ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের শঙ্কা নিয়েই ইরি-বোরো চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার প্রান্তিক ও চরাঞ্চলের কৃষকরা। গত বছর আগস্টে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের দাম বাড়ায় জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। দু দফা ডিজেল তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯ টাকায় বিক্রি করার কথা থাকলেও তা এলাকা ভেদে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় দেড় গুন। এছাড়াও হালচাষ ও সেচের ভাড়াও বেড়েছে।

যদিও উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, অল্টারনেটিভ ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রাই পদ্ধতি ব্যবহার করে উৎপাদন ব্যয় কমাতে পারে কৃষক।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ১৬ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প ১ হাজার ১০৬ টি ও ডিজেল চালিত ৪ হাজার ৮৫৫টি সেচযন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদ করবেন কৃষক।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলতি ইরি-বোরো ধান চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা। কোদাল দিয়ে জমি সমান করা, খেতে চাষকরা, পানি দেয়া, খেতের আইল ঠিক করা, আগাছা পরিষ্কার ও গোবর সার ছিটানোসহ নানা কাজে দারুণ ব্যস্ত কৃষক। বোরো মৌসুমে চরাঞ্চলের প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ৪৫ থেকে ৫৫ বার সেচ দিতে হয়। যাতে প্রয়োজন হয় গড়ে প্রায় ৫২ থেকে ৫৫ লিটার ডিজেল। এতে প্রতি বিঘায় কৃষকের অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় দেড় হাজার টাকা।

উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের দুধকুমার নদী পাড়ের বাসিন্দা কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, নদীর চর জেগে ওঠেছে। বোরো ধানের চারা লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। চরের বালু মাটি যুক্ত জমিতে সকালে পানি দিলে বিকেলেই শুকিয়ে যায়। তাই প্রতিদিন সেচ দিতে হয়। তেলের দাম বাড়ায় অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

আরেক প্রান্তিক কৃষক জয়নাল আবেদিন জানান, তেলের দাম বৃদ্ধিতে ধানের চাষ করাই দুস্কর হয়ে যাবে। হালচাষের খরচ বেড়ে গেছে। আগে ট্রাক্টর দিয়ে প্রতি বিঘা জমি ৮শ টাকায় চাষ দিতাম। এখন ডিজেলের দাম বাড়ায় ১২ শ টাকায় চাষ দিচ্ছি। স্যালো মেশিনে সেচের খরচ বেড়ে গেছে। এবার বোরো আবাদ কমিয়ে দিবে আমার মত অনেক কৃষক।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুজন কুমার ভৌমিক বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচের পানির অপচয় রোধ ও পর্যায়ক্রমে ভেজানো এবং শুকানো (অল্টারনেটিভ ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রায়িং) পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি।আশা করছি এর ফলে কৃষক যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা সে ক্ষতি তারা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *