রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায় বর্তমানে আতংক হয়ে দেখা দিয়েছে বালু বা মাটি ভর্তি ট্রাক্টর। অদক্ষ চালকের হাতে থাকা ট্রাক্টরের বেপরোয়া যাতায়াতে রাস্তায় বের হওয়া সাধারণ মানুষ ভয়ে কেঁপে ওঠে। গত দুইমাসে মধ্যে ৬ জনের প্রাণ কেড়ে নেয় বালুভর্তি ট্রাক্টর। পঙ্গুত্ব জীবন যাপন করছেন অনেকেই। একই সঙ্গে বেপরোয়া গতিতে চলা ট্রাক্টর সর্বনাশ করছে গ্রামীন রাস্তাগুলোর। এলাকাবাসি দিনের বেলায় বালুভর্তি অবৈধ ট্রাক্টর বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

মঙ্গলবার (৯ মার্চ) সকালে দিকে বালুভর্তি ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যায় হোসেন আলী (২১) নামের এক কলেজছাত্র। মটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি থেকে বাজারে আসার পথে কুটিরচর নামক স্থানে চাপা দেয় বালুভর্তি ট্রাক্টর। ঘটনাস্থলে মারা যায় ওই ছাত্র। স্থানীয় জনতা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওই ট্রাক্টর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে সাংবাদিক শাহাদত হোসেন সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে বালু ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন (অব: আর্মি) এর উস্কানিতে তাকে লাঞ্চিত করা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। রৌমারী উপজেলা মোড় থেকে ফুলুয়ারচর নৌকাঘাট পর্যন্ত ওই রাস্তায় প্রায়ই বালুভর্তি ট্রাক্টরের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। নিহত কলেজ ছাত্র উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের ফুলুয়ারচর গ্রামের মমিন চানের ছেলে।

এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারির পরে রৌমারী-দাঁতভাঙ্গা সড়কের চেংটাপাড়া নামক স্থানে বালুভর্তি ট্রাক্টরের নিচে পিষ্ট হয়ে মারা যায় হাছেন আলী (৮২) নামের এক বৃদ্ধ। এছাড়াও বেপরোয়া গতিতে চলা বালুভর্তি ট্রাক্টরের নিচে পড়ে প্রাণ যায় বন্দবেড় গ্রামের নুর জাহান (৪০) এবং উপজেলার বাইকামারী সড়কে বালুভর্তি ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যায় ছাহেরা খাতুন নামের গৃহবধুসহ ছয়জন।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, রৌমারী উপজেলায় হাজারের ওপর ট্রাক্টর রয়েছে যা দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু বহন করে আনা হচ্ছে। এসব ট্রাক্টরের সিংহভাগ চালকের বয়স ২০ বছরের নিচে। তাদের ভারী যান চালানোর কোনো বৈধ প্রশিক্ষন ও লাইসেন্স নেই। এক সময়ে যারা অটোভ্যান গাড়ি চালাত তারাই এখন ট্রাক্টর চালক হয়েছে। এর ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণ যাচ্ছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারী। ওইসব ট্রাক্টরের মালিক স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী হওয়ার কারনে দুর্ঘটনা ঘটলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয় না। উপজেলা ও থানা প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পাচ্ছে না।

রৌমারী উপজেলা মোড় থেকে ফুলুয়ার নৌকাঘাট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ন। বর্তমানে সড়ক খানাখন্দে ভরে যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়ক দিয়ে দিনরাত বালুভর্তি ট্রাক্টর চলাচলের কারনে ওই দুরাবস্থার সষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসি জানিয়েছেন।

বন্দবেড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কবির হোসেন জানান, মিনিটে মিনিটে বালুভর্তি ট্রাক্টরের যাতায়াতের কারনে সড়কের কোনো অবস্থাই নাই। বেপরোয়া যাতায়াতের কারনে আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে সার্বকক্ষনিক আতংকের মধ্যে থাকি। অপরদিকে ট্রাক্টরের বিকট শব্দ আর ধুলোবালিতে সড়কঘেষা জনবসতিতে ঘরে থাকা যায় না। শুধু যে ফুলুয়ার সড়কেরই দুরাবস্থা তা কিন্তু নয়। একই অবস্থা উপজেলার গ্রামীন সকল রাস্তাঘাটের। এখন শুস্ক মৌসুম চলছে আর এই সময়ে বালু ভর্তি ট্রাক্টরের যন্ত্রনায় রাস্তা চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। রাস্তায় বেরুলেই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে। বেপরোয়া এই ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রতিবছরই স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এখন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় তো রক্ষা পাচ্ছি। এসব কথা জানাচ্ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। নাম প্রকাশে ভয় পান ওই শিক্ষক। কেননা সকল ট্রাক্টরের মালিক প্রভাবশালী।

বালুভর্তি ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনার একটিতেও মামলা না হওয়া প্রসঙ্গে রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোন্তাছের বিল্লাহ জানান, দুর্ঘটনার পর পরই নিহতের পরিবারের সঙ্গে ট্রাক্টর মালিক মিমাংসা হয়ে যায়। নিহত পরিবারের কেউ মামলা করতে চায় না। আমরা চেষ্টা করেও মামলায় আগ্রহী করতে পারিনি। তবে আজকের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান জানান, এ বিষয়ে ট্রাক্টর মালিকদের নিয়ে আমরা একাধিকবার বৈঠক করেছি

দক্ষ চালক নিয়োগ করতে। নিয়ম মেনে রাস্তা যাতায়াতের জন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *