ইশরাত জাহান চৌধুরী, মৌলভীবাজার ঃ
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মোকামবাজারস্থ মুনিয়া নদীতে ছোয়াবালী মসজিদের নামে মার্কেট নির্মান বন্ধ করা হয়েছে। এজন্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এ প্রতিনিধির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশসহ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন জনস্বার্থে প্রতিবাদী স্থানীয় লোকজন।
সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন, অভিযোগপত্রসহ অন্যান্য কাগজাদ পর্যবেক্ষণ ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে- বিগত ২০০২ সালে রাজনগর উপজেলার ১নং ফতেপুর ইউনিয়নস্থিত মোকামবাজার ঘেষে বহমান মুনিয়া নদীর উত্তরপাড়ে মোকামবাজার-ছোয়াবালী রাস্তা ঘেষে মুনিয়া নদীতে ছোয়াবালী জামে মসজিদ কমিটির লোকজন মসজিদের নামে মাঝারী আকারের একটি পাকা মার্কেট নির্মান শুরু করেন। ওইসময় স্থানীয় গবিন্দপুর গ্রামের মৃত: মকরম উল্লাহর পুত্র রেজান মিয়া জনস্বার্থে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করলে, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক লিখিতভাবে পুলিশ সুপারকে বিষয়টি সরেজমিন তদন্তক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের অনুরোধ করেন। কিন্তু, পুলিশ সুপার বিষয়টি সরেজমিন তদন্তক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ না করায় রেজান মিয়া পুণরায় লিখিত আবেদন করলে জেলা প্রশাসক বিষয়টি সরেজমিন তদন্তক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য রাজনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্মানকাজ বন্ধ করাসহ ৭ দিনের মধ্যে উক্ত পাকা মার্কেট অপসারণ করে পৃথক পৃথকভাবে লিখিত আকারে অবহিত করার জন্য ছোয়াবালী গ্রামের মো: তজমুল আলী, আং কাহির খান, মো: তৈছব আলী, মো: সাজিদ আলী, আরজ আলী, গবিন্দপুর গ্রামের আং খালিক, বেড়কুড়ি গ্রামের ছয়ফুল মিয়া ও মোকামবাজারের আবুল কালামকে লিখিতভাবে নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে নির্মানকাজ বন্ধ করলেও, আংশিক নির্মিত পাকা মার্কেট অপসারণ না করে এবং পৃথক পৃথকভাবে লিখিত আকারে অবহিত না করে মিথ্যা তথ্যাদি উল্লেখে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর সীমানা নির্ধারণের একটি আবেদন করা হয়।
এর দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর সম্প্রতি আং কাহির খান, উস্তার খান, তৈছব খান, নজরুল, শাহজাহান ও মকদ্দছ টেইলার (লন্ডনী) উক্ত ছোয়াবালী মসজিদের নামে ইতিপূর্বেকার অসম্পূর্ণ মার্কেটের নির্মানকাজ সম্পন্ন করার উদ্দোগ নেন। স্থানীয় লোকজনের আপত্তি সত্তেও তারা ঘটনাস্থলের ১টি আকাশী, ১টি ছাতনী ও ১টি বটগাছ কেটে ফেলে মার্কেট নির্মান শুরু করলে, মোকামবাজারের ব্যবসায়ী জহুর মিয়া জনস্বার্থে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাদেরকে মসজিদের নামে মার্কেটের নির্মানকাজ বন্ধে বাধ্য করেন। আং কাহির খান ও তার সহযোগী লোকজন মার্কেটের স্থানটিকে মসজিদের নিজস্ব ভূমি দাবী করে জানান- মার্কেটের ভূমি নিয়ে আদালতে মামলা হলে আমাদের পক্ষে রায় হয়েছে। কাজেই এটা মসজিদের ভূমি এবং আমরা মসজিদের ভূমিতেই মার্কেট নির্মান করছি। নদী কিভাবে মসজিদের ভূমি হলো- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভূমি ভেঙ্গে নদীতে মিশে গিয়ে স্থানটিকে নদী হিসাবেই দেখা যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে স্থানটি মসজিদেরই ভূমি। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, যেখানে মসজিদের নামে মার্কেট নির্মানের চেষ্টা করা হচ্ছে, সেই স্থানটি মুনিয়া নদী। এটা ‘নদীরকম সরকারী ভূমি’। মসজিদের ভূমি ও মুনিয়া নদীর মৌজা, জেএল নম্বর, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর ও মালিকানা সম্পূর্ণ আলাদা। মসজিদের ভূমির অবস্থান ‘বেড়কুড়ি’ মৌজায় এবং মুনিয়া নদীর অবস্থান ‘সাদাপুর’ মৌজায়। ধর্মীয় স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান মসজিদের নাম ভাঙ্গিয়ে তারা সরকারী ভূমি আতœসাতের অপচেষ্টায় লিপ্ত। তাদেরকে মার্কেট নির্মানকাজ এখনই বন্ধ করতে বলেছি। নির্দেশ না মানলে আগামীকাল সকালে সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে সরেজমিন ঘটনাস্থলে পাঠাবো। তারপরও মার্কেট নির্মানকাজ বন্ধ না করলে আমি নিজে পুলিশ নিয়ে সরেজমিন গিয়ে তাদেরকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করবো।
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে- উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ মোতাবেক ছোয়াবালী মসজিদের নামে মার্কেট নির্মানকাজ এ সংবাদ পরিবেশন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। জনস্বার্থে প্রতিবাদী লোকজন বলেন, ১৫ বছর পূর্বেও একইভাবে এ নির্মানকাজ বন্ধ করা হয়েছিল। সেসময় স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ না করায় এবার তারা আবারও নির্মানকাজ শুরু করেছিল। আপাতত নির্মানকাজ বন্ধ করলেও, গোপনে রাতের অন্ধকারে অথবা পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে তারা আবারও নির্মানকাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করবে। তাই, তারা স্থায়ীভাবে উচ্ছেদের দাবী জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *