স্টাফ রির্পোটার ॥
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ মহাবিদ্যালয়ের অনার্স (সমাজকর্ম বিভাগের) ২য় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী ফাতেমা হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার দুপুর ১২টায় আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ মহাবিদ্যালয়ের সামনের সড়কে অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে মানববন্ধনে কলেজের শিক্ষক,কর্মচারী ও শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে । অনতিবিলম্বে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি প্রদানের দাবী জানান হয় ।
মানববন্ধনে কলেজের বিভিন্ন শিক্ষক/শিক্ষিকা ছাড়াও নিহতের পরিবারেরব পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন। এ ব্যাপারে হত্যাকাণ্ডের শিকার ফাতেমার ভাই আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে জেলা ময়মনসিংহের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৭নং আমলী আদালতে দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন, যার গফরগাঁও সিআর মামলা নং ২৪৩/২০২১, তাং ৩০.১১.২১ইং। নিহতের ভাই আব্দুল্লাহ জানান, গফরগাঁও থানার আলতাফ গোলন্দাজ ডিগ্রী কলেজের অনার্স ২য় বর্ষে সমাজ কল্যান বিভাগে লেখাপড়া অবস্থায় ফাতেমার সাথে যশরা ইউনিয়নের খোদাবক্সপুর গ্রামের মিরাজ উদ্দিনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
এক পর্যায়ে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতম হলে ফাতেমা বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে আসামী মিরাজ উদ্দিন সরকারি চাকুরী নিয়ে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস প্রদান করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর মিরাজ উদ্দিন আত্বীয় স্বজন নিয়ে ফাতেমাদের বাড়ীতে যায় এবং বিয়ে সম্পর্কে আলাপ আলোচনা শেষে জানায় তাদের বাড়ীতে গিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। অবশেষে ঘটনার ২দিন পূর্বে মিরাজ উদ্দিন মোবাইলে ফাতেমাকে জানায় “আমাদের বিয়ে সম্পর্কে আমার বাবা-মা রাজি হয়েছে, আমি ছুটিতে বাড়ি এসে আমার ছোট ভাইকে পাঠালে তুমি আমাদের বাড়ীতে চলে আসবা।” গত ৩ অক্টোবর নিহত ফাতেমা তার সঙ্গীয় বোন ও ভাবীর সাথে সকালে ভোটার আইডি কার্ড করতে গফরগাঁও নির্বাচন অফিসে কাজ শেষ করে দুপুরে কলেজের কথা বলে বোন ও ভাবীর কাছে বিদায় নিয়ে কলেজে চলে যায়।
কলেজে পূর্ব থেকে অপেক্ষমান আসামী মিরাজের ছোট ভাই জাহিদের সাথে তাদের বাড়ীতে যায়। ফাতেমা বাড়ীতে পৌছা মাত্রই মিরাজ উদ্দিনের পরিকল্পনা ও প্ররোচনায় আসামীগণ তার উপর অতর্কিত হামলা করে। এ সময় ফাতেমার হাত পা ধরে রেখে, গলা টিপে, বুকে ও পেটে চাপ দিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পরে লাশ গুম করার চেষ্টা করে। অন্যদিকে নিহত ফাতেমার ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন তাদের বাড়ীতে আসার আগেই ফাতেমাকে উঠানে ফেলে রেখে আসামীগন পালিয়ে যায়।
পরে বিকালে মিরাজের পিতা ফোন করে জানায়, আপনার মেয়ে আমাদের বাড়ীতে আছে নিয়ে যান। মেয়েকে ফেরত আনার জন্য ফাতেমার পিতা শিবগঞ্জ যাওয়ার পর জানতে পারেন তার মেয়ের লাশ গফরগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার ফাতেমাকে মৃত ঘোষনা করলে বোরহান উদ্দিন নামের একজন লাশ নিয়ে থানায় যায়।
পরবর্তীতে পুলিশ নিহতের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করেছে বলে নিহতের পরিবার কে পুলিশ জানায়। অন্যদিকে গফরগাঁও থানা পুলিশ ফাতেমার পিতার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয় যা পরবর্তীতে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে বলে নিহতের পরিবার জানতে পারে।
এলাকার সাধারণ মানুষ, নিহতের প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ কলেজ ছাত্রী ফাতেমাকে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আসামীদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে আসামীদের বিচারে সোপর্দ করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের আবেদন জানিয়েছেন। বাদী পক্ষের মামলা পরিচালনাকারী বিজ্ঞ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম মামুন জানান, ” উল্লিখিত হত্যা মামলাটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। বিজ্ঞ আদালত গুরুত্ব বিবেচনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ(সিআইডি) কে মামলাটি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।”