আতাউর রহমান বিপ্লব।।

কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামিলীগ এর কমিটিতে রাজাকার ও পাকবাহিনীর দোসর, শান্তি কমিটির প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, এমন ব্যক্তি ও তাদের সন্তান ও স্বজনদের কেউ কেউ নানা কৌশলে বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোতে অনুপ্রবেশ করার ঘটনা ঘটেছে ।

বিগত ২০১৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির সম্মেলনে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল ও সাধারণ সম্পাদক পদে মো. জাফর আলী নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই কমিটিতে স্থান পেয়েছিলো বিতর্কিতদের অনেকেই। এই নিয়ে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে।

আওয়ামী লীগে ‘অনুপ্রবেশের’ বিষয়টি এখন দেশময় আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা। রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের উত্তরসূরিরা এখন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শাখার পদ-পদবি কিনেছেন তারা। হয়ে উঠেছেন বড় বড় নেতাদের ঘনিষ্ঠ। একই সঙ্গে এসব পদবি ব্যবহার করে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরিতে নিয়োগসহ ব্যবসা- বাণিজ্য ঠিকাদারিসহ সবকিছু নিয়েছেন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে । এমনকি মাদক ব্যবসায়ের সিন্ডিকেটও রয়েছে তাদেরই দখলে।

এসব বিরোধী মতাদর্শীরা দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে দুর্নীতি, চোরাচালান, জমি দখল, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টিআর- কাবিখা প্রকল্পে লুটপাটসহ নানা কর্মকাণ্ডে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তাদের দাপটে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা ও ত্যাগী নেতারা হয়ে পড়েছেন কোণঠাসা।

বিষয়টি দলের জন্য অশনিসংকেত, সাংগঠনিক ও গোয়েন্দা রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে আসায় বিতর্কিত অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। চলছে শুদ্ধি অভিযান। দলে বিরোধী মতাদর্শীদের এ ধরনের ঢালাও অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকবারই দলীয় নেতাদের সতর্ক করেছেন।

তৃণমূলের কমিটিতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত কর্মীদের জায়গা দিয়ে জেলার প্রভাবশালী নেতাদের নিজস্ব বলয় ভাঙতে চায় আওয়ামী লীগ। বিগত সময়ের মতো এবার যাতে ‘পকেট কমিটি’ গঠন না হয় তার জন্য সতর্ক ক্ষমতাসীন দলটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামীলীগের এক নেতা অভিযোগ করে বলেন , জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিল্লুর রহমান টিটু চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের সন্তান। আবারও তিনি জেলা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তাঁর পিতা মৃত আকবর আলী রাজারহাট উপজেলা ছিনাই ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত একজন যুদ্ধাপরাধী এবং একই আইনে সাজাপ্রাপ্ত জিল্লুর রহমান টিটুর বড় ভাই।

অপরদিকে সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি চাকরি করে কেউ দলীয় রাজনীতি করতে না পারলেও শিক্ষকতার পাশাপাশি জেলা কমিটিতে পদে ছিলেন এবং আবারও জেলা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন বলে শোনা যাচ্ছে। শ্রী নারায়ণ চন্দ্র তিনি কাঁঠালবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং আবু ইউছুফ মোঃ শহিদুজ্জামান ওরফে নুরুজ্জামান একজন প্রধান শিক্ষক তিনি সিতাইঝড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এছাড়াও গত কুড়িগ্রাম জেলা কমিটিতে হাইব্রিডের ছিলো ছড়াছড়ি। জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন জাতীয় পার্টি থেকে আসা মোঃ আবদার হোসেন বুলু , দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন।
যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন মোঃ সফিকুল বারী জিন্নাহ পিতা- শামসুদ্দিন মন্ডল, গ্রাম- সাদ্দাম পাড়া তিনি বিএনপি থেকে নাগেশ্বরী উপজেলার সেক্রেটারি এবং জাতীয় পার্টীর সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন তারপর আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের প্রভাবশালী এক নেতার হাত ধরে আওয়ামী লীগের জেলা কমিটিতে অনুপ্রবেশ। অপরদিকে আলোচনায় রয়েছেন এ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন তিনি একজন জামাত পরিবারের সন্তান শোনা যাচ্ছে তিনিও জেলা কমিটিতে আসছেন।
এছাড়াও সাবেক জেলা কমিটির সদস্য বর্তমান কুড়িগ্রাম পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম তিনি বিএনপি ও জাতীয় পার্টীর সাবেক নেতা। অপরদিকে রয়েছেন সাবেক জেলা কমিটির সদস্য কাজিউল ইসলাম তিনিও একজন যুদ্ধাপরাধীর সন্তান। তার পিতা করিমল মিয়া ৭১ এ পাকবাহিনীর সহযোগী ও লুটেরা ছিলেন। বর্তমানে তিনি সাধারণ সম্পাদক পৌর আওয়ামী লীগ, কুড়িগ্রাম।
উল্লেখ্য কেন্দ্রীয় আঃলীগের সম্পাদকীয় মন্ডলীর সভায় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দলকে সুসংগঠিত করতে সম্মেলন ও পুর্নাঙ্গ জেলা কমিটি গঠনের নির্দেশনার পরে সেই বিতর্কিত নেতারা মরিয়া হয়ে উঠেছে পদ পদবি নিতে। এরই প্রেক্ষিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে এতদিনের পদ পদবী ব্যবহার করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা সেই বিত্তশালী নেতারা।
কমিটি গঠনে জেলা আওয়ামীলীগের বিগত কমিটির ক্ষমতাধর নেতাদের শুরু হওয়া দৌড়ঝাঁপ ও উচ্ছাসের কারণে নিরাশ হয়েছেন তৃণমূলের আঃলীগ নেতাকর্মীরা। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আশংকিত এই ভেবে যে, আবারো তাদের নিয়ন্ত্রণে জেলা কমিটি গঠন করা হলে দলীয় কোন্দল ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে দলটির নেতাকর্মীরা। বিভক্তি দেখা দিবে সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে।
শেখ হাসিনার স্বপ্নিল স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রকৃত ত্যাগী, বঞ্চিত, অবহেলিত মুখ ফিরিয়ে থাকা নেতাকর্মী সমন্বয়ে পুর্নাঙ্গ জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করার দাবী জানিয়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন