ফারহানা আক্তার, জয়পুরহাটঃ
ধর্ম যার যার উৎসব সবার প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জয়পুরহাটে দেবীর প্রতিমা প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছে মৃৎশিল্পী ও আয়োজকেরা।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মন্ডপে মন্ডপে দেবী দুর্গা, লক্ষী, স্বরস্বতী, কার্তিক ও গণেষ প্রতিমা তৈরীতে নির্ঘুম রাতদিন কাটাচ্ছে মৃৎশিল্পের কারিগররা। তাদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় প্রত্যেকটি প্রতিমাকে তৈরী করছেন অসাধারণ রূপে। ক’দিন পরেই দুর্গাপূজা। তাই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এখন সাজ সাজ রব।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহোৎসব সামনে রেখে জয়পুরহাট জেলায় কাদামাটি, খড়-কাঠ ও যাবতীয় উপকরণ দিয়ে প্রতিমা প্রস্তুত করতেই দিন কাটছে মৃৎশিল্পীরা। নিখুঁতভাবে কাজ ফুটিয়ে তুলতেই সর্বোচ্চ মনোযোগ শিল্পীদের । আগামী ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ মহোৎসব শুরু হবে এবং ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের উৎসব।
মৃৎশিল্পীরা করোনা ভাইরাসের কারণে দুশ্চিস্তাই থাকলেও সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমার কারণে আনন্দ-উৎফুল্য হয়ে প্রতিমা তৈরির কাজে নেমে পড়েছেন। প্রতিমা প্রস্তুত করতে কোথাও চলছে মাটির কাজ আবার কোথাও চলছে রংয়ের কাজ। পূজার আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে পুজারি থেকে শুরু করে কর্মব্যস্ত সকলেই। শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতিতে যেন দম ফেলার সুযোগ নেই তাদের। জেলার প্রতিটি মন্দির প্রাঙ্গণে তারা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে এবং পূজা মন্ডপগুলো ডেকুরেশনের লোক দিয়ে সাজানো হচ্ছে নানান সাজে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যই দেবী দুর্গার স্বর্গ থেকে মর্ত্যলোকে আগমন। তাই দুর্গাপূজাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে তাদের মধ্যে।
এ বছর জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ১১৫ টি, পাঁচবিবি উপজেলায় ৭৩ টি, কালাই উপজেলায় ৩২ টি, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৪৩ টি ও আক্কেলপুর উপজেলায় ৩৮ টিসহ জেলাজুরে মোট ৩০১ টি মন্দিরে সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মাসুম মাহাম্মদ ভূঞা জানান, উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন স্তরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং যানজট নিরসনে সার্বক্ষণিক ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে।
জয়পুরহাট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হৃষিকেষ সরকার জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক তদারকি ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিটি মন্দিরে সেচ্ছাসেবক টিম গঠণ করা হয়েছে।
মৃৎশিল্পী বিকাশ মাহাকর, দিপক চন্দ্র মহন্ত, গোপীনাথ কর্মকার, কাঞ্চন কর্মকার ও নিরান্জন জানান, তাদের মৃৎশিল্পের বিকাশ ঘটাতে তারা নিরলসভাবে কাজ যাচ্ছে এবং করোনাকালীন সময়ে তারা কর্মহীন হয়ে পড়লেও বর্তামানে করোনার প্রার্দূর্ভাব কমায় তারা প্রতিমা তৈরি করে কিছুটা হলেও তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
ডেকুরেশন মিস্ত্রী সাইফুল ও মাসুদ রানা জানান, করোনার কারণে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মিয় অনুষ্ঠান গুলো সিমিত পরিসরে হওয়ায় অনেক ডেকুরেশন শ্রমিক বেকার হয়ে পরেছিল। বর্তমানে তারা আবারও নতুনকরে কর্মব্যস্ত হয়ে পরেছে এবং তাদের কারুকাজের মধ্য দিয়ে তারা জেলার সেরা হওয়ার আসা ব্যক্ত করেন।
আসছেন অনুরদলনী দূর্গতি নাশিনী দেবী দূর্গা। দেবী দূর্গার আগমনি বার্তা ছরিয়ে পরেছে দিগদিগন্তে, আকাশে বাতাসে আর মাঠে-ঘাটে, শিউলি ফুলের ছরিয়ে রাখা আল্পনায়। দেবী দূর্গার আগমনে বিনাশ হোক সকল আভ্যন্তরীন ও বাহ্যিক অসুর শক্তি। আর জেগে উঠুক বিশ্ব মানবতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ। এমনটাই কামনা করছেন এই জেলার হিন্দু ধর্মালম্বী জনসাধারণ।