স্টাফ রিপোর্টারঃ
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে গরুর খামার করে এক মুক্তিযোদ্ধার পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে। খামারের উপার্জন থেকে আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি সন্তানদের শিক্ষিত করে সমাজে আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঐ মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবার। তিনি হলেন উপজেলার দেওয়ানের খামার গ্রামের মৃত জহির উদ্দিন মন্ডলের পুত্র বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ মন্ডল। আব্দুল আজিজ মন্ডল ১৯৫৪ সালের ১ জানুয়ারী জন্মগ্রহন করেন। লেখাপড়া চলাকালীন ১৯৬৬ সালে আনসার বাহিনীতে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীনের পর আবারও তিনি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ভিডিপিতে যোগদান করেন । বর্তমানে তিনি উপজেলা আনসার কোম্পানী কমান্ডার পদে দায়িত্বরত আছেন। তিনি ১৯৮৮ সালে আনসার ও ভিডিপির আত্মকর্মসংস্থানমুল খামারের উপর ৫৬দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র ২৪হাজার টাকায় একটি গাভী কিনে খামারের সুচনা করেন। পরের বছর গাভীর দুধ ও বাছুর বিক্রি করে গাভীর সংখ্যা বৃদ্ধি করেন। ১৯৯০ সালে দেশী জাতের গাভী বিক্রি করে শাহীওয়াল,জার্সি,ফিজিয়ান ও পাকিস্তানের সিন্ধি জাতের গাভী কিনে বানিজ্যিক ভাবে খামার প্রতিষ্ঠা করায় আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ মন্ডলের। বর্তমানে তার খামারে বিভিন্ন জাতের ৩২টি গাভী,৫টি বকনা বাছুর ও ৭ টি দামড়া রয়েছে আর গরু দেখাশোনার জন্য রয়েছে ৩জন রাখাল এবং একজন পশু চিকিৎসক। প্রতিদিন প্রায় ২ মন দুধ ৪হাজার টাকা বিক্রি করে ২ হাজার টাকা বাড়তি আয় হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ জানান,আমি গরুর খামার করে স্বাবলম্বী এবং পরিবারের স্বচ্ছলতা লাভ করেছি। খামারের বাড়তি আয়ের টাকা দিয়ে আমার ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি। এক ছেলে বাংলাদেশ পুলিশের এ,এস,আই এবং আরেক ছেলে কনস্টেবল পদে চাকুরী করছে। আরেক ছেলে বি কম (¯œাতক)পাস করে বাড়িতে রয়েছে। মেয়েদেরকেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে বিয়ে দিয়েছি। তিনি আরও জানান,সরকারী সাহায্য সহযোগীতা ও সুদমুক্ত ঋণ পেলে তিনি গরুর খামারটির সম্প্রসারণ করে এলাকায় বেকারদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টিতে কাজ করে যাবেন। এছাড়া ভূরুঙ্গামারীতে একটি দুধ সংরক্ষণের জন্য চিলিং সেন্টার না থাকায় দুধের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় উপজেলায় খামারীর সংখ্যা বাড়ছে না। উপজেলায় একটি চিলিং সেন্টার স্থাপন করলে খামারীরা দুধের ন্যায্য মূল্য পেলে খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে জানান।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ মন্ডলের গরুর খামারটি উপজেলার একটি মডেল হিসাবে পরিচিতি লাভ করায় এলাকায় অনেকেই তার নিকট থেকে পরামর্শ নিয়ে খামার করছে। আব্দুল আজিজ মন্ডল জানান,দেশের জনসংখ্যার তুলনায় চাকুরীর সুযোগ কম থাকায় শুধু চাকুরীর আশায় বসে থাকার চেয়ে আত্মকর্মসংস্থান মুলক প্রশিক্ষণ নিয়ে খামার সহ বিভিন্ন বৃত্তিমুলক কাজ শুরু করলে দেশে বেকারত্ব হ্রাস পাবে এবং দেশের মানুষের মাথা পিছু আয় বাড়বে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ এটিএম হাবিবুর রহমান জানান, উপজেলার দেওয়ানের খামার গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ মন্ডলের গরুর খামারটি একটি মডেল খামার হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে এরকম গরুর খামার হলে এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন