বিশেষ প্রতিনিধি : চট্রগ্রাম থেকে
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর কয়েক দশক ধরে নিয়মানুগ নির্যাতন চালিয়ে আসছে দেশটি।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি পশ্চিম রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকা পরিদর্শন শেষে শুক্রবার এক বিবৃতিতে সেখানকার পরিস্থিতিকে অত্যন্ত দুর্বিষহ বলে বর্ণনা করেছেন।
মিয়ানমারের সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে এক সংবাদ সম্মেলনে লি বলেন, গত অক্টোবরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে চলমান এ সহিংসতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে।
মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণের জন্য দেশটিতে ১২ দিনের সফর শেষে লি বলেন, দেশটির সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর দমন অভিযানের ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতা অস্বীকার করছে। এর ফলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমারের সেনা অভিযানের কঠোর সমালোচনা করেন। ওই দমন অভিযানের ফলে গত তিন মাসে প্রায় ৬৫,০০০ রোহিঙ্গা মুসলমান প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযান চালানোর সময় মানবাধিকার রক্ষার তোয়াক্কা করেনি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গত অক্টোবরে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি চেকপোস্টে অজ্ঞাত দুস্কৃতকারীদের হামলায় নয় জওয়ান নিহত হওয়ার পর রাখাইন প্রদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী।
তাদের অমানবিক নির্যাতনে বাধ্য হয়ে এসব অসহায় রোহিঙ্গারা সীমান্ত অতিক্রম করে পার্শবর্তী বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শত শত রোহিঙ্গা গণধর্ষণ, ভয়ংকর নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে ওঠে আসছে।
সাম্প্রতিক নির্যাতনে প্রায় ৩০,০০০ রোহিঙ্গা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে এবং উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।
গণধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ তদন্ত করতে বিদেশী সাংবাদিক, স্বাধীন তদন্ত সংস্থা ও মানবাধিকার কর্মীদের এসব অঞ্চলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে দেয়া হচ্ছে না।
কয়েক প্রজন্ম ধরে এসব রোহিঙ্গারা বার্মায় বসবাস করে আসছে। তারপরেও তাদের নাগরিকত্বকে স্বীকার করা হয়নি। তারা বিবাহ, ধর্মপালন, সন্তান জন্মদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারা সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগণ হিসাবে বসবাস করছে।
২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের ঘর-বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয় এবং এরপর থেকে তারা পুলিশ পাহাড়ায় দারিদ্র্যপীড়িত ক্যাম্পে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। সেখানে তারা স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং তাদের আন্দোলনকে প্রচ-ভাবে দমিয়ে রাখা হয়েছে।