তৈয়বুর রহমান, কুড়িগ্রাম ঃ

উলিপুরে পালের ঘাট এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের কঠোর অবস্থানে বালু উত্তোলন কারী সিন্ডিকেট বাহিনী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) উলিপুর কাজী মাহমুদুর রহমান পালের ঘাট এলাকা পরিদর্শন কালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োজিত প্রকৃত ঠিকাদার সাজু মিয়ার কাছে অঙ্গীকারনামা নিয়ে জব্দকৃত অবৈধভাবে উত্তোলিত প্রায় ৫ লাখ সিএফটি বালু জিও টেক্সটাইল ব্যাগে ভর্তি করে নদীতে নিক্ষেপের সিদ্ধান্ত দিলে বালু সিন্ডিকেট বাহিনী মারমুখী হয়ে ওঠে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে ওইদিন মঙ্গলবার রাত সারে ১০ টার দিকে বালু সিন্ডিকেট বাহিনীর হোতা মইনুল (বিদেশি)এর নেতৃত্বে কতিপয় ব্যাক্তি কাশারিয়ার ঘাট এলাকায় স্থানীয় ইদ্রিস আলীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় সিন্ডিকেট বাহিনীর প্রধান মইনুল তাকে গলা ধাক্কাতে ধাক্কাতে মইনুলের বাড়ির দিকে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তখন ইদ্রিসের আত্মচিৎকারে তার স্ত্রী ও সন্তানরা বাড়ি থেকে এগিয়ে এলে বালু সিন্ডিকেট এর প্রধান মইনুলসহ তার সহযোগী নওশাদ,জমসেদ,আনোয়ারুল,মজনু,গিয়াস উদ্দিন, জলিল তাদের সকলে মিলে তাদের কিল ঘুষি ও ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে। পরবর্তীতে খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ও থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে আক্রমণকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এদিকে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা যে কোন মুহূর্তে সাক্ষী ইদ্রিস আলীর বাড়িঘর ভাঙচুরসহ তাকে প্রাণে মেরে ফেলতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এ ঘটনায় বর্তমানে ওই এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অবৈধ বালু বিক্রির বিষয়টি ইদ্রিস আলী প্রকাশ্যে সহকারী কমিশনার (ভূমি) উলিপুর এর সামনে সাক্ষ্য দেয়ায় বিক্ষুব্ধ বালু ব্যবসায়ীরা এ ঘটনা ঘটায় বলে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছে।
উল্লেখ্য, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের পালের ঘাট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের চলমান নদী শাসনের কাজকে ঢাল হিসাবে ব্যাবহার করে স্থানীয় মইনুল (বিদেশি) এর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে আধা হীনভাবে বালুর ব্যবসা চালাচ্ছিল। ব্রম্মপুত্রে জেগে ওঠা ভূমির মালিকগণ অবৈধ বালু উত্তোলনে তাদের জমির ক্ষতি হচ্ছে মর্মে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করলে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) উলিপুর কাজী মাহমুদুর রহমান গত ১২ অক্টোবর ঘটনা স্থল পালের ঘাটে যান এবং বিশাল আকৃতির ৩ টি বালুর স্তুপ দেখতে পান। পরবর্তীতে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ঠিকাদারের লোকজনদের সাথে যোগাযোগ করে বালুর প্রকৃত মালিক খুঁজে না পেয়ে তাৎক্ষণিক এসব বালু জব্দ করে লাল পতাকা উড়িয়ে দেন। জনশ্রুতি পাওয়া গেছে এসব বালু বিদেশি মইনুল অবৈধভাবে উত্তোলন করে বিক্রি করছিল। পরে জব্দ কৃত বালু নিলাম ও সিন্ডিকেট বাহিনীর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার ঘোষণা দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) উলিপুর। এরপর থেকে চলতে থাকে বালু ব্যবসায়ীদের নানা নাটকীয় তৎপরতা। দৌড়ঝাঁপ করতে থাকেন প্রভাবশালী মহলসহ বিভিন্ন দপ্তরে।
এদিকে অবৈধভাবে বালুউত্তোলন কারী সিন্ডিকেট বাহিনীর হোতা মইনুল একটি প্রভাবশালী মহলের ইঙ্গিতে ম্যাজিস্ট্রেট কতৃক জব্দকৃত ওই বালুর স্তুপ থেকে লাল পতাকা উপড়ে ফেলে এসব বালু বস্তায় ভর্তি ও বিভিন্ন ট্রাক যোগে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া শুরু করলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
বিষয়টি স্থানীয় সচেতন মহলে জানাজানি হলে, অনেকেই এ ঘটনাকে প্রশাসনের সাথে সিন্ডিকেট বাহিনীর ধৃষ্টতা পূর্ণ আচরণ বলে মন্তব্য করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *