খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
৩ দিনের সদ্য নবজাতককে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে রেখে মা চলে গেছে তার বাবার বাড়ি আর সেই সন্তানকে বাঁচাতে নবজাতকের মাকে ফিরিয়ে আনতে থানায় জিডি করে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে আকুতি জানিয়ে ঘুরছেন বাবা মোকছেদ আলী। এ সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশের পর দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাশিদা আক্তার, ওসি চিত্তরঞ্জন রায় ও গোয়ালডিহি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন লিটনের সহযোগিতায় সেই মা রাতেই পৌঁছালেন হাসপাতালে। এতে সন্তানটি বর্তমানে সুস্থ রয়েছে।
জিডি সূত্রে ও নবজাতকের বাবার সাথে কথা বলে জানা যায়, দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাট গুন্দুশাহ্ পাড়ার মোকছেদ আলী (২৫) ও গোয়ালডিহির সাঁকোরপাড় এলাকার আব্দুস সাত্তারের মেয়ে আয়শা সিদ্দিকার (২০) সাথে বিয়ের পর কয়েক মাস থেকে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকত। এরপরও সংসার জীবনে গত ২ নভেম্বর সন্ধ্যায় দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এরপর ৫ নভেম্বর হাসপাতালে নবজাতকের বাবার সাথে মা ও নানা-নানির কথা কাটাকাটির জেরে সন্তানকে হাসপাতালের বেডে রেখে মা, নানা-নানি কাউকে কোন কিছু না বলে গোপনে বাড়ি চলে যায়। এরপর সন্তানের বাবা তার মাকে দেখতে না পেয়ে খোজাখোজি করে। এদিকে সন্তান মায়ের দুধের অভাবে অসুস্থ হয়ে পরে। পরে আত্বীয়দের মাধ্যমে বাড়ি চলে যাওয়ার খবর জানতে পেরে ৬ নভেম্বর সকালে নবজাতকের বাবা রাগ-অভিমান ভুলে স্ত্রীকে হাসপাতালে ফিরিয়ে আনতে শ্বশুর বাড়িতে গেলেও স্ত্রী ফিরে আসে নি। এদিকে সন্তানের অবস্থাও দিন দিন সংকটাপন্ন হওয়ায় গত ৬ নভেম্বর রবিবার হতে ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার পর্যন্ত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে না পারে নি।
নবজাতকের বাবা মোকছেদ আলী বলেন, ৩ দিন ধরে মায়ের দুধ না খাওয়ায় সন্তানটি সবসময় ছটপট করে কান্নাকাটি করেছিল। এমনকি সন্তানের অবস্থাও ভাল ছিল না। আমার স্ত্রী যদি সংসার নাও করে তবুও সন্তানটিকে বাঁচার জন্য তাকে হাসপাতালে আনার অনেক চেষ্টা করছি। সে তো আসে নি বরং আমাকে ফোনে মামলা হামলার হুমকি দিচ্ছে। সন্তানটিকে বাঁচার জন্য সংবাদ প্রচারের পর রাতেই আমার স্ত্রী হাসপাতালে এসেছে। বর্তমানে সন্তান সুস্থ রয়েছে।
গোয়ালডিহি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন লিটন বলেন, আমি মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বলেছি। তাদের হাসপাতালে যাওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু ফেসবুকে দেখি তিনি যান নি। পরে ইউএনও ও ওসি স্যারের সহযোগিতায় রাতেই সেই মাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাশিদা আক্তার বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হলেও একজন মা কখনো এরকম কাজ করতে পারে না। সংবাদটি দেখার পরেই ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সেই মাকে হাসপাতালে পৌছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও সন্তানটির চিকিৎসার জন্য সর্বদাই পাশে থাকব।