বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান মন্ডল

১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনের কিছুকাল পূর্বে অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে আমরা জানতে পারলাম বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসাবে উত্তর বঙ্গ সফর করবেন। প্রথমতঃ দিনাজপুর থেকে তাঁর নির্বাচনী সভা শুরু করবেন। কুড়িগ্রাম তার সফর তালিকায় রয়েছে। কুড়িগ্রামের প্রতিটি থানার সাধারন মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ ভাবে আমরা ছাত্র সমাজ উচ্ছাসিত, উল্লাসিত ও উদ্বেলিত।

বঙ্গবন্ধু প্রথমতঃ দিনাজপুর থেকে নির্বাচনী প্রচারনা ও জন সভা শুরু করবেন। ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নিলফামারীও রংপুর নির্বাচনী সভা সম্পন্ন করে কুড়িগ্রাম ও পরে গাইবান্দা সফর করবেন। গাইবান্দা নির্বাচনী সভা শেষে ট্রেন যোগে ঢাকা ফিরে যাবেন।

প্রথমে বঙ্গবন্ধু দিনাজপুর অবস্থান করবেন। বঙ্গবন্ধুকে দেখা ও কথা বলার জন্য আমাদের তর সইতে ছিলনা। বঙ্গবন্ধু ঢাকা থেকে বিমানে সৈয়দপুর নামবেন এবং সরাসরি দিনাজপুর যাবেন। তখন যাতায়াতের একমাত্র উপায় ছিল রেল যোগাযোগ। ছাত্রলীগ নেতা বন্ধু রওশন উলবারী, আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল, কুড়িগ্রাম মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং আমি কুড়িগ্রাম মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আব্দুল জব্বার খান সহ আমরা কুড়িগ্রাম পুরানো রেল ষ্টেশন থেকে ট্রেন যোগে বিকালে প্রথমত তিস্তা ষ্টেশন ও ট্রেন বদল করে কাউনিয়া ষ্টেশনে ঢাকা মেইলের অপেক্ষায় থাকলাম। রাত ১০ টায় ঢাকা মেইলে চেপে আমরা ভোর রাতে দিনাজপুর পৌঁছে গেলাম।

আমরা সকাল ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু অবস্থানরত ডাকবাংলোতে গেলাম। ডাকবাংলো এলাকায় ছাত্রলীগ, আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীতে পরিপূর্ণ। রংপুর জেলা ছাত্রলীগ নেতা মনসুর আহমেদ, হারেস সরকার সহ অনেককেই পেলাম। দিনাজপুরের আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ভাই এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর দিনাজপুর আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রহিম ভাইয়ের সহযোগীতায় বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলাম ও আমাদের পরিচয় দিয়ে পা ছুয়ে সালাম করলাম। বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগ নেতা রহিম ভাইকে বললেন ওদের খাবার ব্যবস্থা কর। সবাই যেন খেয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু তার হাত দিয়ে আমাদের মাথায়, গালে আদর করলেন এবং বললেন এখানে তোরা কষ্ট করিস না যার যার এলাকায় চলে যা, আমার সভা যেন সাকসেসফুল হয়। বঙ্গবন্ধুর নরম তুলতুলে হাতের আদরের এক অপূর্ব অনুভূতি, ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব।

নির্বাচনী সফরে বঙ্গবন্ধ কুড়িগ্রামে ৩ দিন অবস্থান করবেন। কুড়িগ্রাম মহকুমা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ওয়াপদা (পানি উন্নয়ন বোর্ড) রেষ্ট হাউজে বঙ্গবন্ধু ও তার সফর সঙ্গীদের অবস্থানের আয়োজন করেছেন।

১৯৭০ সালের অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে (তারিখ মনে করা সম্ভব হচ্ছে না) রাতের ট্রেনে বঙ্গবন্ধু ও তার সফর সঙ্গীগণ কুড়িগ্রাম খলিল গঞ্জ রেল ষ্টেশনে নামলেন আমরা ছাত্রলীগ কর্মীগণ শ্লোগানে শ্লোগানে অভিনন্দন জানালাম। অভিনন্দন জানালেন কুড়িগ্রাম মহকুমা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ সর্ব জনাব আহম্মেদ হোসেন (মোক্তার/উকিল) কুড়িগ্রাম মহকুমা আওয়ামীলীগ সভাপতি, জনাব আবুল হোসেন সাধারণ সম্পাদক, আহম্মদ বকশী, মনির হোসেন, সাইফুল আলম দুলাল প্রমুখ গণ। ছাত্রলীগ মহকুমা সভাপতি আমি, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মঞ্জু, রওশনউল বারী, মোবারক হোসেন সাচ্চু, এম এ আওয়াল, জিয়ারত হোসেন খান প্রমুখ গন। বঙ্গবন্ধুর সফর সঙ্গী সর্ব জনাব তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রউফ ১৯৬৮-১৯৬৯ সালের ছাত্রলীগ সভাপতি, বঙ্গবন্ধুর দেহরক্ষী মহিউদ্দিন আহম্মেদ, জালাল উদ্দিন এবং রংপুর আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ সর্ব জনাব এডভোকেট আজিজুর রহমান, সিদ্দিক হোসেন প্ৰমূখ গণ।

কুড়িগ্রাম ছাত্রলীগ কর্মী বাহিনীদের সিরাজুল ইসলাম টুকু, নুর ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, রুকুনুদৌলা রুকু, শাহ আলম নুরুল ইসলাম, প্রমুখগন সার্বক্ষনিক ভাবে আমাদের সাথে ছায়ার মত থেকেছে। সিরাজুল ইসলাম টুকুর বয়স কম হলেও শারীরিক গঠন ও অদম্য সাহস আমাদের অনুপ্রেরনা দিয়েছে। ছাত্রলীগের এই কর্মী বাহিনীর মধ্যে শাহ আলম ও নুরুল ইসলাম ব্যতিত সকলেই মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজী রেখে জন্ম ভূমি শত্রু মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ করেছেন। রংপুরের কন্ট্রাকটর জনাব লোকমান হোসেন তার সবুজ রং এর উইলিস জীপ বঙ্গবন্ধুর জন্য পাঠিয়েছেন। তখন কুড়িগ্রাম থেকে রংপুর যাতায়াতের জন্য কোন পাকা রাস্তা ছিল না। গরুর গাড়ী চলচলের জন্য আকা বাঁকা র্দূগম রাস্তা ছিল। খলিলগঞ্জ রেল ষ্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু সহ কয়েকজন জীপে এবং আমারা ২টি মটর সাইকেল ও রিক্সায় স্বল্প দুরত্বে অবস্থিত ওয়াপদা ডাকবাংলায় পৌঁছে গেলাম। বঙ্গবন্ধু হাত মুখ ধুইয়ে কাপড় পরিবর্তন করে আওয়ামীলীগ নেতাগণকে নিয়ে কথা বলছিলেন। তার অবয়বে কোন ক্লান্তির রেশ ছিল না। আহমেদ বকশী ও মনির হোসেন চাচা বঙ্গবন্ধুর সফর সঙ্গীদের খাবার দাবার সহ সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নিকট আমাদের চলে যাওয়ার অনুমতি চাইলাম। বঙ্গবন্ধু মনির চাচাকে ডেকে আমাদের খাবার দিতে বললেন।

বঙ্গবন্ধু তিনদিন কুড়িগ্রাম অবস্থান করবেন। প্রথম দিন উলিপুর জন সভায় যোগ দিবেন। উলিপুর, চিলমারী ও রৌমারী, তিন থানার জনসভা উলিপুর। দ্বিতীয় দিন ভূরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরীর জনসভা নাগেশ্বরীতে। তৃতীয় দিন কুড়িগ্রাম ও লাল মনিরহাটের জন সভা কুড়িগ্রামে অনুষ্ঠিত হবে। সময় লালমনির হাট কুড়িগ্রাম মহকুমার একটি থানা ছিল।

পরদিন বঙ্গবন্ধু ও সফরসঙ্গী আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ সহ আমরা সকাল ১১ টায় ট্রেনে উলিপুর রওয়ানা হলাম। ট্রেনের কামরা, ভিতর ও ছাদে মানুষে ভরে গেছে। ট্রেন অতি ধীর গতিতে চলার কারণে দুপুরে উলিপুর ষ্টেশনে ট্রেন থামলো। উলিপুরের আওয়ামীলীগ সভাপতি হাফিজ মিয়া, কানাই বাবু সহ, চিলমারীর সাদাকত হোসেন ছক্কু মিয়া, রৌমারীর নূরুল ইসলাম পাপ্পু মিয়া, ছাত্রলীগ নেতা লিয়াকত, মুকুট, গবাপান্ডে, আবু প্রমূখ আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, কর্মীবৃন্দ ও অসংখ্য সাধারণ মানুষ ।

রংপুর থেকে জনাব লোকমান হোসেন কন্ট্রাকটর প্রেরিত জীপে বঙ্গবন্ধু, তোফায়েল ভাই, রউফ ভাই, উলিপুর আওয়ামীলীগ সভাপতি হাফিজ মিয়া ডাকবাংলো রওয়ানা হলেন। আমরা সকলে হেটে ডাকবাংলায় গেলাম। বঙ্গবন্ধু যোহরের নামাজ আদায় করছিলেন।

উলিপুর হাইস্কুল মাঠে বিকাল সাড়ে তিনটায় জনসভায় সভা পরিচালনা করলেন কুড়িগ্রাম মহকুমা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল। বঙ্গবন্ধুকে দেখা ও ভাষন শোনার জন্য বিশাল মাঠ ছেড়ে আশে পাশের রাস্তা বাড়ী ঘরের আঙ্গিনায় মানুষে মানুষে লোকারন্য ।

জীপে সড়ক পথে উলিপুর থেকে ফিরে বঙ্গবন্ধু ওয়াপদা রেষ্ট হাউজে কুড়িগ্রাম, রংপুর উলিপুর, চিলমারী ও রৌমারী আওয়ামীলীগ নেতৃ বৃন্দগণের সাথে বৈঠকে বসেছেন। আমরা অপেক্ষা করছিলাম। পরদিন নাগেশ্বরী বঙ্গন্ধুর জনসভা। রাত সাড়ে দশটায় মঞ্জু, রওশন সহ বঙ্গবন্ধুর কক্ষে গেলাম। তোফায়েল ভাইকে বললাম বঙ্গবন্ধু সাথে কথা বলবো। বঙ্গবন্ধু হেসে বললেন আয় আমার কাছে আয়। আমি বললাম, নাগেশ্বরী সভা শেষে আপনাকে ভূরুঙ্গামারী যেতে হবে, নাগেশ্বরী থেকে ভূরুঙ্গামারীর দূরত্ব মাত্র ১৪ মাইল পাকা রাস্তা। ভূরুঙ্গামারীর জনগণ আপনাকে দেখতে চায়। বঙ্গবন্ধু বললেন তোর বাড়ী কি ভূরুঙ্গামারী ? আমি বললাম আমার বাড়ী ভূরুঙ্গামারী। বঙ্গবন্ধু হাসতে হাসতে বললেন যা আমি যাব, আমার গাড়ীর চাকা যতদূর ঘুরবে আমিও ততদুর যাব। মনির চাচা কাছেই ছিলেন আমাদেরকে খেতে দিতে বললেন।

আমরা সেখান থেকে বের হয়ে তখনকার নতুন ডাকঘর, অফিসার ক্লাবের পাশে। এখানে এসে হাতে ঘুরানো টেলিফোন থেকে ভূরুঙ্গামারী ডাকঘরে ফোন করলাম। ভূরুঙ্গামারী থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি নবাব চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক জনাব ফজলার রহমান, জব্বার ভাই প্রমুখ নেতৃবৃন্দ আমার এই সংবাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। নাগেশ্বরী সভা শেষে বঙ্গবন্ধু ভূরুঙ্গামারীতে অনির্ধারিত সভায় আসবেন খবরটি জানালাম।

পরদিন নাগেশ্বরী সভায় যাওয়ার জন্য ধরলা নদীর ঘাট পাড়ে রওশন ও মঞ্জু মন্ডল সহ আমরা উপস্থিত হলাম। বঙ্গবন্ধুর বহনকারী জীপ নদীর অপর পাড়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মাড় অর্থাৎ ২টি বড় নৌকা একসাথে বাঁধা এবং উপর বাঁশের তৈরি মোটা চাটাই। ইহার উপর গরুর গাড়ী, মালামাল, জীপ, ছোট গাড়ী পারাপর হয়ে থাকে। ধুধু বালুর চরে গরুর গাড়ী যাওয়ার রাস্তায় পাশ্ববর্তী সাধারন মানুষ স্বতঃস্ফুর্ত এই রাস্তায় ছন কাঁশ বিছিয়ে দিয়েছে যাতে বালুর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর জীপ আটকে না যায়। ছাত্রলীগের কর্মীগণ যারযার মত নাগেশ্বরী রওয়ানা হয়ে গেছে। রওশন একটি মটর সাইকেলের ব্যবস্থা করছে। এই মটর সাইকেলে মঞ্জু মন্ডল সহ আমরা তিন জন। মহকুমা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ সহ বঙ্গবন্ধু ঘাট পাড়ে পৌঁছে গেলেন। বঙ্গবন্ধু জীপ থেকে নেমে আসলেন, শুধু জীপটি ড্রাইভার অতি সাবধানে ঐ মাড় নৌকায় উঠালেন। বঙ্গবন্ধু সহ সকলেই এই মাড়েই উঠলেন। বসার কোন ব্যবস্থা নেই। নৌকার মাঝি বঙ্গবন্ধুর বসার জন্য একটি কাঠের চেয়ার রেখেছে। তাইতো বঙ্গবন্ধু কুলি মজুর সকল বাঙ্গালীর প্রাণের নেতা। ঐ সময় নৌকা চালানোর জন্য কোন মেশিনের প্রচলন ছিল না। লম্বা বাঁশ/লগি, বৈঠা, রশি টেনে এরুপ নৌকা চালানো হতো। সামনে ধুধু বালু চর। বঙ্গবন্ধু পূর্ব দক্ষিন মূখ সামনের দিকে তাকিয়ে উদাস হয়ে হাতের পাইপ টানছিলেন। আমরা কয়েকজন কথা বলছিলাম বঙ্গবন্ধু আমাদের দিকে তাকালেন। মঞ্জু বলল এই চরের মধ্য দিয়ে নদী পারাপাড় আমাদের যাতায়াত খুবই কষ্ট। এই নির্বাচনে নৌকা পাশ হলে ধরলা নদীর উপর আপনি ব্রীজ তৈরি করে দিবেন। এ সময় আমরা একসাথে সমর্থন করলাম। বঙ্গবন্ধু কিছু বললেন না। গভীর চিন্তা করছিলেন। নাগেশ্বরীতে নাগেশ্বরী থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি ডাঃ ওয়াসেক আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আব্দুর রহমান, মোজাহার চৌধুরী, সৈয়দ বেপারী, প্রমুখগণ শুভেচ্ছা জানালেন এবং নেতৃবৃন্দ ও সফর সঙ্গীসহ বঙ্গবন্ধুকে বিশাল মাঠের পাশে নাগেশ্বরী ডাক বাংলায় নেয়া হলো। বিশাল মাঠ মানুষে মানুষে ইতিমধ্যেই পূর্ণ হয়ে গেছে। নাগেশ্বরী উপজেলা শহরের সর্বত্রই শুধু মানুষের মিছিল।

বিকাল তিনটায় আগত নেতৃবৃন্দ সহ বঙ্গন্ধু সভামঞ্চে আরোহন করলেন। আমিনুল ইসলাম মঞ্জুমন্ডল সভা পরিচালনা করছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রায় ত্রিশ মিনিট উদাত্ত কণ্ঠে ভাষন দিলেন। ভাষনের মধ্যভাগে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বললেন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে অবশ্যই ধরলা নদীর উপর ব্রীজ তৈরি করা হবে। বিশাল এই জন সভায় সমবেত জনতা প্রায় দশ মিনিট যাবৎ করতালির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানালেন।

নাগেশ্বরীর সভা শেষে বিকাল সাড়ে চারটায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমরা ভূরুঙ্গামারী রওয়ানা হলাম। অতি অল্প সময়ের কারনে ভূরুঙ্গামারীতে সভা মঞ্চ তৈরি করা সম্ভব হয় নাই।

বিকাল পাঁচটায় আমরা ভূরুঙ্গামারী হাইস্কুল মাঠে সরাসরি পৌঁছে গেলাম। জয়মনির হাটের পর থেকে ভূরুঙ্গামারী হাইস্কুল মুখী মানুষের ঢল। এই থানা শহরের প্রতিটি স্থানে মানুষের ঢল নেমেছে। হাইস্কুল মাঠের উত্তর পাশে স্কুলের বারান্দার সাথে দক্ষিনে বেঞ্চ এর উপর ত্রিপল বিছায়ে মঞ্চ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সহ সফর সঙ্গীগন ও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ এই মঞ্চে উঠে দাঁড়ালেন।

ভূরুঙ্গামারী থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি সর্ব জনাব নবাব চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ফজলার রহমান, আব্দুল জব্বার, পশির আহমেদ, ভূরুঙ্গামারী হাইস্কুলের সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক আব্দুল হক বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানালেন এবং থানা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ ফুলের মালা অর্পণ করলেন। বিশাল মাঠ মানুষে পরিপূর্ণ, মানুষ পাশের গাছে উঠে বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখার জন্য ব্যস্ত। বঙ্গবন্ধু সমবেত বিশাল জনতার উদ্দেশ্যে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামীলীগকে জয় যুক্ত, ধরলা সেতু দেয়া সহ ১৫ মিনিটের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করলেন। স্কুলের বারান্দায় আব্দুল হক প্রধান শিক্ষক সাহেব কাঁসার একটি বড় থালায় কিছু সবরি কলা, দুই প্যাকেট
গ্লুকোজ বিস্কুট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু একটি কলা নিয়ে খেতে খেতে হক সাহেবের সাথে কিছু কথা বললেন। এই স্বল্প পরিসরে অল্প সময় বিস্তারিত লেখা সম্ভব হলো না।

সন্ধ্যার পর স্কুল মাঠ থেকে আমরা কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। ভূরুঙ্গামারী থেকে পাটেশ্বরী পর্যন্ত আসতে আমাদের তিন ঘন্টা সময় লেগে গেল। প্রায় এই ৩০ কিলোমিটার পথ কিছু দূর পর পর অসংখ্য মানুষের জটলা ও গগন বিদারী শ্লোগান।

পাটেশ্বরী থেকে কুড়িগ্রাম যাতায়াতের সড়কটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে ছিল না। স্বাধীনতার পর ৭৪ সালে সড়কটি তৈরি করা হয়েছে। ঐ সময় পাটেশ্বরীর পূর্ব পাশ দিয়ে ঘুরে কাঁচা রাস্তায় অধিকাংশ চরের বুকের উপর দিয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ধুলায় ধূসর চেহারায় ঘাট পাড়ি দিয়ে কুড়িগ্রাম শহরে আসতে হতো।

বঙ্গবন্ধুর গাড়ী সামনে, আমরা পিছনে। জোৎস্না রাতে আলোয় চারিদিক মোহিত, স্নিগ্ধ আলোয় ধুধু বালুচর মোহনীয় রূপ ধারন করেছে। ঘাট পাড় পৌঁছার একটু আগেই জীপ গাড়ী থেমে গেল। গাড়ী আর চলে না। দেখা গেল গাড়ীতে তেল শেষ হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর সাথে গাড়ী থেকে সবাই নেমে আসলেন। রওশন তেল আনতে পাটেশ্বরী যাওয়ার জন্য মটর সাইকেল ঘুরালো। পিছনে টুকুর মত দেখলাম। বঙ্গবন্ধু নৌকায় উঠে দাঁড়ালেন, সাথে সাথে আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দগণ ও আমরা নৌকায় উঠে গেলাম। জোস্নার আলো আর নদীর ছোট ছোট ঢেউ চিক চিক করছিল, এক মুগ্ধকর অনুভুতি। যেন বালু চর জোৎস্না আলোর ছটা আর ধরলা নদীর মোহনীয় রূপ বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। নদী পাড়ে নৌকা ভিড়লো। বঙ্গবন্ধু নৌকা থেকে নেমে হাটতে শুরু করলেন এবং আমাকে ও মঞ্জুকে হাত দিয়ে ডেকে বললেন এদিকে আয়। বঙ্গবন্ধুর কাছে যেতেই ডান হাত আমার ঘাড়ে ও বাম হাত মঞ্জুর ঘাড়ে রেখে হাটতে শুরু করলেন। বালুর ভিতর জুতা সহ পা দেবে পিছিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু পা থেকে সেন্ডেল খুলে বললেন খালি পায়ে হাটবো। কালো চামড়ার সেন্ডেল আমার হাতে উঠায়ে নিলাম, তিনি একটু দাঁড়িয়ে তার হাতের পাইপে মেচের কাঠি দিয়ে আগুন ধরালেন। আমাদের দুইজনকে নানা রূপ প্রশ্ন করছিলেন আর আমরা উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে আমরা একটি অনুরোধ জানানোর সাথে আমাদের দুইজনের ঘাড় থেকে তাঁর হাত নামিয়ে নিয়ে বললেন না, হবে না।

চর পেরিয়ে শহরের উপকন্ঠে পৌছে গেছি। রওশন তেল নিয়ে এসেছে এবং গাড়ী আমাদের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও নেতৃবৃন্দ গাড়ীতে উঠে ওয়াপদা রেষ্ট হাউজের দিকে রওনা দিলেন। আমরা মটর সাইকেলে পিছনে পিছনে রাত সাড়ে বারোটায় রেষ্ট হাউজে পৌছলাম। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ রেষ্ট হাউজে বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলবেন। আমরা ফিরে চললাম। বঙ্গবন্ধু তোফায়েল ভাইকে ডেকে বললেন অনেক রাত হয়েছে ওদেরকে খেয়ে যেতে বল। পর দিন বিকাল তিনটায় কুড়িগ্রাম বিশাল মাঠে (বর্তমান ষ্টেডিয়াম) জনসভা শুরু হবে। তখন ষ্টেডিয়াম ছিলনা চতুদিকে খোলা বড় মাঠ। মাঠের দক্ষিন শেষ প্রান্তের মধ্যভাগে বড় সভা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম মহকুমা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক জনাব আবুল হোসেন একজন সজ্জন ব্যক্তি। তিনি লালমনির হাট থেকে তার ছোট ৫০ সিসি হুন্ডা সবুজ রং এর মটর সাইকেল চালিয়ে কুড়িগ্রাম যাতায়াত করেন। সভা মঞ্চের নিচে রাখা মটর সাইলেটি ছাত্রলীগ কর্মীরা লুকিয়ে রাখে এবং একশত টাকার বিনিময়ে উহা ফেরত দেয়া হয়।

বিকাল ৩ টায় জনসভা আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল পরিচালনা এবং সভার সভাপতি থাকবেন পদাধিকার বলে মহকুমা আওয়ামীলীগের সভাপতি জনাব আহমেদ হোসেন (মোক্তার/উকিল)। দুপুর বারোটার আগেই মানুষ জন সভায় আসা শুরু করেছে। দুপুর দুইটার পূর্বেই তোফায়েল ভাই, রউফ ভাই এবং আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ সভামঞ্চে চলে এসেছেন। রওশন, টুকু, শাহআলম সহ ছাত্রলীগ কর্মীগণ সভাস্থলে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছে।

আমরা কয়েকজন ওয়াপদা রেষ্ট হাউজে পৌঁছলাম। বঙ্গবন্ধু ও রংপুর থেকে আগত নেতৃবৃন্দ জীপে আরোহন করলেন। দুপুরের মধ্যে কুড়িগ্রাম শহর, সভাস্থল লোকারন্যে পরিনত হয়েছে। দল বেঁধে মানুষ সভাস্থলে ছুটে চলেছে। জীপের সামনে ড্রাইভারের বাম পাশের আসনে বঙ্গবন্ধু বসেছেন। ওয়াপদা রেষ্ট হাউজ থেকে বের হয়ে গাড়ী ধীর গতিতে চলছে। ছাত্রলীগ কর্মী ও কলেজ, হাইস্কুলের ছাত্ররা স্লোগান দিচ্ছে বঙ্গবন্ধু তুমি এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সাথে, ৬ দফা ১১ দফা মানতে হবে মানতে হবে, ভাই বোনদের বলে যাই নৌকা মার্কায় ভোট চাই, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা ইত্যাদি। সামনে আসনে উঠার পাদানিতে দাঁড়িয়ে জীপের হুডের রড ধরে আমি স্লোগান দিচ্ছি। গাড়ী ধীর গতিতে বের হয়ে ডান দিকে সোজা ঘোষ পাড়া বর্তমান শহীদ মিনার দিকে যাচ্ছি। কুড়িগ্রামের প্রতিটি রাস্তায় মানুষের ঢল। বামে কবরস্থান রেখে ডান দিকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কলেজ রোডে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু আঙ্গুল দিয়ে আমার পেটে খোঁচা দিয়ে বললেন, বল জয় বাংলা। আমরা জয় বাংলা জয় বাংলা শ্লোগান দিতে থাকলাম। মানুষের ভীড় ঢেলে মাঠের দক্ষিন প্রান্তে মঞ্চের পিছনে এসে গাড়ী দাঁড়ালো। মহকুমা আওয়ামীলীগ সভাপতি/সাধারন নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানিয়ে ফুলের মালা পরানো হলো। লক্ষ মানুষের গগন বিদারী স্লোগানে সিক্ত হলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু পৌছানোর পূর্বেই তোফায়েল ভাই, রউফ ভাই ও নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা শেষ করেছেন। বঙ্গবন্ধু প্রায় ৩০ মিনিট ভাষন দিলেন স্বৈরাচারী পাকিস্থানীরা কিভাবে বাঙ্গালীকে শোষন নিষ্পেশন করছে, বাঙ্গালী জাতির মুক্তির জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাইলেন। ধরলা নদীর উপর ব্রীজ দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিলেন। লক্ষ মানুষ স্লোগান আর হর্ষধ্বনিতে সমগ্র কুড়িগ্রাম শহর মূখরিত। বহু প্রতিক্ষিত ভাষন শেষে সভার সমাপ্তি ঘোষনা করা হলো। বিশাল জনতা মাঠ ছেড়ে যাচ্ছিল না, মনে হচ্ছিল মানুষ বঙ্গবন্ধুর কাছে আরও কিছু শুনতে চায়।

বঙ্গবন্ধু সহ নেতৃবৃন্দ বিশাল জনতার ভীড় ঠেলে ওয়াপদা রেষ্ট হাউজে ফিরে আসলেন। পর দিন গাইবান্ধায় বঙ্গবন্ধুর নির্ধারিত জনসভা। এখানে চা নাস্তা শেষে রাতেই সফর সঙ্গী ও নেতৃবৃন্দ সহ বঙ্গবন্ধুর সাথে আমরা খলিল গঞ্জ রেল ষ্টেশনে আসলাম। পূর্ব থেকেই ট্রেনের ১ম শ্রেণীতে সিটের ব্যবস্থা করা ছিল। বঙ্গবন্ধু ও সফর সঙ্গীগণ এখান থেকে কাউনিয়া রেল ষ্টেশনে ও সেখান থেকে দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী ঢাকা মেইল যোগে রাতেই গাইবান্ধা যাবেন। আমরা বঙ্গবন্ধু ও সফর সঙ্গীগণকে শুভেচ্ছা ও বিদায় জানিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে আসলাম।

জাতির পিতা মহান নেতা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কুড়িগ্রাম দ্বিতীয় সফর।

১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক দিন পূর্বে তারিখ মনে নেই। আমি এ সময় কুড়িগ্রাম ছিলাম। বঙ্গবন্ধু কুড়িগ্রাম সফর ও জনসভায় ভাষন দিবেন। স্থান কুড়িগ্রাম কলেজ মাঠ (বর্তমানে সরকারী কলেজ)। কুড়িগ্রাম মহকুমার সকল থানা সর্বত্র সাজ সাজ রব জাতির জনক মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুড়িগ্রাম সফর করবেন। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান বন্ধু তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া আমাদের বিজয় অর্জনের সাথে সাথে তিন চাকার বড় বারোটি হেলিকপ্টার রাশিয়ান পাইলট ও যাবতীয় খরচাদি বহন সহ বাংলাদেশের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

কলেজ মাঠের উত্তর পাশে অর্থাৎ কলেজে প্রবেশ পথের একটু দুরে ঐ সময়ের একমাত্র কলেজ ভবনকে পিছনে রেখে জনসভা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। কলেজ মাঠের পূর্ব পাশে হেলিকপ্টার অবতরনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে নেমে বঙ্গবন্ধু সরাসরি সভা মঞ্চে আসবেন এবং ভাষন দিয়ে হেলিকপ্টারেই তিনি ফিরে যাবেন। সমগ্র কুড়িগ্রাম শহর আশে পাশের সকল এলাকায় মানুষে মানুষে থৈ থৈ। বিশাল সংখ্যক লক্ষ মানুষের সমাগম ইতিপূর্বে আর কখনও দেখা যায় নাই। সভাস্থল, শহরের সকল রাস্তা, অলিগলি তিল ধরনের ঠাঁই নেই। দুপুর দুইটা দক্ষিন পূর্ব কোন থেকে হেলিকপ্টার দেখা গেল। শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে শুধুমাত্র পুলিশ সদস্য ও ছাত্রলীগের স্বেচ্ছাসেবকগণ। হেলিকপ্টার অবতরনের কিছু দূরে মহকুমা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ জনাব আহমেদ হোসেন (মোক্তার/উকিল) সভাপতি, জনাব আবুল হোসেন সাধারন সম্পাদক এম সি এ সহ কুড়িগ্রামের এমসিএ (গবসনবৎ ড়ভ পড়হংঃরঃঁঃরড়হধষ ধংংবসনষু) সর্ব জনাব শামছুল হক চৌধুরী, মজাহার হোসেন চৌধুরী, সাদাকাত হোসেন, নূরুল ইসলাম পাপ্পু, আব্দুল হাকিম প্রমুখগণ। থানা সমূহের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক, আওয়ামীলীগ নেতা মনির হোসেন, অজয় বাবু, রওশন উলবারী, মোকাররব হোসেন সাচ্চু, আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল, সিরাজুল ইসলাম টুকু, পৌর সভার চেয়ারম্যান সৈয়দ মনসুর আলী টুংকু এবং আমি ।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহম্মেদ, দেহরক্ষী জনাব মহিউদ্দিন সহ আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধু সভা মঞ্চে উঠলেন। প্রায় বিশ মিনিট দিক নির্দেশনা ভাষন দিলেন। তোফায়েল ভাই বঙ্গবন্ধুর কানে কানে কিছু বলার সাথে সাথে তিনি অস্থির হয়ে বললেন আমার বন্ধু পাবনার আওয়ামীলীগ নেতা বগা মিয়া জীপ দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরন করেছেন। আমি এখন পাবনা যাব বলে সবার কাছে বিদায় নিয়ে হেলিকপ্টারে চলে গেলেন।

জাতির পিতা মহান নেতা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কুড়িগ্রাম তৃতীয় সফর।

১৯৭৪ সালে কুড়িগ্রাম, গাইবান্দা, নিলফামারী তথা উত্তরাঞ্চলে প্রলয়ঙ্কারী বন্যা শুরু হয়। রাস্তা, কাঁচা বাড়ী ঘর, ধান, পাট, শষ্য সমূহের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। মানুষের দূর্দশার অবস্থা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। চিলমারী, রৌমারী, ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক লংগর খানা খোলা হয়েছে। খাদ্য অভাব প্রকট আকার ধারন করেছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সাধারন মানুষের শোচনীয় অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য ইতিপূর্বে বর্ণিত হেলিকপ্টারে আগষ্ট ৭৪ এর শেষের দিকে দূর্গত এলাকা দেখতে আসেন। তিনি হেলিকপ্টারেই দূর্গত এলাকা সমূহ স্বচক্ষে দেখেন। কোন স্থানে অবতরন বা বক্তৃতা করেন নাই। তিনি দূর্গত এলাকা সমূহে হেলিকপ্টারে কয়েকবার নিচু স্থান দিয়ে ঘুরে দেখে ফিরে গেলেন।

মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ পরিবারের সদস্যদের নর কীট পিশাস কর্তৃক কলঙ্কময় হত্যা কান্ড ঘটানোর পূর্ব পর্যন্ত তাঁর স্মৃতির ভান্ডার ও সান্নিধ্য ভুলবার নয়, কখনও ভুলা যায় না ।

তারিখ : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২

———————- ০ ———————-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন