ইশরাত জাহান চৌধুরী, মৌলভীবাজার ঃ রাজনগরে গ্রামপুলিশ পুত্রের অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন লাগানো এবং ওই বিদ্যুৎ লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ফয়েজ মিয়া ওরফে ফজলু মিয়া (৬৯) নিহত হবার প্রমান পেয়েছে মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ফয়েজ মিয়া ওরফে ফজলু মিয়ার বিধাব স্ত্রী ফয়জুন বেগমের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির এজিএম ও ইঞ্জিনিয়ারসহ ৪ সদস্যের একটি তদন্ত দল গত ১৭ আগষ্ট বৃহষ্পতিবার দুপুরে সরেজমিন হাটিকরাইয়া গ্রামের ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তঞ্জব মিয়া, আব্দুর রূপ, দুলাল মিয়া, মইনুদ্দিন মিয়া, আলতা মিয়া, আনজব মিয়া, জয়নাল মিয়া প্রমুখ স্থানীয় লোকজনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। গ্রামপুলিশ নাজির মিয়ার পুত্র সুহেল মিয়া কর্তৃক তাদের বাড়ীসংলগ্ন বৈদ্যুতিক খুটি থেকে দলদলা ছড়ার অপরপাড়ে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার সত্যতা পেয়ে তাদের বসতগৃহের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কলাগাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখেন। পরে ৪ সদস্যের ওই তদন্ত দলটি রাজনগর থানায় গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। তবে, এ ব্যাপারে তারা পরবর্তী কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা জানা যায়নি।
উল্লেখ্য- মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার হাটিকরাইয়া গ্রামে গ্রামপুলিশ পুত্র সুহেল মিয়ার নেয়া অবৈধ বিদ্যুৎ লাইনে গত ৩১ জুলাই সোমবার ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত: ছৈদ উল্লাহর পুত্র ফয়েজ মিয়া ওরফে ফজলু মিয়া ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এসময় পাশের বাড়ীর হারুন মিয়ার ৮/৯ বছর বয়সী ছেলের শোর চিৎকার শুনে আব্দুর রুপ, দুলাল মিয়া, মতিন মিয়া ও গ্রামপুলিশ নাজির মিয়া ঘটনাস্থলে এসে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফয়েজ মিয়ার লাশ উদ্ধার করে বাড়ীতে নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আছকির মিয়াসহ এলাকার লোকজন ফয়েজ মিয়ার বাড়ীতে ছুটে আসেন। ওয়ার্ড মেম্বার আছকির মিয়া ঘটনাস্থল থেকেই কামারচাক ইউপি চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিমকে জানালে, তিনি রাজনগর থানাকে খবর দেন। এর প্রেক্ষিতে রাজনগর থানার এসআই উত্তম কুমার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ফয়েজ মিয়ার বাড়ীতে গিয়ে উপস্থিত লোকজনের সামনে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে লাশ উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। পরদিন ১ আগষ্ট মঙ্গলবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। নিহতের ডান কনুই এর উপর থেকে ডানহাতের তালু পর্যন্ত বিদ্যুৎস্পৃষ্টের জখম ছিল- যা স্থানীয় আলতা মিয়া উপস্থিত পুলিশসহ সবাইকে দেখান। এ ব্যাপারে নিহতের স্ত্রী ফয়জুন বেগমকে বাদী করে রাজনগর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করানো হয়েছে। অথচ, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাজিব হোসেন বলেন, অসাবধানতা বশত: বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার মৃত্যু হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্টে কোন জখমের দাগ নেই। স্থানীয় লোকজন সূত্রে প্রকাশ- গ্রামপুলিশ নাজির মিয়ার পুত্র সুহেল মিয়া এলাকার কৃষকদের হালের ট্রাক্টর পাহাড়া দেয়ার প্রয়োজনে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানোর জন্য অবৈধভাবে পল্লীবিদ্যুতের ড্রপলাইনে সরাসরি তারের সংযোগ লাগিয়ে ওই স্থান দিয়ে (ফয়েজ মিয়া বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হবার ঘটনাস্থল) বিদ্যুৎলাইন দলদলা ছড়া অতিক্রম করিয়ে অপর পাড়ে স্থাপন করেছিল- যার উচ্চতা ছিল পানি থেকে আনুমানিক ২/৩ হাত এবং তা সহজ দৃশ্যমান ছিলনা। ফয়েজ মিয়া নিহত হবার খবর জানতে পেরে সুহেল মিয়া ওই অবৈধ বিদ্যুৎলাইন সরিয়ে নিয়ে বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যায়। ওয়ার্ড মেম্বার আছকির মিয়া বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন সামাজিকভাবে আপোষ-মিমাংসার উদ্দোগ নিয়েছেন বলে জনালেও অদ্যাবধি তা হয়নি। অথচ, পলাতক সুহেল মিয়া গত ২/৩ দিন যাবৎ ওয়ার্ড মেম্বার আছকির মিয়ার ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরাফেরা করছে। সর্বশেষ- এ সংবাদ পরিবেশন পর্যন্ত ওয়ার্ড মেম্বার আছকির মিয়ার নেতৃত্বে ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যামামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন