মোক্তার হোসেন সরকার,ভুরুঙ্গামারী থেকেঃ
সুদীর্ঘ ৬৮ বছর অন্ধকারাচ্ছন্ন বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সাবেক ছিট মহলে শিক্ষার আলোক-শিখা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সাহেবগঞ্জ-সেউতিকুরশা নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একদল উচ্চ শিক্ষিত উৎসাহী নিবেদিত প্রান যুবক-যুবতী। ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের নেতা আনছার আলী এবং পাশের গ্রামের মনছের আলী,নাজমা বেগম ও সুফিয়া বেগম ছিটমহলে একটি নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য ৭৫ শতক জমি দান করেন। গত ২০১৫ সালে সেখানে একটি মনোরম পরিবেশে সাহেবগঞ্জ-সেউতিকুরশা নামে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। ৮ জন মাষ্টারস ও ৪জন গ্রাজুয়েট শিক্ষক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে বিদ্যালয়ের নিয়মিত ১২০ জন শিক্ষার্থীকে দীর্ঘদিন যাবৎ পাঠদান করে আসছে। গত ১গ ই ফেব্রুয়ারী দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক রবীন্দ্র নারায়ণ ভট্টাচার্য এবং উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক সহশিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আবু বক্র সিদ্দিক নিজে সরেজমিনে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে সন্তÍুষ্ট হয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারী বিদ্যালয়ে পাঠদানের অনুমতি প্রদান করেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে অবকাঠামো সমস্যা সহ নানা সমস্যা বিদ্যমান। ৭৫ শতক জমির উপর খেলার মাঠ সহ একটি লম্বা টিনশেড শ্রেণী কক্ষ,অফিস এবং ছাত্রী ও শিক্ষকদের কমন রুমের পরিসর নিতান্ত আটসাটো। এছাড়া আসবাবপত্র এবং শিক্ষা সামগ্রীর প্রচন্ড অভাব রয়েছে।
জমিদাতারা বলেন সুদীর্ঘ ৬৮ বছর যাবৎ তারা মানবেতর জীবনযাপন করেছেন। তাদের সন্তানদের কোন বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে পারেন নাই। বিভিন্ন ঠিকানায় দুয়েকজন কিছু লেখাপড়া শিখলেও তারা কোন দেশে চাকুরী পায়নাই। বর্তমানে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় গত ৩১ জুলাই’১৫ সালে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি চুড়ান্ত হলে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে আমাদের শিক্ষা বঞ্চিত সন্তানদের জন্য একটা বিদ্যালয় স্থাপন করেছি,এর চেয়ে বেশী কিছু করার ক্ষমতা আমাদের নেই।
তাই বিদ্যালয়টির ভবণ নির্মাণ সহ যাবতীয় উন্নয়নের দাবী জানাচ্ছি সরকারের কাছে। ছিটমহল বিনিময় আন্দোলন কমিটির সাবেক উপজেলা সভাপতি তারিফুল ইসলাম তারা বলেন,আন্দোলন করে ছিটমহল বিনিময় বাস্তবায়ন করলেও দারিদ্রতার কারনে ছিটমহলের বিদ্যালয়টির কোন উন্নয়ন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা।
অবসরপ্রাপ্ত সাব-রেজিষ্টার বীরমুক্তিযোদ্ধ আলহাজ আব্দুল গফুর মন্ডল বলেন ছিটমহলে বিদ্যালয় চালু হওয়ায় শিক্ষা বঞ্চিতদের শিক্ষা লাভে সরকারের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করা উচিৎ।
৮ম শ্রেণীর ছাত্র হাসিবুর রহমান এবং সুমি খাতুন বলেন আমাদের ছিটমহলে স্কুল হয়েছে আমরা এখানেই পড়তে পারছি এজন্য দারুন খুশি। স্যারেরা আন্তরিক ভাবে আমাদের শিক্ষা দান করছেন। এলাকাবাসীর সর্বসাধারনের দাবী বিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *