে যদি কেহ আনাল হকের দাবী,
খোদা দ্রোহীতায় বিফলতা তার ধ্বংস হবে যে সবি;
সাদ্দাদ, ফেরাউন,
লভিতে বিজয় বরবাদ হলো মিললো না কোন পূণ,
শুনহে মানব ভাই,
সবার উপর মানুষ শ্রেষ্ঠ তাহার উপরে নাই;
সেই মানুষ আজ কেমন করিয়া অন্যের সুখ কাড়ে,
ভাবেনা কখনো ফিরে যেতে হবে তাকে তাঁহারই দরবারে;
এ বিচার তাঁর খাতা কলমে নয়, হাকিম দেবেন রায়,
যা কিছু করেছো তার বিনিময়ে, যেতে হবে তোকে, অঙ্গুলী ইশারায়;
শুধু পুরাতন জাতি ও গোত্র, শিক্ষার অভিমান,
আধুনিকতায় বই কাঁধে ঝোলে, আশানুরুপ হয়না জ্ঞান।