কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি।

কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিটন মিয়াকে দুটি মামলায় এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে দুই মামলায় তাকে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সময়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন বিচারক।

কুড়িগ্রাম জজ আদালতের যুগ্ম দায়রা জজ (প্রথম আদালত) মো. হাবিবুর রহমান গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এ আদেশ দেন। সোমবার (১৩ মার্চ) সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী শামসুজ্জামান রুবেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তবে দণ্ডাদেশের এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও সংশ্লিষ্ট থানায় গ্রেফতারি পরোয়ানা পৌঁছায়নি। বিষয়টি জানিয়েছেন সদর থানার ওয়ারেন্ট অফিসার ও সহকারী উপ-পরিদর্শক সোহাগ পারভেজ।
তবে আদালতের সেরেস্তাদার আকতার আহসান হাবীব কাজল জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে।

লিটন মিয়া সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। তিনি ওই ইউনিয়নের মৃত আবু বক্করের ছেলে। তার বিরুদ্ধে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যার অভিযোগে মামলা রয়েছে।
মামলা ও আদালতের আদেশ সূত্রে জানা গেছে, লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে ২০২২ সালে চেক ডিজঅনারের (এনআই অ্যাক্ট) দুটি পৃথক মামলা করা হয়। রফিক নামে এক পুলিশ সদস্য বাদী হয়ে এ মামলা করেন। বিচার প্রক্রিয়ায় লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি লিটন মিয়াকে দুই মামলায় এক বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। একইসঙ্গে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। লিটন মিয়া পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক।

তবে রায় ঘোষণার এক মাস পেরিয়ে গেলেও গত সোমবার পর্যন্ত গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় পৌঁছায়নি। কুড়িগ্রাম সদর থানার ওয়ারেন্ট অফিসার ও সহকারী উপ-পরিদর্শক সোহাগ পারভেজ বলেন, লিটন মিয়ার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনও থানায় পৌঁছায়নি।

এ ব্যাপারে যুুগ্ম দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার আকতার আহসান হাবীব কাজল বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে জানতে লিটন মিয়াকে একাধিকবার ফোন দিলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যানের খোঁজে ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করা হলে পরিষদের সচিব হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চেয়ারম্যান দুই দিন থেকে পরিষদে আসছেন না। তার অনুপস্থিতিতে জন্ম নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান বিঘ্নিত হচ্ছে। কিন্তু তার সঙ্গে আমরা কোনোভাবে যোগাযোগ করতে পারছি না।’

প্রসঙ্গত, বেলাগাছা ইউনিয়নের বাসিন্দা বাবলু নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যা মামলার আসামি লিটন মিয়া। ২০২২ সালের ২৮ জুন রাতে চেয়ারম্যান লিটন মিয়ার নেতৃত্বে বাবলুর বাড়িতে হামলা চালায় একটি দল। এতে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বাবলু। ওই মামলায় লিটন মিয়া তথ্য গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিকবার উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, উচ্চ আদালত থেকে একবার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিলে সেই জামিনের মেয়াদ শেষে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার বিধান রয়েছে। কেউ যদি একটি বেঞ্চ থেকে জামিন নিয়ে তথ্য গোপন করে আরেক বেঞ্চ থেকে আবারও জামিন নেন, তাহলে সেটি প্রতারণার শামিল।
এদিকে লিটন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনায় একাধিক অভিযোগ প্রকাশ হওয়ায় জনমনে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *