ইশরাত জাহান চৌধুরী, মৌলভীবাজার ::
কমলগঞ্জে এক সাবেক জাসদ (ইনু) কর্মী বৃটিশ নাগরিককে জামাত শিবির নেতা সাজিয়ে হয়রানী করছেন কমলগঞ্জ থানার ওসি ও আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান। প্রাইভেট কার ক্রয়ের জন্য ২ লাখ টাকা না দেয়ায় ওসি বদরুল হাসানের হয়রানী এবং গত ইউপি নির্বাচনে সমর্থন না দেয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিমাতা সূলভ অচরণের শিকার উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নস্থিত কামুদপুর গ্রামের মৃত: নজির উদ্দিন আহমদের পুত্র, কামুদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, কামুদপুর আব্দুর রাজ্জাক জামে মসজিদ ও কামুদপুর নজিরউদ্দিন হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠিাতা, দক্ষিণ কামুদপুর জামে মসজিদের দাতা সদস্য, সাবেক জাসদ (ইনু) কর্মী বৃটিশ-বাংলাদেশী নজরুল ইসলাম ওরফে আব্দুল আহাদ নিরুপায় হয়ে গত ১লা সেপ্টেম্বর ওসির বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে প্রকাশ- ওসি (তদন্ত) হিসাবে বদরুল হাসান কমলগঞ্জ থানায় যোগদানের পর নজরুলের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন। নজরুল দেশে অবস্থানকালে সময়ে-অসময়ে ছুটে আসতেন তার কামুদপুরের বাড়িতে। নজরুলও তাকে আপ্যায়নসহ যথাযথ সম্মান ও সাধ্যমত সহযোগীতা করতেন। নিজ বাড়ীর ফল-ফসল ও খামারের গরুর দুধ প্রদান এবং তার দাবি অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যাপারে অর্থিক সহযোগীতা করেছেন প্রায় নিয়মিত। বদরুল হাসানের দাবির প্রেক্ষিতে নজরুল তাকে আইফোন-৬ ক্রয়ের জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা দেন। গত মে মাসে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বাড়ীতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য দাবীর প্রেক্ষিতে তিনি নগদ ২৫ হাজার টাকা দেন। গত রমজান মাসে থানার ইফতার পার্টির জন্য দাবীর প্রেক্ষিতে তিনি নগদ ১০ হাজার ও বদরুল হাসানকে ৫ হাজার টাকা দেন। সর্বশেষ, গত জুন মাসে এক পুত্রসহ ওসি বদরুল হাসান তার বাড়িতে আসেন এবং প্রাইভেট কার ক্রয়ের জন্য ২ লাখ টাকা দাবী করেন। এ ২ লাখ টাকা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করাই নজরুলের কাল হয়েছে। যাবার সময় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় ওসি বদরুল বলেন “তোমাকে আর কোনদিন লন্ডনে যেতে দেবনা। সে ব্যবস্থা আমি করব। টাকা তুমি কিভাবে দেবে তা আমার জানা আছে। ২ লাখ টাকা না দেয়ার কারণে কত ২ লাখ টাকা যে দেবে তা পরে বুঝবে”। এরপর গত ৩১ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টায় নজরুল তার নিজ বাড়ীতে কামুদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান, সহকারী শিক্ষক হারুনুর রশিদ, দুই মসজিদের ২ জন ইমাম ও ইউনুস মিয়ার সাথে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলাপরত অবস্থায় একদল পুলিশসহ এসআই জাহিদ ও এসআই মহসিন এসে আইন-শৃংখলা কমিটির সভার কথা বলে তাকে থানায় নিয়ে ২০১৫ সালের পুলিশ এসল্ট মামলার (নং- ০৯) সন্ধিগ্ন আসামী করে কোর্টে চালান দেন এবং চালান প্রতিবেদনে নজরুলকে ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের জামায়াতের ওয়ার্ড সেক্রেটারী বলে উল্লেখ করেন। ওই চালান প্রতিবেদনেই আবার বলা হয়েছে “বর্ণিত সন্ধিগ্ন আসামী মোঃ সেলিম উদ্দিন অত্র মামলার ঘটনার সহিত জড়িত আছে মর্মে বিশ্বস্থ সূত্রে তথ্যাদি পাওয়া যাইতেছে। ঘটনার পূর্বে উক্ত আসামীকে ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, ওসি বদরুল হাসান কামুদপুর জামে মসজিদের ভূমি নিয়ে নজরুলের সাথে বিরোধে লিপ্ত দক্ষিণ কামুদপুর গ্রামের মৃতঃ আব্দুর রহমানের পুত্র জাফর আলীকে দিয়ে ওই ৩১ জুলাইয়েই নজরুলের বিরুদ্ধে মারপিট ও সাড়ে ৪ হাজার টাকা চুরির মামলা দায়ের করিয়ে সাথে সাথে তা এফআইআর (নং- ২৯), এসআই জাহিদকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ এবং ওইদিনই গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে কোর্টে চালান দেন। অর্থাৎ পুলিশ এসল্ট এবং মারপিট ও চুরি- এ দুটি মামলার আসামী হিসাবে নজরুলকে একইদিনে গ্রেফতার ও কোর্টে চালান দেয়া হয়। এ মামলায় নজরুল ২৫ দিন কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হন।

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- ৬নং আলীনগর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের স্থায়ী নাগরিক সাবেক জাসদ (ইনু) কর্মী বৃটিশ-বাংলাদেশী নজরুলকে ২০১৫ সালের ৯নং পুলিশ এসল্ট মামলায় গ্রেফতার এবং ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের জামায়াতের ওয়ার্ড সেক্রেটারী উল্লেখে কোর্টে দাখিলী চালান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মামলার ঘটনার সহিত জড়িত এবং ঘটনার পূর্বে ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে সেলিম উদ্দিনকে। তাহলে প্রকৃতপক্ষে সন্ধিগ্ন আসামী কে ? নজরুল না সেলিম নাকি উভয়েই ?

অপরদিকে, ইতিপূর্বে চেয়ারম্যান থাকাকালে নজরুলের সাথে ঘনিষ্টতা সত্তেও গত ইউপি নির্বাচনে তার সমর্থন না পেয়ে কামুদপুরের সব ভোটকেন্দ্রে পরাজয় বরণকারী সংক্ষুব্ধ আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাদশাও গত ৩১ জুলাই ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত কমলগঞ্জ উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সভায় নজরুল বিরোধী বক্তব্য দিয়ে জোট বেঁধেছেন নজরুলের প্রতিপক্ষের সাথে। ওই সভায় তিনি বলেন- “কামুদপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে। সে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এলাকার ১৫/১৬ ব্যক্তিকে মারপিট করেছে। তার পিতা মৃতঃ নজির উদ্দিন স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে কমলগঞ্জ থানা পিস কমিটির সদস্য এবং আলীনগর ইউনিয়ন পিস কমিটির কনভেনার ছিলেন”। অথচ, ফজলুল হক বাদশার পিতা ০০০০০ও যে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে কমলগঞ্জ থানা পিস কমিটির সক্রিয় সদস্য এবং নজরুলের পিতা, থানা পিস কমিটির সদস্য ও ইউনিয়ন পিস কমিটির কনভেনার নজির উদ্দিনের ঘনিষ্ট সহযোগী ছিলেন এটা কে-না জানে ?

এভাবেই দক্ষিণ কামুদপুর গ্রামের জাফর আলীসহ স্থানীয় একটি চক্র, ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাদশা ও থানার ওসি বদরুল হাসান মিলে বৃটিশ-বাংলাদেশী নজরুল ইসলামকে হয়রানীর মাধ্যমে সর্বশান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাই, নজরুল ইসলাম নিরুপায় হয়ে ওসি বদরুল হাসানের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন এবং চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাদশার বিরুদ্ধে দলীয় হাইকমান্ড বরাবর অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেইসাথে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা কামনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন