রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি।

“কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদ করে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবীরুল ইসলাম” ঘটণা স্থলে গিয়ে এমনটাই অভিযোগ পাওয়া গেছে ভূক্তভোগি আব্দুল মান্নান নামের একব্যক্তির নিকট থেকে। মান্নান নামের ওই ব্যক্তি জাউনিয়ারচর মিয়াপাড়া নামক স্থানে ৮ শতাংশ জমি ক্রয় করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসতি গড়ে তোলেন দুই বছর আগে। সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই জমিটি খাসজমি দেখিয়ে জোড়পূর্বক মান্নানের পরিবারকে উচ্ছেদ করে তার বাড়ীটি ভেঙ্গে দেন। ঘর ভাঙ্গতে বাঁধা দিলে মান্নানকে জেল-জরিমানার ভয়ও দেখান ওই কর্মকর্তা। এতে চরমভাবে ভেঙ্গে পরেছে পরিবারের সদস্যরা, তাদের কাঁন্নায় ভারী হয়েছে আশ-পাশের পরিবেশ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা নিজে দাড়িয়ে থেকে ঘর গুলো ভেঙ্গে দিচ্ছেন। এতে কারও কোন কথাই কানে তুলছেন না তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি সম্পর্কে নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিককে জানান, “সরকারী খাস জমি উদ্ধার করা আমার দ্বায়িত্ব।”

স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ওই বাড়ী ছাড়া মান্নানের আর কোন জমি-জমা নেই। তারা আরও জানান, “এখন মান্নানের যাওয়ার আর কোন জায়গাও থাকলো না। নিষেধ করা সত্বেও কারও কোন কথা শুনছেন না ইউএনও স্যার।”

ভূক্তভোগি আব্দুল মান্নান, তার স্ত্রী কাঁন্নায় ঢলে পড়ছেন বারবার। এ বিষয়ে তারা জানান, “আমি মাইনসের বাড়িত কাম কইরা কষ্টের টেকায় জমি কিন্না নিছি, আমরা খাস জমি জানি না। আমগোরে ঘর ভাঁঙ্গি দিছে। আমাগোরে থাকার জাগা নাই। আমরা জামু কই। ইউএনও সারের পাও ধরছি, হাত ধরছি। কোন কথাই শুনলো না।” মান্নানের ছেলে কাঁন্নায় বিলাপ করে বলছেন, “আমরা তো বাইরের দ্যাশে থিকা ভাইশা আমি নাই। আমরা তো রহিঙ্গা না। আমরা জামু কই। আমগোড়ে দয়া করেন ছার।”

বার্তমান সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ১ম ও ২য় দফায় সরকারী খাস জমিতে ভূমিহীনদের জন্য তৈরি হচ্ছে ৩৭৩টি ঘর। যার মধ্যে ১ম দফার ৩০০টি ঘরের কাজ সম্পন্ন করে হস্তান্তর করা হয়েছে উপকারভোগিদের মাঝে। ৭৩টি ঘরের কাজ চলমান রয়েছে।

নির্বাহী কর্মকর্তা বদরপুর দাখিল (এমপিও ভূক্ত) মাদ্রাসার জমি দখল করে ঘর তৈরি করেছেন। দখল করা স্থানে মাদ্রাসার গাছ জোর করে কেঁটে নেন তিনি। স্থানীয়দের তৎপরতায় তড়িঘরি করে মাদ্রাসা সুপারকে ডেকে গাছগুলো ফেরৎ দেন। এছাড়া বেশ কয়েক জনের বাড়ী ও বাড়ীর ভিটা দখল করে, তিন ফসলী জমি দখল করেও আশ্রয় কেন্দ্র তৈরির অভিযোগ রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। কারও কোন তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছেমত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের অযুহাতে উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন বন্ধ রেখেছেন তিনি। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করে সরকারী অর্থে নিজের পকেট ভর্তি করছেন তিনি। যার ফলে সামান্য ঝড়ের কারণে কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রের ঘর তছনছ হয়েছে গত সপ্তাহে।

এ সম্পর্কে উপজেলা চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো জানান, “আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে আমার সাথে কোন পরামর্শ করেন না তিনি। ভূমিহীনকে উচ্ছেদ করে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করার নিয়ম আমি কোনদিন শুনিনি। এটা কেমন নিয়ম? এটাতো কোনদিন শুনিনি। আমি এর সঠিক তদন্ত চাই। কেন এটা হচ্ছে, মানণীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

বিষটি নিয়ে মোবাইল ফোনে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক রেজাউল করিমকে অবগত করা হলে তিনি সাংবাদিককে জানান, “ইউএনও সাহেব এরকম তো করার কথা না। আমি কথা বলে বিষয়টি দেখছি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *