ভূরুঙ্গামারী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধিঃ
.ভূরুঙ্গামারীর জয়মনিরহাটে শহীদ বুদ্ধিজীবি অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহাব তালুকদারের ৪৮তম মৃত্যু দিবস পালিত হয়েছে। মৃত্যু দিবসে শহীদের সমাধি ভারতের মাটি থেকে বাংলাদেশের মাটিতে সমাহিত করার দাবী করেছে এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
জানাগেছে শহীদ বুদ্ধিজীবি অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহাব তালুকদার ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়ে ৬নং সেক্টর কমান্ডার এম,কে বাশারের অধিনে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বামনহাট যুব শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ৭ আগষ্ট এই দিনে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত বগনী নদীর উপর অবস্থিত রেল ব্রীজে অবস্থানরত একদল মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অবস্থান করার সময় পাক বাহিনী কর্তৃক ব্রাশ ফায়ারে প্রথমে আহত হলে বেয়নট চার্জে শহীদ হন। পরে তাকে ভারতের কালমাটি মসজিদ চত্বরে সমাহিত করা হয়। ছামান আলী তালুকদারের পুত্র শহীদ আব্দুল ওয়াহাব তালুকদার ১৯৪৩ সালের ৩রা জানুয়ারী অবিভক্ত ভারতের পশ্চিম বঙ্গের অন্তর্গত
কুচবিহার জেলার কালমাটি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার জয়মনিরহাট ইউনিয়নের শিংঝাড় গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি ৬ নং সেক্টরের অধিন প্রশিক্ষণ গ্রহন শেষে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। ১৯৭১ সালের ১ লা মে থেকে শহীদ হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত তিনি ৬ নং সেক্টরের অধিনে বামনহাট যুব শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যুবকদের মহান মুক্তিযুদ্ধে উৎসাহিত ও সংগঠিত করেন। সেই সঙ্গে যুবক ও অন্যান্যদের যুব শিবিরে ভর্তি শেষে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রেরণ করেন।যুব শিবিরে নবীন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ,খাবার,বাসস্থান সহ বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠক হিসাবে কাজ করেন। তিনি বর্তমান কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে অধ্যাপনা করতেন। তিনি শহীদ হওয়ার সময় মা,স্ত্রী,তিন পুত্র সন্তান,ভাইবোন সহ অনেক আত্মীয় স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে যান। তিনি মুক্তবুদ্ধি ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী এবং ক্রীড়ামোদীও ছিলেন।
দিনটি পারিবারিকভাবে পালনের পাশাপাশি কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজ এবং শহীদ ওয়াহাব কিন্টার গার্ডেন স্কুলে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার কর্মসূচী গ্রহন করেছে।
উল্লেখ্য শহীদ বুদ্ধিজীবি অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহাব তালুকদারের সমাধিটি ভারত বাংলাদেশের সীমান্তে কালমাটি গ্রামে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এই শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে গত তত্বাবধায়ক ও বর্তমান সরকারের সময় শহীদের সমাধিটি বাংলাদেশ স্থানান্তরের জন্য আবেদন করলেও তা কার্যকর হয়নি।বর্তমানে শহীদের সমাধিটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবি এই মহান ব্যক্তির সমাধিটি ভারতের মাটি থেকে বাংলাদেশর মাটিতে পুনঃ সমাহিত করার জন্য এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সহ পরিবারের সদস্যরা বর্তমান সরকারের নিকট জোরদাবী জানান। ভূরুঙ্গামারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আলমীর মন্ডল বলেন শহীদ আব্দুল ওয়াহাব ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় লাভের এক আলোর দিশারী। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সারা বাংলাদেশের মধ্যে সর্ব প্রথম ১৪ নভেম্বর ভূরুঙ্গামারী থানা হানাদার মুক্ত হয়। যতদিন বাঙ্গালী জাতি থাকবে ততদিন শহীদ আব্দুল ওয়াহাব তালুকদারকে কেউ ভুলবে না।