ভুরুঙ্গামারী(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়ন ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম,দুর্ণীতি ,দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও একজনের জমি অন্যের নামে নামখারিজ প্রদানের অভিযোগে প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ভুক্তভোগী জমির মালিকগন।
অভিযোগে জানাগেছে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের কোঠায় চাকুরী নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫/৬ বছর পুর্বে পদোন্নতি নিয়ে নিজ ইউনিয়নে ইউনিয়ন ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঈশ^রবড়ুয়া গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আছর উদ্দিনের পুত্র মোঃ রিয়াজুল ইসলাম ।যোগদানের পর কিছু সংখ্যক দালাল ও আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে ভুমি অফিসে শুরু করেন ব্যাপক অনিয়ম,দুর্নীতি ও একজনের নামজারিকৃত জমি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মনগড়া তদন্ত রিপোর্ট দিয়ে নামখারিজ করাসহ খাজনার দাখিলা কাটতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়।ভুক্তভোগী কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে অফিস থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার মত অসংখ্য ঘটনা ঘটলেও বিগত সরকারের আমলে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করলেও তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নাই। অভিযোগে প্রকাশ সদর ইউনিয়নের আঙ্গারিয়া গ্রামের মৃত তাহের উদ্দিনের পুত্র হায়দার আলীগং এর দেওয়ানের খামার মৌজার এসএ খতিয়ানভুক্ত ১৭৬ এর হোল্ডিং নং ৭৬৮ এ মোট ৪ একর ২১ শতক জমির মধ্যে এসএ দাগ নং ২৪৯ এ ৬১ শতক জমি দেওয়ানেরখামার গ্রামের মৃত সমতুল্লাহ শেখ এর পুত্র আব্বাস আলী ও ইয়াছিন আলী নামখারিজ করে নিলে হায়দার আলীর পিতা তাহের উদ্দিনের বড় ভাই জসিম উদ্দিন ও নাহের আলী নামখারিজ বাতিলের জন্য ভুরুঙ্গামারী রাজস্ব কর্মকর্তা বরাবর একটি বিবিধ কেস দায়ের করে যার নং ২/১৯৮৮।উক্ত বিবিধ কেসের স্মারক নং ৬৬৫ এর প্রেক্ষিতে ১৬ নভেম্বর ১৯৮৮ ইং সালে শুনানী শেষে কুড়িগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব)এর আদেশ ক্রমে আব্বাস আলী ও ইয়াছিন আলী কর্তৃক গোপনে নামখারিজ করে নেয়া জমি পুনরায় ১৭৬ নং খতিয়ানের মুল হোল্ডিং ৭৬৮ এ ভুক্ত করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মোতাবেক উক্ত জমি আবারও ১৭৬ নং খতিয়ানের ৭৬৮ নং হোল্ডিং ভুক্ত হয় এবং ৬১ শতক জমি হাবিবুর রহমানগং এর ওয়ারিশ ও ক্রেতা মোছাঃ ছাবিয়া খাতুনের নামে ৪৭ নং হোল্ডিং এ ৭ শতক এবং ১৮১৭ নং হোল্ডিং এ ৪৬ শতক জমি নামখারিজ করে । অবশিষ্ট ৮ শতক জমি সরকারী পাকা রাস্তায় রয়ে যায়। এদিকে আওয়ামীলীগ সরকারের আমল ২০২০ ইং সালে হাবিুবুর রহমান গং ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়ন ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা(তহশীলদার) মোঃ রিয়াজুল ইসলামের সাথে ঐ দাগের জমি ও তার পাশর্^বতী জমিসহ খাজনা পরিশোধ করতে ও জমির তথ্যের জন্য বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করা সত্বেও তহশীলদার জমির খাজনা না নিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা করে হয়রানী করাসহ তাদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরন করায় নিরুপায় হয়ে গত ১৯/০৬/২০২৩ ইং তারিখে ভুরুঙ্গামারী সহকারী কমিশনার(ভুমি)ভুরুঙ্গামারী বরাবর অনুমোদিত ৫৩৯/৮১-৮২ ইং নামজারী কেস বাতিল করিয়া মুল জোতে হাবিবুর রহমানগং ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে টেলিফোন ভবণের সম্পত্তি হোল্ডিং নং ৭৬৮ এ জমাকরণের আবেদন করে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিবিধ কেস নং ২১/২২-২৩ ইং ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়ন ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা (তহশীলদার) মোঃ রিয়াজুল ইসলামের উপর তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হলে তিনি ভুরুঙ্গামারী সহকারী কমিশনার(ভুমি)এর নির্দেশ মোতাবেক কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় হাবিবুর রহমানগং আবারও উক্ত খতিয়ানের জমির খাজনা প্রদানের জন্য ০৬/০৭/২০২৩ ইং তারিখে সহকারী কমিশনার(ভুমি)ভুরুঙ্গামারী-কুড়িগ্রাম বরাবর আবেদন করে যার ডকেট নং ২৫৯ তারিখ ১০/০৭/২০২৩। এবারেও আবেদনটি কমিশনার(ভুমি)ভুরুঙ্গামারী-অফিস হতে ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়ন ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা(তহশীলদার) মোঃ রিয়াজুল ইসলামের উপর তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হলেও উক্ত ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়ন ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা(তহশীলদার) মোঃ রিয়াজুল ইসলাম আবেদন ২ টি তদন্তপুর্বক প্রতিবেদন ভুরুঙ্গামারী সহকারী কমিশনার(ভুমি বরাবর দাখিল না করেই ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়ন ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা(তহশীলদার) মোঃ রিয়াজুল ইসলাম হাবিবুর রহমানগংয়ের প্রতিপক্ষ আব্বাস আলীর পুত্র এবং উক্ত রিয়াজুল ইসলামের ক্লাস ফ্রেন্ড মোঃ সুজন মিয়া মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উক্ত ২৪৯ নং দাগে কোন জমি না থাকা সত্বেও ইয়াছিন আলীর নামে ৩৯ শতক জমি নামখারিজ করে দেন যার নামখারিজ কেস নং ৫৪৬/২০২১-২০২২ ইং , এ/৩৬৮২,হোল্ডিং ১৮৪৮,দাগ নং ২৪৯ জমির পরিমান-৩০ শতক এবং নামখারিজ কেস নং ৮৯৪/২০২২-২০২৩ ইং,হোল্ডিং নং ১৯৫৬/১,দাগনং ২৪৯,জমি ৯শতক। বিষয়টি হাবিবুর রহমানগং জানার পর ২৪/০৯/২০২৪ ইং তারিখে সহকারী কমিশনার(ভুমি)ভুরুঙ্গামারী-কুড়িগ্রাম বরাবর হাবিবুর রহমান ওয়ারিশ সুত্রে প্রাপ্ত জমির নামজারি বাতিলের আবেদন করলে এবারেও ভুরুঙ্গামারী সহকারী কমিশনার(ভুমি) -অফিস হতে ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়ন ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা(তহশীলদার) মোঃ রিয়াজুল ইসলামের উপর তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দায়িত্ব প্রদান করে। এদিকে প্রতিপক্ষ মোঃ ইয়াছিন আলী পিতা-সমতুল্লাহ ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়ন ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা(তহশীলদার) মোঃ রিয়াজুল ইসলামের নিকটতম আত্মীয় এবং ইয়াছিন আলীর ভাতিজা সুজন মিয়া পিতা-মৃত আব্বাস আলীর বন্ধু হওয়ায় মোটা অংকের টাকা নিয়ে ১৩/০১/২০২৫ ইং তারিখে স্বাক্ষরিত বাদী হায়দার আলী ও বিবাদী ১। ইয়াছিন আলীগং কে ১৬/০১/২০২৫ ইং তারিখে বাদী-বিবাদীগণকে স্বাক্ষী প্রমানাদী ও কাগজপত্রসহ উপস্থিত থাকার নির্দেশ প্রদান করলে হাবিবুর রহমানগং স্বাক্ষী এবং প্রমানাদী কাগজপত্রসহ উপস্থিত হলেও প্রধান বিবাদী ইয়াছিন আলী অনুপস্থিত থাকায় ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়ন ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা(তহশীলদার) মোঃ রিয়াজুল ইসলাম প্রধান বিবাদী ইয়াছিন আলীর পক্ষ নিয়ে পুর্নাঙ্গ তদন্ত না করে উভয় পক্ষকে আগামী ১৮,১৯,২০ জানুয়ারীর মধ্যে অফিসে কাগজপত্র জমাদানের নির্দেশ দিয়ে চলে যান। আরো জানাগেছে ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়ন ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা(তহশীলদার) মোঃ রিয়াজুল ইসলাম সরকারী নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়ন ভুমি অফিসে চাকুরী করার সুবাধে প্রায় সময় সাধারণ জনগণ জমির মালিকদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরণ এমনকি অফিস থেকে জমির মালিককে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটালেও আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে তার দৌরাত্বে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নাই। উক্ত ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়ন ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা(তহশীলদার) মোঃ রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি,অসৌজন্যমুলক আচরণ,একজনের নামের নামখারিজকৃত জমি অন্যের নামে টাকার বিনিময়ে নামখারিজ করে দেয়ায় এলাকায় ভুমি সংক্রান্ত জটিলতাসহ সংঘর্ষের সংখ্যা বাড়ায় ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমানগং গত ১৯ জানুয়ারী ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার,ভুরুঙ্গামারী সহকারী কমিশনার (ভুমি)এবং ২০ জানুয়ারী কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ মাননীয় ভুমি উপদেষ্টা,রংপুর বিভাগীয় কমিনার সহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়ন ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা(তহশীলদার) মোঃ রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ গোপনে ও সরেজমিনে তদন্ত পুর্বক ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ট এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে ভুরুঙ্গামারী সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ তাহমিদুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন তাকে ইতিমধ্যেই অন্যত্র বদলী করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছাঃ নুসরাত সুলতানা জানান,তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।