এ কে এম হাসানুজ্জামান – এশিয়ান বাংলানিউজ
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে নরুন্নবী নামের এক প্রধান শিক্ষককে তুলে নিয়ে পেটানোর ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শনিবার বিকেলে ভুক্তভোগি ওই শিক্ষক বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনসহ দু’জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২জনকে আসামী করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রধান শিক্ষককে পেটানোর ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বইছে সমালোচনার ঝড়।
আসামীরা হলেন, উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের পাখিউড়া গ্রামের আজমত আলীর ছেলে রোকনুজ্জামান রোকন। তিনি সদ্য ঘোষিত আংশিক কমিটির রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। এছাড়াও এ মামলায় একই ইউনিয়নের ফুলকারচর গ্রামের মৃত আকায়েত উল্লাহ’র ছেলে আসাদুল ইসলামকে (৪৭) আসামী করা হয়েছে। অন্যদিকে নির্যাতনের শিকার নরুন্নবী উপজেলার ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি চরশৌলমারী ইউনিয়নের চরশৌলমারী গ্রামের মোংলা মিয়ার ছেলে।
জানা গেছে, ঘটনার দিন (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে শিক্ষা অফিসে যান ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরুন্নবী ও তাঁর বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আব্দুর রশিদ। কাজ শেষে শিক্ষা অফিস থেকে নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা চত্বর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা রোকনুজ্জামান রোকন ও তাঁর লোকজন ওই প্রধান শিক্ষককে তুলে নিয়ে যান। প্রথমে তাঁকে উপজেলা চত্বরের পাশেই পলি পরিবহণের বাস কাউন্টারে নিয়ে আটকে রাখা হয় এবং প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে মোটরসাইকেলে ওই প্রধান শিক্ষককে নিয়ে যাওয়া হয় রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রার বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে। সেখানে ঘটনা খুলে বলতে থাকেন ভুক্তভোগি ওই প্রধান শিক্ষক নরুন্নবী। এসময় আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে ওই প্রধান শিক্ষকের গালে এলোপাথারী চড়থাপ্পর ও কিল ঘুষি মারতে থাকেন। তা দেখে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে ধাক্কা দিয়ে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন। পরে আহত ওই প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ওইদিন রাতেই ভুক্তভোগি ওই শিক্ষক বাদি হয়ে আওয়ামীলীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনসহ দু’জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ওই প্রধান শিক্ষককে মারপিটের সিসিটিভির একটি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে শিক্ষক সমাজের ক্ষোভসহ গোটা উপজেলায় সমালোচনার ঝড় বইছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২মিনিট ৩২সেকেন্ডের ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৯ জানুয়ারি দুপুর ১টা ৫৩ মিনিট। রৌমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রৌমারী সিজি জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রার অফিস কক্ষে বসে কাজ করছেন। পাশে বসে আছেন ফুলকারচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরুন্নবী ও আওয়ামীলীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনসহ কয়েকজন ব্যক্তি। ঠিক ১টা ৫৫ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে ওই আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে ওই প্রধান শিক্ষকের সামনে গিয়ে দাড়ান। ১টা ৫৫মিনিট ৪৯ সেকেন্ড থেকে ১টা ৫৫মিনিট ৫৬ সেকেন্ড পর্যন্ত ওই প্রধান শিক্ষককে এলোপাথারী চড়থাপ্পর মারতে দেখা যায়। এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রা চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে ধাক্কা দিয়ে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দিতে দেখা যায়।
ভুক্তভোগি ওই প্রধান শিক্ষক নরুন্নবী বলেন, আমার উপর অন্যায়ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শুকুর মাহমুদ বলেন, বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনের কাজে শিক্ষা অফিসে গিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষ নরুন্নবী। তাঁকে অন্যায়ভাবে তুলে নিয়ে মারপিট করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
রৌমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনের বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয় না।
রৌমারী থানার ওসি রুপ কুমার সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় রোকনুজ্জামান রোকনসহ দু’জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২জনের নামে একটি মামলা হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।