লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন ১শত ১২টি ডকুমেন্ট হস্তান্তর করা হয়েছে। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)র সদস্য অধ্যাপক হামিদুল হকের পিতা মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আবুল হোসেন-এঁর কাছে এসব ডকুমেন্ট সংরক্ষিত ছিল।
মঙ্গলবার (২১ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র কাছে এসব ডকুমেন্ট হস্তান্তর করা হয়।
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সুত্র জানায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র হাতে মহান মুক্তিযুদ্ধের ১শত ১২টি ডকুমেন্ট তুলে দেওয়া হয়েছে।
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)র সদস্য অধ্যাপক মোঃ হামিদুল হক-এঁর মাতা হাসনা বানু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র হাতে এগুলো তুলে দেন।
এ সময় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)র সদস্য অধ্যাপক মোঃ হামিদুল হক, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মোঃ জাকেরুল আবেদীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)র সদস্য অধ্যাপক মোঃ হামিদুল হক তাঁর রচিত ‘বৈভবে একাত্তর’ গ্রন্থ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
প্রসঙ্গত, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আবুল হোসেন লালমনিরহাট জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি তৎকালীন রংপুর-১৪ ও লালমনিরহাট-৩ আসনের সাংসদ ছিলেন। আবুুল হোসেন ৪ এপ্রিল ১৯৩৫ সালে লালমনিরহাটের নামাটারি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কছিম উদ্দিন এবং মাতা মোছাঃ আছমা খাতুন। ১৯৫৩ সালে তিনি লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (মডেল হাই স্কুল) থেকে প্রবেশিকা, জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং লালমনিরহাট কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। আবুল হোসেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। লালমনিরহাট জেলার ভৌগোলিক সীমানা থেকে সংগঠকের মহান দায়িত্ব পালন করেছিলেন- লালমনিরহাট থানার আবুল হোসেন। ১৫ই মার্চ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে আবুল হোসেনকে আহবায়ক করে গড়ে তোলা হয় সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের লালমনিরহাট থানা শাখা। প্রথম অবস্থায় এ পরিষদের অন্যান্য সদস্যগণ ছিলেন কমরেড চিত্তরঞ্জন দেব, আবদুল কুদ্দুছ, কমরেড শামসুল হক, কাজী মোসলেম উদ্দিন, ছাত্রনেতা মোঃ শহীদুল্লাহ প্রমূখ। স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের কন্ট্রোলরুম স্থাপিত হয় শহরের গোশালা রোড সংলগ্ন বর্তমান পাটোয়ারী ভবনে। কেন্দ্রীয় পরিষদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য তৎকালীন এম.পি.এ আবুল হোসেনের ব্যবহৃত টেলিফোন সেটটি (নং-১০) এখানে স্থানান্তরিত হয়। ২৩শে মার্চ প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে বিকেল ৩ টায় খোর্দ্দসাপটানার তৎকালীন জিন্নাহ মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশাল এ জনসভায় বক্তব্য রাখেন তৎকালীন এম.পি.এ আবুল হোসেন, কমরেড চিত্তরঞ্জন দেব, আবদুল কুদ্দুছ প্রমূখ। এ জনসভায় সর্বসম্মতিক্রমে জিন্নাহ মাঠের নাম পরিবর্তন করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাঠ নামকরণ করা হয়।
দেশ স্বাধীনের পর তিনি ১৯৭৩ সালে রংপুর-১৪ আসনের সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর, ১৯৮৬ সালে তিনি লালমনিরহাট-৩ আসনের সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তিনি লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং পর পর তিনবার চেম্বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি দু’বার এফবিসিসিআই এর পরিচালনা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সর্বোচ্চ পদ ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন।
আবুল হোসেন ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।