শফিউল আলম শফিঃ কুড়িগ্রাম ঃ
কুড়িগ্রামের এক সময়ের খর¯্রােতা বুড়িতিস্তা নদীটির প্রায় অধিকাংশ জমি স্থানীয় প্রভাবশালী ৪০জন ভুমিদস্যু জবর দখল করে নেয়ার বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষ আন্দোলনে নেমেছে বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসী জানান,ওই ৪০ ব্যাক্তি দীর্ঘদিন ধরে বুড়িতিস্তার জমি দখল করে পাকা স্থাপনা ও পুকুর তৈরি করে ব্যবসা করছেন। এ অবস্থায় ভুমি দস্যুদের কবল থেকে বুড়িতিস্তার জমি দখল মুক্ত করার জন্য ‘বুড়িতিস্তা বাঁচাও উলিপুর বাঁচাও’ ব্যানারে আন্দোলন করছে ‘কুড়িগ্রাম রেল-নৌ-যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটি’ এবং উলিপুর প্রেস ক্লাবসহ স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। উলিপুরে বিক্ষোভ মিছিল, সাইকেল র‌্যালী, নদীতে পানি ঢেলে প্রতিকি প্রতিবাদসহ দীর্ঘদিন ধরে নানা কর্মসূচী পালন করছেন বুড়িতিস্তা বাঁচাও আন্দোলনকারীরা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বুড়িতিস্তা নদীটি উলিপুর উপজেলার থেতরাই থেকে উলিপুর উপজেলা শহরের কোলঘেষে চিলমারীর কাচকোল পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে । কিন্তু উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ব্রীজের মুখে বুড়িতিস্তার প্রায় ৩ একর জমি দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মান করে ভাড়া দিয়েছে ভুমি দস্যু আকতারুজ্জামান অপু। আকতারুজ্জমান অপুর মতামত জানতে তার মোবাইলে বহুবার কল করলেও তিনি রিসিভ না করায় পরে তার বাড়ীতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়ী থেকে জানানো হয় উনি বাড়ী নেই। সাংবাদিকের কথা শুনে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অন্যাদিকে উলিপুরের নারকেল বাড়ী এলাকায় নদীর প্রায় ২ একর জমি দখল করে পুকুর তৈরি করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী আব্দুল হাকিম। এভাবে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘের বুড়িতিস্তায় অন্ততঃ ৪০জন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি নদী দখল করে পুকুরসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করেছেন। নদী দখলের ফলে বর্ষাকালে পানিপ্রবাহ বন্ধ হওয়ায় উলিপুর উপজেলা জুড়ে জলাবদদ্ধতা সৃষ্টি হয় । উলিপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু সাইদ সরকার জানান, ১৯৮৮ সালের বন্যার পর অপরিকল্পিতভাবে বুড়িতিস্তার উৎসমুখ উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নে বাঁধ ও স্লুইচ গেট নির্মাণ করায় ¯্রােতাধারা ক্ষিন হয়ে আসতে থাকে । ফলে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে এই নদীর দুই পাড়সহ মাঝ নদীতে পুকুর তৈরি করে স্থানীয় ভুমি দুস্যুরা।
উলিপুর উপজেলার বুড়িতিস্তা পাড়ের কৃষক আবুল হোসেন জানান, আমরা যে নদীর পানি দিয়ে চাষাবাদ করতাম, যে নদীতে মাছ ধরতাম সেই নদী এখন ভুমিদস্যুদের পেটে। অথচ একসময় বুড়িতিস্তয় নৌকা চলতো। আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাই নদীর জমি উদ্ধার করে আগের মতো নদীর পানি প্রবাহ ফিরে দেয়া হোক।
উলিপুর উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক তৈয়বুর রহমান জানান, বুড়িতিস্তা ভরাট করে স্থাপনা ও পুকুর তৈরি করায় বর্ষা মৌসুমে উলিপুর শহরসহ উপজেলার পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বুড়িতিস্তাকে এখনই দখলমুক্ত করতে না পারলে এ অঞ্চলের কৃষিসহ মৎস্য সম্পদে বিরুপ প্রভাব পড়বে।
বুড়িতিস্তা বাঁচাও উলিপুর বাঁচাও কমিটির আহবায়ক আলমগীর জানান, আমরা ১৯৮৮ সালের পর থেকে দখল হতে থাকা বুড়িতিস্তা বাঁচানোর আন্দোলনে নেমেছি। আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছি। বুড়িতিস্তা দখল মুক্ত করে পুর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে এলাকার জীব বৈচিত্র রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেবার জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবী করছি ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, বুড়িতিস্তা পুনঃখনন ও স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার জন্য প্রকল্প তৈরি ও জরিপের কাজ চলছে। প্রকল্পটি পাশ হলে অবৈধ্য স্থাপনা উচ্ছেদসহ নদীটিকে পুর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন