এস এম আসাদুজ্জামান, ফুলবাড়ী কুড়িগ্রাম ঃ

রাজধানীর বনশ্রীতে গৃহকর্মী লাইলী বেগমকে হত্যার অভিযোগে অধুনালুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়া অধীবাসীরা ফুসে উঠেছে। পেটের দায়ে দাসিয়ার ছড়ার এ গৃহকর্মী লাইলী বেগম কাজ করতে গিয়ে লাশ হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়েছে দাসিয়ার ছড়ার মানুষ। নিহত লাইলী বেগমকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বজনদের দাবী। অবিলম্বে বাড়ীর গৃহকর্তার দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবীতে গতকাল শনিবার কালির হাট বাজারে মানবন্ধন করেছে দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের শতশত নারী পুরুষ ।

নিহতের ভাই আলমগীর হোসেন জানান, অভাব অনটনের কারনে লাইলী বেগমের স্বামী নজরুল ইসলাম অবৈধ ভাবে কাজের সন্ধানে ভারতে যাওয়ার পথে বিএসএফের হাতে আটক হন। সে বর্তমানে ভারতের জেল হাজতে থাকায় দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে বিপাকে পড়েন। গত বছর মৃতের ননদ জাহানারা বেগমের মাধ্যমে ছেলে আতিকুর রহমান (৩) ও মেয়ে মরিয়ম খাতুন(৫)কে নিয়ে গৃহকর্মী হিসাবে কাজের সন্ধানে ঢাকায় যান।
মৃত লাইলী বেগমের মা কান্না জরিত কন্ঠে জানান, কাজের পাওনা টাকা নিয়ে প‌রিবা‌রের সদস্যদের সা‌থে কোরবা‌নি ঈদ করার কথা ছিল তার। তার মৃত্যুর খবর টেলিভিশনের মাধ্যমে শুনার পর পরিবারের সদস্যরা ভেঙ্গে পরেন। সে বনশ্রীর পাশে মেরাদিয়া হিন্দুপাড়া বস্তিতে থাকতেন। সেখান থেকে ঢাকার বনশ্রী জি বকের ৪ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাড়িতে কাজ করত দাসিয়ারছড়া গৃহবধু লাইলী বেগম। পরিবারের অভিযোগ, শ্রমের পাওনা বেতনের টাকা চাওয়ায় তাকে নিযার্তন করে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানান।

এ খবর শুনার পর নিহতের পিতা নজরুল ইসলাম নজু ও প্রতিবেশী গোলজার হোসেন লাশ নেয়ার জন্য ঢাকায় যান। এদিকে গতকাল শনিবার বিকাল ৪টার সময় অবিলম্বে বাড়ীর গৃহকর্তার দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানিয়ে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, দাসিয়ারছড়ার আব্দুল হাকিম, জাকির হোসেন, নুর আলম, নজরুল চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য বকুল আলী, সাবেক ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির দাসিয়ারছড়া ইউনিটের সভাপতি আলতাফ হোসেন, বাংলাদেশ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, ফুলবাড়ী সদর ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ প্রমুখ। বক্তারা লাইলী হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচীর ঘোষনা দেন।

গৃহকর্তা মঈনুদ্দিন জানান ,লাইলী তার বাসায় প্রতিদিন সকালে কাজ করতে আসেন। শুক্রবার সকালে বাসায় কাজ করতে এসেই একটি কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। ডাকাডাকির পর দরজা না খোলায় দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় লাইলীকে।পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানকার কর্ততব্য রত চিকিৎসক তা‌কে মৃত ঘোষণা ক‌রেন। কিন্তু লাইলীকে কুপিয়ে হত্যার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় নিম্ন আয়ের মানুষ ওই দিন বিকালে ওই বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে ঢিল ছুড়তে শুরু করে। তারা বাড়ির ফটক ভাঙার চেষ্টা করে এবং সামনে থাকা একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, গাড়িতে আগুন দেওয়ার খবর পেয়ে তাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু উত্তেজিত জনতা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকেও বাধা দেয়।

পুলিশ ওই বাড়ির সামনে থেকে জনতাকে সরানোর চেষ্টা করলেও বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে। এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ার শেল ছোড়ে।

এদিকে লাইলীর সাথে থাকা স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ ওই বাড়ির মালিক মুন্সী মইন উদ্দিন ও দারোয়ান রহিমকে আটক করেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে খিলগাঁও জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার নাদিয়া জুঁই জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *