সবুজ আহম্মেদ, পীরগঞ্জ ঠাকুরগাও:: আলোকিত মানুষ গড়তে ১১০ বছর ধরে এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে আসছে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। কয়েকজন শিক্ষক আর হাতেগোনা কিছু শিক্ষার্থী নিয়ে ১৯০৭ সালে শুরু হয়েছিল এ বিদ্যালয়ের যাত্রা। বর্তমানে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পত্র পল্লবে বিকশিত হয়ে একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সুনাম ও খ্যতি ছড়িয়ে পরেছে অনেক দূর। চালু হয়েছে প্রভাতি ও দিবা শাখা। এর শিক্ষার্থী সংখ্যা এখন আড়াই হাজারের ওপরে। কর্মরত আছেন ৭০ জনেরও অধিক শিক্ষক-কর্মচারী। বিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রমও চালু রয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, তৎকালীন মালদুয়ার জমিদার টিএন রায় চৌধুরী (টংক নাথ রায় চৌধুরী) পীরগঞ্জে একটি স্কুল করার উদ্যোগ নেয়। ১৯০৭ সালে শহরের প্রাণকেন্দ্রে পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল পাকা সড়ক সংলগ্ন উত্তরে জগথা মৌজায় যাত্রা শুরু করে বিদ্যালয়টি। বাঁশ-কঞ্চি বেড়ার ঘর দিয়ে যাত্রা শুরু করা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দায়িত্ব প্রাপ্তদের নিরলস প্রচেষ্টায় ক্রমেই এগুতে থাকে।
জমিদার টিএন রায় চৌধুরী বিদ্যালয়ে নির্মাণ করে দেন একটি আধাপাকা ভবন। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং স্থানীয়দের সহাযোগীতায় পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়টির অবকাঠামোর উন্নতি সাধিত হয়। শিক্ষার মান ভাল হওয়ায় এর সুনাম ও খ্যতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
চাহিদা অনুযায়ী ২০১৩ সালে এখানে চালু করা হয় প্রভাতি শাখা। বর্তমানে প্রভাতি, দিবা শাখা ও ভোকেশনাল শাখায় ২ হাজার ৬৪৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে। দক্ষ ম্যানেজিং কমিটির দক্ষ পরিচালনায় বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান ক্রমেই বাড়তে থাকে। এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ২০১৫ সালে জিপিএ-৫ পায় ৫২ জন, ২০১৬ সালে ৫৩ জন এবং ২০১৭ সালে ৫৩ জন। জেএসসি পরীক্ষায় ২০১৪ সালে ৯৩ জন এবং ২০১৫ সালে ৭৮ জন জিপিএ-৫ পায়। উভয় পরীক্ষায় পাশের হার প্রায় শত ভাগ। এছাড়াও এসএসসি পরীক্ষায় ২০১৪ সালে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের মেধা তালিকায় ২য় এবং ষষ্ট স্থান অর্জন করে এ বিদ্যালয়ে দু’কৃতি শিক্ষার্থী। এদিকে খেলাধুলা সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতায় জেলায় সব সময়ই ভাল করে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এ বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করা শিক্ষার্থীরা সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিশেষ আবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন এবং হচ্ছেন। তেভাগা আন্দোলনের নেতা হাজী মো. দানেশ এ বিদ্যালয়ে ছাত্র ছিলেন। এখানকার অনেক শিক্ষার্থী ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন। প্রশাসনের উচ্চ পদ অলংকৃত করেছেন এবং করছেন অনেকে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুল হক জানান, বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ সুন্দর রাখতে এবং শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন তারা। এরই মধ্যে বিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মকান্ড সাধিত হয়েছে এবং কিছু চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে এখানে সরকারি ভাবে কোন ভবন নির্মাণ করা হয়নি। তাই বর্তমানে বিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থে প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের একটি ৩ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। হলরুম নির্মাণ করা ও প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে ফ্যান লাগানোসহ শহিদ মিনার যুগোপযোগী করা হয়েছে। দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণ তহবিল রয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবছর ফরম পূরণের সময় দরিদ্র মেধাবীদের সহায়তা করা হয়। গত বছর এসএসসি ফরম পূরণের সময় ৩৬ হাজার টাকা আনুদান দেওয়া হয়েছে।