নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
বাংলা কার্তিক মাস কুড়িগ্রাম অঞ্চলে মঁঙ্গার মাস হিসেবে পরিচিত। এ মাসে এ অঞ্চলের মানুষের হাতে কাজ থাকে না। মাঠে সবুজ ধান গাছে কেবল শীশ বের হয়েছে মাত্র। সারা বছরের দিনগুলো খেয়ে দেয়ে কোনমতে পার করলেও কৃষি প্রধান এ অঞ্চলে এই মাসটি পার করা বড়ই কঠিন। দিনমুজুর থেকে সাধারণ গৃহস্থ সবার ঘরেই টান পড়ে এসময়। তাই এই সময়টা বলা হয় কাতি মাসের মঙ্গার সময়। এসময় কুড়িগ্রামের কয়েকটি নদী প্রবাহিত উপজেলা নাগেশ্বরীতে দেখা দেয় খাদ্য সংকট।
অভাবে পড়ে অধিকাংশ গ্রামীন জনপদ। তবে এবার মঁঙ্গার এ সময়টা হাসি ফুটিয়েছে আগাম জাতের হাইব্রিড আমন ধান। আগাম এ আমন ধান চাষ করেছেন উপজেলার অনেক কৃষক। ইতিমধ্যে কাটা-মাড়াই সম্পন্ন করেছেন অনেকে। এ ধান ঘরে উঠায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন কৃষক। হাসি ফুটেছে তাদের মুখে। উপজেলার কেদার ইউনিয়নের বাহের কেদার গ্রামের কৃষক আকবর আলী জানান, এবার তিনি এক বিঘা জমিতে আগাম হাইব্রিড জাতের আমন ধান চাষ করেছিলেন। কার্তিক মাসের শুরুতে তিনি ধান কর্তণ করেছেন।
মাড়াই শেষে ২২মণ ধান তিনি ঘরে তুলেছেন। তার এ ধান মঙ্গা দূর করেছে। সাথে ভালো দামে ধান ও খর বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। একই ইউনিয়নের গোলের হাট গ্রামের কৃষক ছাইদুল ইসলাম জানান, পৌনে দুই বিঘা জমিতে আগাম আমন চাষ করেছেন তিনি। বিঘা প্রতি ২০মণ ধান ঘরে তুলেছেন তিনি। তিনি আরো জানান, পাট কেটে আষাঢ় মাষের শেষের দিকে এ ধান চাষ করেন তিনি। এখন এ ধান কাটা মাড়াই শেষ করেছেন তিনি। এসময়ের মঙ্গা দূর হয়েছে এধানে। অপর দিকে চরা দামে খর বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন তিনি।
তিনি আরো জানান, এ ধান চাষে বিঘা প্রতি চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। বৃষ্টি থাকায় সেচ দিতে হয়নি তার। তবে ইদুরের যন্ত্রণা রয়েছে এ ধান চাষে। ইদুর দমন নিশ্চিত হলে আর কোন সমস্যা নেই এ ধান চাষে। এ ধান চাষে মঙ্গা দূরিকরণের পাশাপাশি লাভবান হবেন কৃষক এমন ধারণা তার।
নাগেশ্বরী উপজেলা কৃষি অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এবার উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের হাইব্রিড ধান চাষ হয়েছে ৪হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিআর-৭১, বিআর-৭৫ এবং বিআর ৮৭। এছাড়া উফশী জাতে ধান চাষ হয়েছে উল্লেখযোগ্য জমিতে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন জানান, আগাম জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান ইতিমধ্যে কাটা-মাড়াই শেষের দিকে। এই ধান চাষে অভাব তাড়ানোর পাশাপাশি লাভ পেয়ে থাকেন কৃষক। এছাড়া ধান কাটার পর ওই জমিতে স্বল্প মেয়াদী ফসল যেমন সরিষা চাষ করতে পারেন কৃষক। পরবর্তিতে ইরি আবাদ করতে পারেন। এদিক দিয়ে তিনটি ফসল ঘরে তুলতে পরেন কৃষক।