হুমায়ুন কবির সূর্য্য, কুড়িগ্রাম :
আবারো কলকাকলীতে ভরে উঠবে কুড়িগ্রাম রেল স্টেশনের নাতিদীর্ঘ প্লাটফরম। কুলি কুলি বলে হাঁক ছেড়ে ডাকবে সদ্য বগি থেকে নামা প্যাসেঞ্জাররা! পাশ দিয়ে ছুটে চলবে ফেরিওয়ালারা। চিৎকার করে বলবে, লাগবে বাদাম-চানাচুর-বাদাম!
কুড়িগ্রামে আন্তনগর ট্রেন চালু হওয়ার ঘোষনায় ঈদের আনন্দ যেন বিরাজ করছে গোটা স্টেশন চত্বর জুড়ে। হাজার হাজার মানুষের কলকাকলীতে ভরে উঠেছিল স্টেশন প্লাটফরমের ভিতর ও বাহির। মিছিলে মিছিলে আনন্দ আর উৎসবে মানুষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ঘোষনায় আপ্লুত হয়ে উঠেছিল সবাই।
সারাদিন এই আনন্দ-উৎসব শেষে এক সময় নিস্তব্ধ হয়ে যায় গোটা চত্বর। স্টেশনের কোনে বসেছিলেন বয়োজেষ্ঠ্য আবুল কাশেম। সাংবাদিক শুনে এগিয়ে আসলেন তিনি। বললেন, ভাইরে এক সময় কাজ করি তাল পাই নাই। যখন স্টেশনে ট্রেন আসি থামে! তখন ব্যাগ-পত্বর নিয়া প্যাসেজ্ঞারের ছোটাছুটি আর খালাসীদের হৈ-চৈয়ে মনটা ভরি যাইত । ট্রেন আসা মানেই কাজ। আর কাজ মানেই দুটো পয়সা রোজগার। কত লোক এই স্টেশনে কুলিগিরি, খালাসীর কাজ করি পরিবার বাঁচাইছে। এখন তাদের মধ্যে ৪/৫জন মারা গেছে। আজকের এই দিনটি দেখতে পেলে তারা হয়তো খুব খুশি হত।
পরে কথা বলে জানা গেল আবুল কাশেম এই স্টেশনের লেবার সর্দার। মাঝখানে কাজ না থাকায় তিনি সদর উপজেলার সার গোডাউনে সর্দার হিসেবে কাজে যুক্ত হন। এখন আন্তনগর ট্রেন চালু হওয়ায় পুরনো লেবাররা তার কাছে আবার কাজের জন্য ছুটে এসেছেন। ট্রেনের আগমনে আবারো কোলাহলে মুখরিত হবে কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এটাই চাইছেন তারা। ফলে আনন্দে বুক বেঁধে আছেন।
স্টেশন মাস্টার কাবিল উদ্দিন বেরুচ্ছিলেন। সারাদিনে বেশ ভীষণ ধকল গেছে তার। মুখটা শুকিয়ে গেছে। তিনি বললেন, আমার এখানে বর্তমানে ঘন্টা দেয়া ও লাইন ক্লিয়ারিং ড্রাইভারদে হাতে তুলে দেয়ার জন্য দুজন পোর্স্টাার আছেন। এছাড়াও শাল্টিং করার জন্য অপর দুজন ওয়াচম্যান রয়েছেন। এছাড়াও বুকিং সহকারিদের নিয়ে আমার এই ছোট্ট পরিবার।
তিনি চলে যেতে পোর্টার ছামসুল ও আদিত্য রায় জানালেন, এই ক্ষণটির জন্য আমরা অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছি। এবার যদি স্টেশনটা ভালমতো চালু হয়।
ওয়াচম্যান বাদশা আলম ও শফিকুল কবির জানান, এতদিন আমাদের তেমন কোন কাজ ছিল না। এখন আন্তনগর ট্রেনের কারণে প্যাসেঞ্জারের সংখ্যা বাড়বে। স্টেশনটি মুখরিত হবে। আমাদের খুব ভাল লাগবে।
সন্ধ্যের দিকে স্টেশনে এলেন সুদূর উলিপুর থেকে নাদিম আহমেদ। ততক্ষণে আন্তনগর ট্রেনটি ফিরে গেছে পার্বতীপুরে। তিনি অনেক আশা নিয়ে এসে ট্রেন দেখতে না পেলেও স্টেশন ঘুরে খুব খুশি হলেন। বললেন, আমার মেয়ে ঢাকায় লেখাপড়া করে। বাসে পাঠাতে খুব চিন্তা হয়। এখন এই ট্রেনটি আসাতে আমি খুব খুশি। পাশেই এক বৃদ্ধ জানালেন, হামরা বাবা ডায়াবেটিসের রোগী। বাসে যাতায়াত করবের পাই না। ঘন ঘন বাস থামাতে চায় না ড্রাইভাররা। এখন এই ট্রেন আরাম করি ঢাকাত যাবার পামো।
এমন অনেক আনন্দ-উত্তেজনার মধ্যে কুড়িগ্রামবাসীর জন্য একটি স্মরণীয় দিন কেটে গেল। লেবার সর্দার আবুল কাশেম আবার ফিরে এসেছেন স্টেশনে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগের আশায়। ওয়াচম্যান বাদশা আলম ভাবছেন, আর মরা মরা ভাব থাকবে না এই স্টেশনে। মানুষের আগমনে মুখরিত হবে গোটা স্টেশন এলাকা। পাশ দিয়ে ছুটে যাবে এই বাদাম! এই বাদাম! এই চা, এই চা বলে কর্মব্যস্ত কিশোরেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *