ফুলবাড়ী(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
ফাল্গুন চৈত্র নয় এখন সবেমাত্র কার্তিক মাস । আর এর মধ্যেই খরস্রোতা ধরলার গোটা বুক জুড়ে জেগে উঠেছে ধু ধু বালু চর । বর্ষায় যে ধরলা নদী দুকুল ছাপিয়ে তীরবর্তী লোকালয় প্লাবিত করে, ভাসিয়ে নিয়ে যায় ঘরবাড়ী ফসলের ক্ষেত। এখন সেই ধরলার বুক চিরে হেটে যাচ্ছে লোকজন, পাড় হচ্ছে গাড়ী-ঘোড়া। বুকে চর জেগে এক সময়ের প্রমত্তা ধরলা এখন যেন এক গতিহীন মৃতপ্রায় নালায় পরিনত হয়েছে।
জানা গেছে, সিকিমের ব্রিদাং হ্রদ থেকে উৎপত্তি হয়ে ভারতের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নদীটি প্রথমে বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলা দিয়ে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে পুর্বদিকে বাঁক নিয়ে লালমনিরহাট জেলার মোগলহাট এলাকা দিয়ে ধরলা নামে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রবেশ করে। প্রায় ৭৫ কিঃ মিঃ এলাকা অতিক্রম করে ছোট-বড় দুই শতাধিক চর সৃষ্টি করে নদীটি কুড়িগ্রাম জেলাধীন উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলিত হয়েছে। বন্যা ও ভাঙ্গন প্রবন এ নদী বর্ষাকালে দাপিয়ে বেড়ালেও শুস্ক মৌসুমে শুকিয়ে তৃষ্ণায় বুক ফাটিয়ে দেয়। ফলে চাষাবাদের পাশাপাশি নদী নির্ভর জনগোষ্ঠির জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে এবং বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছেরও আকাল পড়েছে।
সরেজমিনে শেখ হাসিনা ধরলা সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতু দিয়ে নয়, পায়ে হেঁটে নদী পাড় হচ্ছে স্থানীয় লোকজন। সড়ক পথে অনেক দুর ঘুরতে হয় তাই কাজ শেষে ঘোড়ার গাড়ী নিয়ে নদী পাড় হয়ে বাড়ী ফিরছে গাড়িয়ালরা।
নদী তীরবতর্ী সোনাইকাজী গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম, আব্দুল লতিফ জানান, ধরলা নদীর ধারে পলি মাটিতে লম্বা জাতের দেশী বোরো চাষ করে আগে নদীতীরবর্তী মানুষের ভাতের অভাব অনেকটা মিটতো। তাছাড়া শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তুলে তীরবর্তী অনেক কৃষক ইরি-বোরো ক্ষেতে সেচ দিত। কিন্তু কয়েক বছর থেকে নদী আগেই শুকিয়ে যায়। ফলে নদীতে বোরো চাষ করা বা সেচ দেওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না।
চর গোরক মন্ডল এলাকার জেলে হজরত আলী জানান, আমরা ধরলা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু নদীতে পানি না থাকায় এখন আর মাছ পাওয়া যায়না । ফলে ক্ষেত খামারে কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।
ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার বলেন, ধরলা নদীটি খনন করে এর গভীরতা বাড়ানো গেলে নদীটি তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। নদীটি খননের জন্য তিনি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।