– নুরে আলম মুকতা

প্রিয় বন্ধু ,
আসসালামু আলাইকুম ।
আমাদের বয়সী যারা অথবা দু’চার বছরের আগে বা পেছনে আছেন তারা জানেন আমাদের বাংলা ভাষায় বেশ কিছু স্থান জুড়ে ইউরোপ মহাদেশের একটি বিশেষ ভাবধারা এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশের অনুবাদ ছিল। এখন ক্রমান্বয়ে ভু রাজনৈতিক কারণে তা অদৃশ্য প্রায়। কিন্তু আমি দ্ব্যার্থ কন্ঠে বলতে পারি এ অনুবাদ গুলো অনেক উঁচু মানের ছিল।

একটি রুচি বা দৃষ্টিভঙ্গী তৈরি করার জন্য যথেষ্ট ছিল ঐ সাহিত্য কর্মগুলো । এতে আমাদের বিশেষ লাভ হয়েছে যে , আমরা আন্তর্জাতিক মানসিকতা অর্জন করেছিলাম বা তার কাছাকাছি যাবার চেষ্টা করেছিলাম। এর পাশাপাশি দেশের আর বিদেশের সাহিত্য সংস্কৃতি আর মুল্যবোধের জায়গাগুলোর সাথে আমরা পরিচিত হতে পেরেছিলাম। আর এখন ত একদম মুঠোর মধ্যে সবকিছু। কিন্তু সমস্যা হল সাহিত্যের সাথে এমন কিছু বিষয় নেট বা অন্য কোন মাধ্যমে আছে যার প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হতে বাধ্য । তখন মানবিকতা, সাহিত্য সংস্কৃতি গৌণ হয়ে যাচ্ছে ।

যে জন্য কথাগুলো বলার মতো ধৃষ্টতা দেখালাম তা হল, তখন আমরা অরিজিনাল বেশ কিছু ক্লাসিকের কাছাকাছি গিয়েছিলাম বলে আমরা জোর গলায় বলতে পারি ঐ বইগুলো পড়ে আমাদের জীবনের সিদ্ধি লাভ হয় নি ।

তাহলে আসলে কী পেয়েছিলাম ?

দর্শন , মোটিভেশনাল , ব্যবস্থাপনা, সামাজিক বিজ্ঞান, রা্ষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি বা জীবনের সাথে যুক্ত এরকম বই যেগুলো কোন প্রখ্যাত লেখকের সেগুলো আমাদের আকৃষ্ট করে বেশি । আমরা ত আসলে উপকার খুঁজব বা ধরুন নিজেকে জাহির করার জন্য হলেও পড়ব ।

কিন্তু না !
লাভ নেই ।

প্রিয় বন্ধু দয়া করে ভুল বুঝবেন না , ক্ষমা করবেন । আমি পড়তে নিরুৎসাহিত করছি না ।

অনেক কষ্ট দিলাম । চলুন আসল আলোচনায় যাই ,

একজন সুন্দরী স্ত্রী তার প্রেমিক স্বামীর সামনে বসে আছেন –

স্বামীটি একটি জরুরী কাজে যাবেন বলে সময়ের আগে আগে সামান্য আহার সারছেন ।

স্ত্রীঃ তরকারিতে লবন কি ঠিক আছে ?

স্বামীঃ ঠিকই ত আছে !

স্ত্রীঃ ঠিক থাকার কথা না,

স্বামীঃ সমস্যা কি, বেশি হয় নি ত ।

তারপর দু’জনেই হাসে।

এ হাসিটির কী রকম সংজ্ঞা দেয়া যায় প্রিয় বন্ধু আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম ।

প্রকৃত ঘটনা হল ঐ দিন মহিলা তার জন্য নির্ধারিত ছুটে যাওয়া রোজা করছিল।

স্বামিটি স্ত্রী কে বলেছিল,

আমি ত তোমার ওপর সোয়ামী গিরি ফলানোর চেষ্টা করিনি কোনদিন। আসলে আমি দুর্বল মনে হয় । উল্লেখ্য স্বামিটি দুর্ধর্ষ সৌখিন ফুটবল খেলোয়াড়ও ছিলেন ।

তারপর স্বামী স্ত্রীকে বলল,

তুমি আমাকে ক্ষমা করে আমার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ কোরো প্লিজ এ মর্মে যে,
আমি তোমার ওপর কোনরূপ বল প্রয়োগ করি নি এবং আমার পরম অভিভাবক আল্লাহ যে শক্তিশালী করে আমাকে সৃষ্টি করেছেন তার সামান্যও তোমার ওপর প্রয়োগ করে আহত বা আঘাত করিনি। অনেক ক্ষোভ বা রাগ সংবরণ করেছি ।

মনে রেখ ,

অল্প কদিন পরেই শক্তিমত্তার বিচার নিয়ে আল্লাহর সম্মুখীন হতে হবে আমাদের ।

স্ত্রী টি ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলল ।

শুরুতে যে বয়ানটি করেছিলাম ওখানে আবার ফিরতে হল।
আমাদের অভিভাবক হিসাবে প্রথমেই আল্লাহ কে মেনে সমস্ত কাজ সম্পাদন করতে হবে এবং এটি হল ঈমানদারির ভিত্তি ,,

” লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ

আলাহ এক অদ্বিতীয় এবং মুহাম্মাদ সাঃ
আলাহর প্রেরিত রাসুল ”

মহাগ্রন্থ আলকুরআনে যা কিছু নির্দেশিত তা মানতে হবে । কোন বিতর্ক চলবে না এবং মেনে চলতে হবে কুরআনের প্রচারক মুহাম্মদ সাঃ যা যা করার আদেশ দান করেছেন ।

আমাদের এ জীবন ব্যাবস্থা থেকে ভয়ে পালিয়ে যাবার কোন কারণ নেই । কারণ এটি সুন্দর ও সহজ-সরল জীবন ব্যাবস্থা ।

আমাদের যতগুলো বদ আচরণ আছে তারমধ্যে রাগ বা ক্ষোভ সবচেয়ে ভয়ানক । এ একটি বিষয় যদি আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে আমাদের জীবন গুলো চমৎকার হয়ে যাবে। সমাজ হয়ে উঠবে দারুণ বসবাস যোগ্য ।

এবার চলুন মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ কি বলছেন ,

আউজুবিল্লাহি মিনাস শায়তানির রাজিম
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম

ওয়াদ্দা কাসীরুম মিন আহলিল কিতাবে লাউ ইয়ারুদ্দু নাকুম মিম বাআদি ঈমানিকুম কুফ্ফারান ; হাসাদাম মিন ইনদি আনফুসিহিম মিম বাআদি মা তা বাইয়্যানা লাহুমুল হাক্কু ফাআফু ওয়াসফাহু হাত্তা ইয়াতি আল্লাহু বি আমরিহি ইন্নাল্লাহা আলা কুল্লি সাইয়্যিন কাদীর

১০৯. কিতাবীদের অনেকেই চায়, যদি তারা তোমাদেরকে তোমাদের ঈমান আনার পর কাফেররূপে ফিরিয়ে নিতে পারত! সত্য স্পষ্ট হওয়ার পরও তাদের নিজেদের পক্ষ থেকে বিদ্বেষবশতঃ (তারা এটা করে থাকে)। অতএব, তোমরা ক্ষমা কর এবং উপেক্ষা কর যতক্ষণ না আল্লাহ তার কোন নির্দেশ দেন– নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান

সুরা বাকারা, আয়াতঃ ১০৯

৩৬. ফামা উতীতুম মীন সাইয়্যিন ফামাতাউল হায়াতাত দুনিয়া, ওমা ইনদাল্লাহে খাইরুঁউ ওয়া আবকা লিল্লাজিনা আ মানু ওয়া আলা রাব্বিহিম ইয়াতাওয়াক্কালুন

অতএব, তোমাদেরকে যা দেয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগ মাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী তাদের জন্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করে

৩৭.ওয়াল্লাজিনা ইয়াজ তানিবুনা কাবা ইরাল ইসমে ওয়াল ফাওয়া হিশা ওয়া ইযা মা গাদিবুহুম ইয়াগফিরুন

যারা বড় গুনাহ ও অশ্লীল কার্য থেকে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধাম্বিত হয়েও ক্ষমা করে,

সুরা, আশ শুরা, আয়াত ৩৬-৩৭

রহমান ও রহিম আল্লাহর অভিভাবকত্ব মেনে স্বল্প পরিসরে অনেকগুলোর মধ্যে এ দুটি মাত্র উল্লেখ করতে পারলাম ,

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর একটি মাত্র হাদিস বলে আজ শেষ করব প্রিয় বন্ধু ,

একবার এক ব্যক্তি নবীজী সাঃ কে অনুরোধ করে বললেন, প্রিয় নবীয়ে করিম সাঃ আপনি আমাকে কিছু অসিয়ত করুন ,

রাসুল হযরত মুহাম্মদ সাঃ স্মিত হেসে বললেন ,

” তুমি রাগ করোনা ”

ঐ ব্যক্তি বার বার অনুরোধ করার পরও নবীজী সাঃ একই উত্তর দিলেন

(বুখারী – খন্ড ০৮, অধ্যায়- ৭৩, হাদীস নম্বর- ১৩৭)

আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, রাগ বা ক্ষোভ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় । স্ট্রোকের সম্ভাবনা ত্বরান্বিত করে, আয়ু কমায়, বিষন্নতা বাড়ায় ইত্যাদি ।

তবে চলুন , মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমরা সুস্থ থাকার জন্য ভয়ানকতার ব্যবস্থাপনা এখনই শুরু করি ।

আল্লাহ আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন এবং সারাবিশ্বের সকল মানুষের মুক্তির সনদ মহা গ্রন্থ আলকুরআন বুঝার শক্তি প্রদান করুন ,

আমীন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন